সোমবার, ২৫ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ঝোপ বুঝে কথার কোপ

ইকবাল খন্দকার

ঝোপ বুঝে কথার কোপ

আমার এক ছোটভাই বলল, আমি সবসময় শুনে আসছি মানুষের পূর্বপুরুষরা নাকি বানর ছিল। কথাটার ওপর আমার বিশ্বাসও ছিল। কিন্তু আজকাল হঠাৎ করেই বিশ্বাসটা উঠে গেছে। এখন আমি অনেকটাই নিশ্চিত, মানুষের পূর্বপুরুষ বানর ছিল না। ছিল ব্যাঙ। আমি অবাক হয়ে বললাম, তোর এমন মনে হওয়ার কারণ? ছোটভাই বলল, অমুককে দেখি অমুক দল সাপোর্ট করতে। কিন্তু যেই দলটা কয়েক গোল খেয়ে ফেলে, অমনি দল চেঞ্জ। কথা চেঞ্জ। সুর চেঞ্জ তো বটেই। তো এই যে সুুবিধা বুঝে ফাল মারা, ক্যারেক্টারে ব্যাঙের প্রভাব না থাকলে এভাবে ফালাফালি সম্ভব না। ছোটভাইয়ের কথার সত্যতা মিলল ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই। আমি আমার এক প্রতিবেশীর সঙ্গে দেখা করতে গেলাম বিশেষ একটা দরকারে। গিয়ে দেখি তার ঘর চেনার মতো অবস্থায় নেই। কারণ, কদিন আগেও যে দেশের পতাকা দিয়ে সে ঘর সাজিয়েছিল এখন সেই দেশের পতাকার নাম-গন্ধও নেই। বরং আরেক দেশের পতাকা শোভা পাচ্ছে। আমি প্রতিবেশীর দলবদল দেখে বিস্ময় প্রকাশ করতেই সে বলল, দিনবদলের এ যুগে দলবদলের ঘটনা ঘটতেই পারে। পাঠক, পতাকা পাল্টানোর মধ্য দিয়ে কারও কারও দলবদলের প্রমাণ পাওয়া গেলেও অধিকাংশের পল্টিবাজির প্রমাণই কিন্তু মেলে কথাবার্তার মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ তারা এত দ্রুত কথা বদলায় যে, পতাকা বদলের জন্য যে সময়টা লাগে, সেই সময়ের মধ্যেই একাধিক দলের সাপোর্ট করে আবার বদলে ফেলে। এমনই এক ব্যাঙ-মার্কা ব্যক্তিত্ব আমার এক বড় ভাই। প্রতিটি ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই তিনি অক্টোপাস পলের মতো ভবিষ্যদ্বাণী করেন। অমুক দল জিতবেই। কেন জিতবে, কোন কোন দিক দিয়ে দলটা জেতার যোগ্য, সেসবই বর্ণনা করেন অতিপণ্ডিতের মতো। কিন্তু যেই দেখেন পরিস্থিতি পাল্টে যাচ্ছে, তিনিও কথা পাল্টে ফেলেন। তার এ কাণ্ডে বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, এত তাড়াতাড়ি সুর কীভাবে বদলান? বড়ভাই গোঁফের আগা পর্যন্ত হাসি প্রসারিত করে বললেন, যেহেত দ্রুত সুর বদলানোর দক্ষতটা আছে মানে সুরে বৈচিত্র্য আছে, অতএব ভবিষ্যতে আমি ভালো একজন ‘সুরকার’ হতেই পারি, নাকি? আমার এক দুলাভাইয়েরও একই খাসলত। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, এই যে ঝোপ বুঝে কথার কোপ মারেন, এটা কেন? যে কোনো এক কথার ওপর স্থির না থাকলে যে মানুষ বাচাল বলে, এটা বোঝেন? দুলাভাই বললেন, বারবার একই কথা বললে মানুষ বলবে, এই দেখ কথা ‘পুনঃপ্রচার’ করছে। পুনঃপ্রচার জিনিসটা কিন্তু খুব খারাপ। দর্শক শ্রোতা বিরক্ত হয়। আমি এ বিরক্তি থেকে সবাইকে মুক্তি দিতেই সবসময় এককথা না বলে কথায় ভ্যারাইটি রাখার চেষ্টা করি। আমি বললাম, ভদ্রলোকের এককথা। আর যারা এককথার ওপর স্থির থাকে না তারা? দুলাভাই আমার প্রশ্নের উত্তরের ধারেকাছেও না গিয়ে বললেন, ইয়ে না মানে আজ যেন কোন কোন দলের খেলা? উফ, যা গরম পড়েছে! এ গরমের মধ্যে প্লেয়াররা খেলবে কীভাবে! ঘামে মোজা ভিজে যাবে না?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর