সোমবার, ২৩ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা

এ যুগের গুপ্তধন

কোথায় গুপ্তধন আছে, তা আর বলে গেলেন না। তার মানে, ‘কইতাম না, খাইটা খা। জীবন এত সোজা না।’ যাই হোক, ছেলেদের আর পায় কে। তারা গুপ্তধনের খোঁজে পুরো জমি খুঁড়ে একাকার করে ফেলল। (এখন যেভাবে রাস্তা খোঁড়া হয়, অনেকটা সেই স্টাইলে)

তানভীর আহমেদ

এ যুগের গুপ্তধন

ডায়ালগ ও আইডিয়া : তানভীর

কেঁচো খুঁড়তে সাপ বের হয়ে আসার কথা শোনা যায়। সেটা হলে খুবই খারাপ। তবে তারচেয়েও খারাপ, যদি গুপ্তধন খুঁড়তে গিয়ে কেঁচো বেরিয়ে আসে। একটা সময় ছিল মানুষের টাকা-পয়সা, সোনা-রুপা বেশি হয়ে গেলে মাটির নিচে পুঁতে রাখত। কাউকে বলে যেত না, কোথায় লুকিয়ে রাখা হলো। কারণ কী? কারণ একটাই ভবিষ্যৎ সঞ্চয়। বুদ্ধিমান মানুষ ভবিষ্যতের কথা ভাবে। অতীতে অতি বুদ্ধিমানেরাই তাই গুপ্তধন রেখে যেতেন। দিন দিন বুদ্ধিমান কমে যাওয়ায় গুপ্তধন মাটির নিচে রেখে যাওয়ার চর্চা নেই। খুবই হতাশার কথা। হতাশার পাশাপাশি একটাই সুখবর— তা হলো বিশ্বাস। যেমন বিশ্বাস করে এখন অনেকেই ব্যাংকের ভল্টে সোনা রেখে দেন। গুপ্তধন রাখার ঝামেলা যারা পোহাতে চান না তাদের কেউ কেউ সব ধনসম্পদ দান করে দিয়ে যান। এটাও ভালো। আগে গুপ্তধন কোথায় রাখা আছে তা না জানিয়ে মরে যেতেন ‘গুপ্তধন মানব’। এতে করে মানুষের পরিশ্রম বাড়ত। অযথা খোঁড়াখুঁড়ি করে সময় নষ্ট হতো। অনেক কষ্ট হতো মানুষের। এখন মানুষ এত কষ্টের মধ্যে  নেই। অনেক বড় কর্তাব্যক্তি আছেন যারা জনগণের জন্য সারা বছরই খোঁড়াখুঁড়ি চালিয়ে যান। রাস্তাঘাট কেটে একাকার করে ফেলেন। গুপ্তধন থাকলে আপনা আপনি বের হয়ে আসবে আপনাকে অযথা শাবল-কোদাল নিয়ে ঝামেলা পোহাতে হবে না।

গুপ্তধন বিষয়ক একটি ইংরেজি গল্প স্কুলে পড়ানো হয়। এক কৃষকের তিন ছেলে ছিল। ছেলেরা অলস দেখে কৃষক পিতা সামান্য একটু কৌশলী হলেন। তিনি মারা যাওয়ার আগে তিন ছেলেকে ডেকে বলেন, ‘পুত্রধন, তোমরা মনোযোগ দিয়ে শোন। আমাদের ফসলি জমিতে গুপ্তধন পুঁতে রাখা আছে।’  কোথায় গুপ্তধন আছে, তা আর বলে গেলেন না। তার মানে, ‘কইতাম না, খাইটা খা। জীবন এত সোজা না।’ যাই হোক, ছেলেদের আর পায় কে। তারা গুপ্তধনের খোঁজে পুরো জমি খুঁড়ে একাকার করে ফেলল। (এখন যেভাবে রাস্তা খোঁড়া হয়, অনেকটা সেই স্টাইলে)। কিন্তু গুপ্তধন পেল না। পরে তারা ভাবল, খোঁড়াখুঁড়ি যখন করেই ফেলেছি তাহলে জমিতে ফসল বুনে ফেলি। সেই জমিতে ফসল ফলল— মোরাল অব দ্য স্টোরি কী?  খোঁড়াখুঁড়ি যখন করেই ফেলেছেন তখন গাছ লাগিয়ে ফেলুন। এ ছাড়াও অনেকেই অনেক কথা বলবেন জানি। তবে স্কুলে আমার সহপাঠী জনি বলেছিল, গুপ্তধনের লোভ দেখিয়ে ভালোই খাটানো যায়! সে শিক্ষকের কাছে কানমলা খেয়ে বেঁচে গিয়েছিল সেবার। এখন অবশ্য আমাদের বাঁচার উপায় নেই। গুপ্তধনের জন্য রাস্তাঘাট, বাড়ি-ঘর খুঁড়ে ফেলে, রেখে চলে গেলে তো সমস্যা। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, কোনো সমস্যাই সমস্যা নয়। গুপ্তধনের খোঁজ পেতে দুনিয়ার কত মানুষ কত বড় বড় ঝুঁকি নিয়েছে সে খবর রাখলে বিষয়টা বোঝা যায়। ইন্ডিয়ানা জোন্স নামক এক গুপ্তধন শিকারির গল্প জানা যায়। জান বাজি রেখে সে অনেক গুপ্তধনের কাছেও পৌঁছয়। আজব এক পাবলিক। তবে এ নিয়ে আলাদা উচ্ছ্বাস দেখানোর মতো মানুষ দিন দিন কমে যাচ্ছে। আমাদের গ্রামের বাড়িতে কয়েক বছর আগে গুপ্তধনের খোঁজ মিলেছিল। কয়েকটা সোনা-রুপার মুদ্রা মিলেছিল বলে ধারণা। অনুমান করা হয়, বাজারমূল্য কোটি কোটি টাকা। কত কোটি সেই হিসাব করার জন্য ক্যালকুলেটর খোঁজা হচ্ছিল। এরই মাঝে ধুয়ে-মুছে দেখা গেল, এগুলো বছর দশেক আগের কাঁচের কোকের বোতলের মুখ বা ক্যাপ। এ যুগের গুপ্তধন এমনই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর