সোমবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

কান নিয়েছে চিলে ফেসবুকে

ইকবাল খন্দকার

কান নিয়েছে চিলে ফেসবুকে

ডায়ালগ ও আইডিয়া : তানভীর

অনেক বাবাই যেহেতু ফেসবুকের বিষয়টা বোঝে না, ফেসবুকে গুজব কীভাবে ছড়ায় তাও বোঝে না, তাই ফেসবুক গুজবকে এই কিসিমের ‘জব’ বা চাকরি মনে করে খুশি হয়ে যায় এই ভেবে— বাহ, ছেলে তাহলে ভালো একটা জব করছে

আমার এক ছোট ভাই বলল, প্রত্যেকটা জিনিসের নামকরণ করা উচিত সুচিন্তিত উপায়ে। ধুম করে একটা নাম দিয়ে ফেললাম আর সেটা তাৎপর্যপূর্ণ হলো না, এটা একদমই অনুচিত। এই যে মনে করেন ফেসবুকের নামকরণ, এটা কিন্তু মোটেই সঠিক নামকরণ হয়নি। কেন হয়নি? কারণ, আজকাল ফেসবুকে বিস্তর গুজব ছড়াচ্ছে। অনেকেই চিৎকার করছে তাদের কান নাকি নিয়ে গেছে ফেসবুকে। যেহেতু জিনিসটার সঙ্গে আমাদের কান জড়িত তাই আমি মনে করি এর নামকরণ একদম পারফেক্ট হতো, যদি এর নাম ফেসবুক না রেখে ‘ইয়ারবুক’ রাখা হতো। যার তরজমা— ‘কর্ণ পুস্তক’। ঠিক আছে না ভাই? আমি বললাম, ঠিক আছে কি নাই এটা আমাকে জিজ্ঞাসা না করে জুকারবার্গ সাহেবকে জিজ্ঞাসা কর। কারণ, ফেসবুকের আবিষ্কারক আমি না। উনি। ছোট ভাই এবার মোবাইল টিপতে টিপতে অন্যদিকে চলে গেল। জুকারবার্গকে ফোন করার চেষ্টা করছিল কিনা, ঠিক বোঝা যায়নি। আমার এক প্রতিবেশী বললেন, খুব টেনশনে পড়ে গেলাম ভাই সাহেব। টেনশনের কারণে রোজই হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। আমি বললাম, টেনশন করলে প্রেশার বাড়ে। আর প্রেশার বাড়লে হাসপাতালে যেতে হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। প্রতিবেশী বললেন, আপনি বোধ হয় আমার কথার আগামাথা না বুঝেই মন্তব্য করে বসলেন। এটা ঠিক না। আমি আমতা আমতা করে বললাম, টেনশনটা ঠিক কী কারণে, একটু বলবেন? আর হাসপাতালেইবা কেন যাচ্ছেন... প্রতিবেশী বললেন, আজকাল ফেসবুকে কান নেওয়ার বিষয়টা খুব শোনা যাচ্ছে। মানে যাকে বলে ফেসবুকীয় গুজব। তো এই যে কান নিয়ে যাওয়ার আতঙ্ক, এই আতঙ্কে আমি ঘুমাতে পারি না। বার বার মনে হয় এই বুঝি কান নিয়ে গেল। একজন বলল, কান বাঁচাতে কানটুপি ব্যবহার করার জন্য। কিন্তু এই গরমে কি কানটুপি পরে থাকা যায় বলেন। মানুষ পাগল বলবে না? তাই আমি রোজ হাসপাতালে গিয়ে নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা করছি, নিতান্তই যদি কান খোয়া যায়, তাহলে কানের পুনর্জন্ম সম্ভব কিনা। মানে কান আবার গজাবে, এই সিস্টেম আছে কিনা। আমি অতিকৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, তা ডাক্তারের বক্তব্য কী? প্রতিবেশী বললেন, ডাক্তারের একটাই বক্তব্য, যতদিন ফেসবুক কর্তৃক কান খোয়া যাওয়ার আশঙ্কা থাকবে, ততদিন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাকটিভ রাখুন। কী বিপদের কথা বলেন দেখি! আমার এক বন্ধু বলল, কিছুদিন আগেও যখন ছোট ভাইয়ের বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে যেতাম, মেয়ের বাবার এক প্রশ্নে ধরা খেয়ে যেতাম। প্রশ্নটা কী জানিস? ছেলে কী করে? যেহেতু আমার ছোট ভাই কিছু করত না মানে বেকার ছিল, তাই সঠিক উত্তরও দিতে পারতাম না, বিয়েও হতো না। এখন মেয়ের বাবা যেই জিজ্ঞাসা করে ছেলে কী করে, সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিয়ে দিই, ছেলে ফেসবুকে গুজব ছড়ায়। অনেক বাবাই যেহেতু ফেসবুকের বিষয়টা বোঝে না, ফেসবুকে গুজব কীভাবে ছড়ায় তাও বোঝে না, তাই ফেসবুক গুজবকে এই কিসিমের ‘জব’ বা চাকরি মনে করে খুশি হয়ে যায় এই ভেবে— বাহ, ছেলে তাহলে ভালো একটা জব করছে। এরপর যেই বেতনের কথা জিজ্ঞাসা করে, আমি বাণী দিয়ে দিই, ‘দেখুন, মেয়েদের বয়স যেমন জিজ্ঞাসা করতে নেই, তেমনি ছেলেদের বেতনও জিজ্ঞাসা করতে নেই।’ পাড়ার চা স্টলে কথা হচ্ছিল ফেসবুকে কান নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে। পাড়ার বড় ভাই হিসেবে খ্যাত আলী আসগর ভাই বলে উঠলেন, ফেসবুক ব্যবহারের অধিকার আছে কেবল সাপ সম্প্রদায়ের। সাপের কানও নেই, ফেসবুক কর্তৃক খোয়া যাওয়ার আশঙ্কাও নেই। পাশে বসা একজন এবার গরম চায়ে ফুড়ুৎ করে চুমুক দিয়ে বলে উঠলেন, সাপের কান নেই? তাহলে তো ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ ছবিতে খামোখাই অঞ্জু ঘোষ বীণ বাজাল। আহারে, মেয়েটা কী পরিশ্রমটাই না করেছিল সাপকে বাঁশি শোনাতে গিয়ে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর