সোমবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিংশ এবং একবিংশ শতাব্দীর কৈশোর

রাফিউজ্জামান সিফাত

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় অনেক কিছুই। ১৯৯৯ সালের পর ক্যালেন্ডারের পাতাই শুধু বদলায়নি, বদলে গেছে কৈশোরের ছবিটাও। একবিংশ শতাব্দীর কিশোর-কিশোরীদের কাছে বিংশ শতাব্দীর কৈশোরের ছবিটা তুলে ধরলে কেমন দেখা যাবে, জেনে নিন—

 

খেলাধুলা 

বিংশ : ভিডিও গেমসের দোকানে মোস্তফা খেলতে গিয়ে কতবার কানমলা খেতে হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। ঘুম থেকে উঠেই বল নিয়ে মাঠে চলে যেত। স্কুলের টিফিন বিরতিতে আবার মাঠে দৌড়। স্কুল শেষে আবার খেলা। বিকাল মানেই মাঠজুড়ে ফুটবল, ক্রিকেট, বোমবাস্টিং। তবে বাসা থেকে কড়া হুকুম থাকত সন্ধ্যার আজানের আগেই মাঠ থেকে ঘরে ফিরে হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বসার। 

একবিংশ : ঘুম থেকে জেগে ফেসবুক নোটিফিকেশন চেকিং। এরপর সারা দিন যখন সময় সুযোগ হয় কম্পিউটার কিংবা মোবাইলে ভিডিও গেমস। রুম ছেড়ে ছেলেমেয়ে যেন একবার মাঠে খেলতে যায় তার অভিভাবকদের হা-হুতাশ। ঘরের কোণে ফুটবল, ক্রিকেট ব্যাট পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় জয়স্টিক, এক্স বক্স।

 

পড়াশোনা 

বিংশ : পড়ার টেবিলে বসে শব্দ করে পড়তে হতো যেন রান্না ঘর থেকে মা আওয়াজ শুনতে পান। বড় ভাই-বোন প্রাইভেট টিউটর হিসেবে পড়া দেখিয়ে দিতো। পড়ার সময় রেডি-টেলিভিশনের আশপাশে যাওয়া এক প্রকার নিষিদ্ধ ছিল।

একবিংশ : প্রতিটা বিষয়ের জন্য আছে আলাদা প্রাইভেট টিউটর। দরজা আটকে নিঃশব্দে পড়াশোনা করানো হয়। পড়ার সুবিধার জন্য ল্যাপটপ কিনে দেওয়া হয়। যোগাযোগের জন্য বইয়ের পাশে থাকে মোবাইল। পরীক্ষার আগের রাতে সবাই মিলে ফেসবুকে ঢুঁ মারে কিছু ফাঁস হলো নাকি জানতে।

 

ঘুরে বেড়ানো 

বিংশ : মাসে অন্তত একদিন পরিবারের সবাই মিলে শিশুপার্ক, বোটানিক্যাল গার্ডেন কিংবা চিড়িয়াখানায় ঘুরতে যাওয়া হতো। 

একবিংশ : সন্তানকে ভিআর (ভার্চুয়াল রিয়েলিটি) কিনে দেওয়া হয় যেন ঘরে বসেই চিড়িয়াখানা দেখতে পারে। মাঝে মধ্যে রেস্টুরেন্টে খাওয়ার ছলে ঘুরতে যাওয়া এবং প্রচুর সেলফি তোলা। 

 

রান্না

বিংশ : শুক্রবারের ভালো রান্নার আলাদা কদর ছিল। এ সময় রাস্তায় হাঁটলে বিভিন্ন বাসা থেকে রান্নার ঘ্রাণ নাকে আসত। মাংস রাঁধলে চুলার চারপাশে একে ওকে ঘুরঘুর করতে দেখা যেত।

একবিংশ : মোবাইল আপের মাধ্যমে ফুড হোম ডেলিভারি যত্রতত্র প্রয়োগ।

 

সালামি

বিংশ :  দলবল বেঁধে আত্মীয়দের বাসায় বাসায় যাওয়া হতো। মুরুব্বিদের কাছ থেকে সালামি নেওয়ার রেওয়াজ ছিল। নতুন কচকচে নোটে ঈদের সালামি পাওয়ার উত্তেজনাই ছিল ভিন্ন রকম। দিন শেষে কে কত সালামি পেল তার হিসাব করা হতো। সে টাকায় কেনা হতো টিনের বন্দুক, নৌকা ইত্যাদি।

একবিংশ : ফেসবুক, স্কাইপে, ওয়াটসআপেই সাক্ষাৎ পর্বের সমাপ্তি। সালামি ট্র্যান্সফার হয় মোবাইলে মোবাইলে। 

সর্বশেষ খবর