সোমবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

‘সহমত ভাই’ উৎপাত

ইকবাল খন্দকার

‘সহমত ভাই’ উৎপাত

ডায়ালগ ও আইডিয়া : তানভীর আহমেদ

আমাদের নিয়ে অনেক বানানো কথা আছে, আমরা নাকি কোনো কিছুতেই একমত হতে পারি না। এগুলো বলে এখন আর বেইল পাওয়া যাবে না। কারণ, বাঙালি এখন একদমই মতের অমিল করছে না। সব বিষয়ে একমত হয়ে যাচ্ছে। ফেসবুকের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘সহমত’। আপনি কিছু একটা লিখলেন। যেখানে ভিন্ন মত পোষণ করার সুযোগ আছে। কিন্তু ভিন্ন মত কেউ পোষণ করবে না বললেই চলে। যেহেতু আপনি তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, ভিন্ন মত পোষণ করলে ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে তাদের আউট করে দিতে পারেন, তাই তারা রিস্ক নিতে রাজি হয় না। মনে মনে অসহমত থাকলেও ঠাস করে কমেন্ট করে বসবে, ‘সহমত ভাই’। ‘সহমত ভাই’য়ের দৌরাত্ম্য দেখলে যে কেউ নিজের অজান্তেই স্লোগান দিয়ে উঠতে পারে— আমার ভাই তোমার ভাই, সহমত ভাই, সহমত ভাই। সহমত ভাইয়ের মার্কা? ফেসবুক, ফেসবুক।

আমার এলাকার এক বড়ভাই বললেন, কী যুগ যে এলো। সারাক্ষণ ওই এক জিনিসই মাথায় কাজ করতে থাকে। তাই কেউ যখন আমার নামের সঙ্গে ‘ভাই’ যোগ করে ডাক দেয়, তখন দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়ে যাই। ভাবী, লোকটা আমাকে ডাকছে, নাকি ফেসবুকে কমেন্ট করছে! আমি তার কথার আগামাথা বুঝতে না পেরে হাঁ করে তাকিয়ে থাকলে তিনি বলেন, আরে বাপুরে আমার নাম কী? রহমত। তো কেউ যখন আমাকে বলে ‘রহমত ভাই’, আমি শুনি ‘সহমত ভাই’। কী যে যন্ত্রণায় আছি! ভাবছি বাপ-দাদার দেওয়া নামটা চেঞ্জ করে ফেলব কিনা। আমার আরেক বড়ভাই বললেন, সব দোষ ফেসবুক ফ্রেন্ডদের ঘাড়ে চাপালে তো হবে না। কারণ, ফেসবুকেই শুধু না, ফেসবুকের বাইরেও আজকাল প্রচুর সহমতের ঘটনা ঘটছে। দ্বিমত করলে হতে পারে ঝামেলা, আর সহমত পোষণ করলে লাভ হতে পারে ম্যালা। অতএব সহমত হয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ নয় কি? আমি বুদ্ধিমান। তাই আজকাল সহমতের পথ ধরেই হাঁটছি। আমি বললাম, বুঝলাম না আপনার কথা। বড়ভাই বললেন, না বোঝার কী আছে। তোর ভাবী সেদিন নতুন শাড়িটা পরার পর নিজের প্রশংসা নিজেই করেছিল। বলেছিল, তাকে নাকি খুব সুন্দর লাগছে। আমি কেন কথাটার সঙ্গে সহমত পোষণ করলাম না, এজন্য আমাকে তিনবেলা হোটেলে খেতে হয়েছে। সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এখন থেকে তোর ভাবী যদি শাড়ি না পরে লুঙ্গি পরেও বলে তাকে সুন্দর লাগছে, আমি ধুম করে ‘সহমত আপা’ বলে বসে থাকব। কারণ, আমি আর হোটেলে খেতে চাই না। হোটেলের পাথরওয়ালা ভাতে কামড় দিয়ে আমার দাঁতের ফিলিং ছুটে গেছে কিনা। আমার পরিচিত এক ভদ্রলোক একটা ফ্ল্যাট কিনলেন। তো তিনি যখন উঠতে যাবেন নিজের ফ্ল্যাটে, তখনই দেখা দিল ঝামেলা। ভদ্রলোক থানা-পুলিশ করলেন। কিছুতেই কিছু হলো না। তার সঙ্গে কিছুদিন আগে দেখা হতেই কুশল বিনিময় করলাম। জিজ্ঞাসা করলাম ঝামেলা মিটেছে কিনা। ভদ্রলোক বললেন, কেন মিটবে না বলুন। আগে সহমত হতে পারতাম না, তাই ঝামেলা হতো। এখন পারছি, তাই ঝামেলা হচ্ছে না। আমি বললাম, একটু বুঝিয়ে বলেন। ভদ্রলোক বুঝিয়ে বললেন, ঝামেলাটা ছিল মূলত চাঁদাবাজদের নিয়ে। তারা বলত মাসে মাসে চাঁদা দিতে হবে। আমি সহমত হতে পারিনি, তাই ব্যাপক দাবড়ানি দিয়েছিল। এই দাবড়ানির ভয়ে এখন করি কী, তারা যদি মাসে একবার চাঁদা নিতে না এসে তিন-চারবার আসে এবং বলে এসে চাঁদা নেওয়াটা কষ্টকর হয়ে যায়, বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া উচিত; আমি দাঁত কেলিয়ে বলি— ‘সহমত ভাই’।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর