তখন হাইস্কুলে পড়ি। লেখালেখির সূত্রে পাশের জেলার একজনের সঙ্গে আমার পরিচয় হলো। পরিচয় থেকে বন্ধুত্ব। এক দিন সে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এলো। সাধ্যমতো সাদর আপ্যায়ন করলাম। যাওয়ার সময় সে দাওয়াত দিল তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য। আমি বললাম, এত দূরে কীভাবে যাই। সে বলল, কোনো ব্যাপার না। একটা সাইকেল ভাড়া নেবেন, চলে যাবেন। তখন বিশ টাকায় সারাদিনের জন্য সাইকেল ভাড়া পাওয়া যেত। তবে বিশ টাকা জোগাড় করা চাট্টিখানি কথা ছিল না। আমি অনেক কষ্টেশিষ্টে জোগাড় করলাম এবং আমার আরেক বন্ধুকে নিয়ে চলে গেলাম পাশের জেলার সেই বন্ধুর বাড়িতে। যদিও বাড়ি খুঁজে পাওয়া এত সহজ ছিল না। একই রাস্তায় কতবার যে ঘুরতে হয়েছে! যা-ই হোক, নানা ঘটনা-দুর্ঘটনার পর যখন বাড়ি খুঁজে পেলাম, তখন জানা গেল বন্ধু বাড়িতে নেই। তাকে ফোন দেওয়া হলো। আমি ভাবলাম সে বুঝি খুব অনুতপ্ত হবে। কিন্তু না। সে বেশ সাবলীলভাবে বলল, আজকে দেখা হয়নি তো কী হয়েছে। আরেক দিন হবে। আমি ক্ষোভ আর অভিমানের সমন্বয় ঘটিয়ে বললাম, কিন্তু এত কষ্ট করে যে আসলাম? বন্ধু হেসে বলল, আসছো ভালো করছো। বাড়িটা চিনে গেলা। আমি খুব অবাক হলাম। না না, বন্ধুর কারবারে না। সেই বন্ধুর ঘটনা ওখানেই শেষ। তার মানে ফ্ল্যাশব্যাক শেষ। চলে এসেছি বর্তমানে। তো অবাক হয়েছি এই জন্য, যেহেতু এত বছর আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে আজকাল। এখনো নাকি বন্ধুকে বাসায় দাওয়াত দিয়ে বন্ধু চলে যাচ্ছে বাসা থেকে। এটা হলো কিছু? আর বন্ধু বা বন্ধুদ্বয় যদি আমাদের মতো হাইস্কুলপড়ুয়া তথা কম বয়স্ক না হয়ে বেশি বয়স্ক হন, তাহলে তো ব্যাপারটা রীতিমতো হাস্যকর পর্যায়ে চলে যায়। হাসাহাসির সূত্র ধরে আমার এক প্রতিবেশী বললেন, রুনা লায়লা পরপর তিন দিন বন্ধুর বাড়িতে গিয়েও বন্ধুর দেখা পেতেন না। এখন অবশ্য তিন দিন না, এক দিন গিয়ে দেখা না পেলেই সেটা নিয়ে টেলিভিশন-পত্রিকায় নিউজ হয়ে যায়। পাশ থেকে আরেকজন বলে উঠল, অন্যকে দাওয়াত দিয়ে কেন মানুষ বাসায় থাকে না, সেটাও খতিয়ে দেখা উচিত। এমনও তো হতে পারে, তার বাসার তালায় সমস্যা। দরজায় যে ঝুলিয়েছেন, সেটা আর খুলতে পারছেন না। ভিতরে জং ধরে গেছে বা অন্য কোনো সমস্যা হয়েছে। প্রতিবেশী বলল, তাহলে লোকজন কীভাবে বাসায় ঢুকবে? পাশের ভদ্রলোক এবার বললেন, কেন, পাইপ বেয়ে! জানালা দিয়ে। আমি তো প্রায়ই এটা করি। এতে লাভ দুইটা। গেস্ট এসে ফেরত যায়, আবার পাইপ বেয়ে জানালা দিয়ে গতায়াত করলে ব্যায়ামটাও হয়ে যায়। আমার এক চাচাত ভাই বলল, আগে আমি পরিচিত কারও সাক্ষাৎ পেলেই দাওয়াত দিয়ে ফেলতাম বাসায় আসার জন্য। কিন্তু বউ যখন ঝাড়ি দিত, তখন পড়তাম বিপদে। তখন না পারতাম দাওয়াতটা ক্যানসেল করতে, না পারতাম বউকে ম্যানেজ করতে। তখন করতাম কী, এমন জায়গায় লুকাতাম, মেহমান এসে আমাকে আর খুঁজে পেত না। বউ তাকে বলে দিত আমি বাসায় নেই। আমার এক ছোটভাই বলল, আমি মনে করি কাউকে দাওয়াত দিয়ে বাসা থেকে কেটে পড়ার জন্য আগেকার আমলের বাড়িগুলো ছিল একদম পারফেক্ট। তখন প্রতিটি বাড়িতে গোপন সুড়ঙ্গ ছিল। মেহমানের আগমন টের পেয়ে মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে সুড়ঙ্গে ঢুকলেন, বের হলেন বুড়িগঙ্গায় গিয়ে। ফেরার সময় পুরান ঢাকার বাকরখানি নিয়ে ফিরলেন। ফাইন না?