সোমবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

একটি সংগীত সন্ধ্যা রাত

শাকীর এহসানুল্লাহ

একটি সংগীত সন্ধ্যা রাত

গত রাতে বাসার গ্যারেজে দুইটা ছাগল বাঁধা ছিল। সারা রাত দুই ছাগল আমাদের জন্য চমৎকার সংগীত পরিবেশন করেছে। তাদের সুরের মূর্ছনায় পুরো বাড়ির কেউই ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি। কিন্তু ঠিক বুঝতে পারিনি যে, হঠাৎ করে এই শহুরে এলাকায় দালানবাড়ির গ্যারেজে ছাগল কেন! হাতি-ঘোড়া হলে একটা কথা ছিল।

যাই হোক, দুপুরের দিকে দেখলাম গ্যারেজে চেয়ার-টেবিল ফেলে খাবারের আয়োজন করছেন বাড়িওয়ালা। ভাবলাম ভালোই হলো, আজকে রাতে তাহলে জম্পেশ খাওয়া হবে। বাড়িওয়ালার সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় ভাবলাম, আঙ্কেল আমাকে ডেকে বলবে, বাবা আজ রাতে আমাদের সঙ্গে খেও। কিন্তু তিনি ডাকবেন তো দূরের কথা উল্টা আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছেন।

শেষে আমি নিজেই বাড়িওয়ালা আঙ্কেলকে জিজ্ঞেস করলাম আয়োজনের ব্যাপারে। আঙ্কেল অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে সোজাসাপ্টা বলে দিলেন, ‘এটা একটা পারিবারিক আয়োজন।’ আমিও হেসে হেসে বললাম, বাহ, সুন্দর আয়োজন। বলে দারোয়ানের দিকে তাকালাম, যেন উনি আমাকে একটু সমর্থন করে। বললাম, আসলে আমাদের এমন পারিবারিক আয়োজন করা উচিত। এই যেমন আমরা এতগুলো মানুষ এক বিল্ডিংয়ে থাকি, অথচ কেউ কাউকে ভালোভাবে চিনি না। এভাবে এক টেবিলে মাঝে মাঝে খেতে বসলে পরিচিতি মহব্বত সবই বাড়বে।

সন্ধ্যায় বুয়া এসে জিজ্ঞেস করল, মামা, আজকে খাবার কয়টা দিমু? আমি বুয়াকে বললাম, একটু অপেক্ষা করেন, আসতেছি। নিচে গিয়ে বাড়িওয়ালাকে বললাম—

: আঙ্কেল, বাসায় তো বুয়া আসছে।

: বুয়া তো আসবেই, তো?

: না মানে, বুয়া রাতের খাবার রান্না করতে আসছে আরকি।

: তো হয়েছে কী? বাসায় কি গ্যাস নেই?

: না না, গ্যাস আছে, কিন্তু আমরা বাসায় খাব নাকি এখানে খাব, সেটা জানতে চাচ্ছিলাম আরকি।

: ও! আসলে এটা তো একটা আকিকার আয়োজন, তাই আমি...

: বাহ! প্রতিবেশীদের নিয়ে একসঙ্গে খেলে তো ভালোই হয়।

: না মানে, আয়োজনটা আসলে পারিবারিক তো। তাই শুধু আত্মীয়দের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে। তোমরা বুয়াকে বাসায় রান্না করতে বল।

: ঠিক আছে আঙ্কেল। যাই। ও হ্যাঁ, একটা কথা ছিল আঙ্কেল।

: হ্যাঁ বল?

: সামনে থেকে বাসার নিচে যেন কোনো ছাগল সংগীত পরিবেশন না করে। সামনে থেইকা ছাগল বান্ধার ব্যাপারে একটু সাবধান থাইকেন।

কিন্তু বাড়িওয়ালা আর সাবধান থাকলেন না।’

এর কিছুদিন পরেই দেখা গেল বাসার গ্যারেজে একটি গরু বাঁধা। এবার আর রাতের খাবার নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে পারলাম না। বাজার থেকে গরুর মাংস এনে খালাকে বললাম, আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ গরুর মাংস আজকে রান্না করবেন। খালা তাই করল। সবাই খেতে বসলাম। এমন সময় কলিংবেলের শব্দ। দরজা খুলে দেখি বাড়িওয়ালা! খুব আদরের সঙ্গে বলছেন, আজকে একটা ছোটখাটো খাবারের আয়োজন ছিল। তোমরা চলে এসো!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর