মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

বদলে যাচ্ছে ঢাকার পার্ক

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বদলে যাচ্ছে ঢাকার পার্ক

পরিকল্পিত উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে ঢাকার পার্ক। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে তোলা ছবি— জয়ীতা রায়

আকাশচুম্বী অট্টালিকার ফোকর গলে বেরিয়ে গেছে গলিপথ। অলিগলি ঘুরে রাজপথে পৌঁছতেই হাতের বামে চোখ আটকে যায় শিশুদের কোলাহলে। তিন চাকার সাইকেল নিয়ে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠেছে তারা। পাশেই হেঁটে ঘাম ঝরাচ্ছেন অভিভাবকরা। শুধু শিশু-কিশোর নয়, পার্কের এক কোণায় বসেছে প্রবীণ মিলন মেলা। কর্মজীবন শেষে এখন অফুরন্ত অবসর। তাই সময় কাটাতে নাতি-নাতনিদের সঙ্গ দিতে এসে জুটে গেছে নিজেরও কিছু বন্ধুবান্ধব। ইট-পাথরের নগরজীবনে স্বস্তির খোঁজে রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দাদের জন্য সংস্কার শেষে উন্মুক্ত করা হয়েছে ৭ নম্বর সেক্টর পার্ক।

শুধু উত্তরা নয়, সুস্থ বিনোদন এবং নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করতে পার্ক আধুনিকায়নের কাজ শুরু করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতায় ২৬টি এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতায় ৩১টি পার্ক ও খেলার মাঠের সংস্কার কাজ চলছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটির সংস্কার কাজ শেষে খুলে দেওয়া হয়েছে এবং বাকিগুলোর কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে বলে জানিয়েছে সিটি করপোরেশন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ড. তারিক বিন ইউসুফ বলেন, আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও সবুজায়ন প্রকল্পের আওতায় ২৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে মেগা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ২২টি পার্ক ও চারটি খেলার মাঠ সংস্কার করে অত্যাধুনিকভাবে নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি খুলে দেওয়া হয়েছে। বাকি কয়েকটির সংস্কার কাজ চলছে এবং অন্যগুলোর নকশা চূড়ান্ত করে টেন্ডার সম্পন্ন হয়েছে। এই পার্কগুলোর আধুনিকায়নে নকশা প্রণয়নে নাগরিক ভাবনার মতামতের ভিত্তিতে কাজ করছে স্থপতিরা। তাজমহল রোডের পার্ক, খেলার মাঠ, ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক, ফজলে রাব্বী পার্ক, শুটিং ক্লাব পার্কের নকশা চূড়ান্ত হয়ে কাজ শুরু হয়েছে। মোহাম্মদপুর পার্ক, গুলশান-বনানী পার্ক এবং মগবাজার মধুবাগ পার্কের নকশা সম্পন্ন করা হয়েছে। এই কাজে জনগণকে সম্পৃক্ত করার কারণ তারা যেহেতু এই পার্কগুলো ব্যবহার করবে তাই তাদের সুবিধা-অসুবিধাগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে সংস্কার করতে হবে। এ ছাড়া পার্ক রক্ষণাবেক্ষণে জনগণের সচেতনতা এবং দায়িত্ববোধ বাড়াতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের জুনের মধ্যে এই প্রকল্প পুরোপুরি সম্পন্ন হবে বলে জানান তিনি।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. জামাল মোস্তফা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নাগরিকদের সুস্থ বিনোদন এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবািধা নিশ্চিত করা আমাদের দায়িত্ব। তাই সংস্কারের অভাবে নষ্ট হয়ে যাওয়া পার্ক বা দখল হয়ে যাওয়া খেলার মাঠ উদ্ধারে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এই কাজগুলো করছি। এসব পার্কে শিশুদের খেলাধুলা, বড়দের হাঁটাচলা, আধুনিক টয়লেট এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা থাকছে। অত্যাধুনিক নকশার সঙ্গে জনগণের মতামতকে যুক্ত করে ২০২০ সালের জুনের মধ্যে সব কাজ শেষ হবে। যেগুলোর কাজ এর আগেই শেষ হয়ে যাচ্ছে সেগুলো নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ‘জল-সবুজের ঢাকা’ প্রকল্পের আওতায় ১২টি খেলার মাঠ এবং ১৯টি পার্কের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিয়োগকৃত এ প্রকল্পের কনসালটেন্ট স্থপতি রফিক আযমের নেতৃত্বে জল-সবুজের ঢাকা প্রকল্পে ৭০ জন স্থপতি কাজ করছেন। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পে যেসব মাঠের নকশা করা হয়েছে এর মধ্যে রয়েছে কলাবাগান মাঠ, বাসাবো মাঠ, লালবাগের দেলোয়ার হোসেন মাঠ, আমলিগোলা মাঠ, শহীদনগর মিনি স্টেডিয়াম, বালুরঘাট মাঠ ও শহীদ আবদুল আলিম মাঠ, বাবুবাজারের রহমতগঞ্জ মাঠ, বংশালের সামসাবাদ মাঠ, বাংলাদেশ মাঠ, গোলাপবাগ খেলার মাঠ এবং ধোলাইখালের সাদেক হোসেন খেলার মাঠ। আর পার্কের মধ্যে রয়েছে- কারওয়ান বাজারের পান্থকুঞ্জ, গুলিস্তানের ওসমানী উদ্যান, যাত্রাবাড়ী পার্ক, শরাফতগঞ্জ পার্ক, গুলিস্তান পার্ক, জিন্দাবাহারের সিরাজউদ্দৌলা পার্ক, জগন্নাথ সাহা রোড পার্ক, হাজারীবাগ পার্ক, নবাবগঞ্জ পার্ক, বংশালের সিক্কাটুলি পার্ক, বংশাল পার্ক, মালিটোলা পার্ক, ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের বশিরউদ্দিন পার্ক, সায়েদাবাদের আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার শিশুপার্ক, মতিঝিল পার্ক, ধানমন্ডি ৩ নম্বর পার্ক, হাজারীবাগের গজমহল পার্ক, বকশিবাজার পার্ক ও রসুলবাগ শিশুপার্ক।

সরেজমিন মালিটোলা পার্কে গিয়ে দেখা যায়, দুপুরের তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। বসার স্থান নির্মাণসহ কাজ চলছে ওয়াকওয়ের। বৃষ্টির কারণে মাঝে মাঝে কাজে সমস্যা হলেও সময়ের আগেই শেষ করতে পারবেন বলে জানান তারা।

অত্যাধুনিক এই পার্কের বিষয়ে নগরবিশ্লেষক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, পার্কে হাঁটাচলা, ব্যায়ামের জায়গা, শিশুদের খেলার কর্নার, কফিহাউস, অত্যাধুনিক টয়লেট নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছে। উত্তর সিটির প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক এবং দক্ষিণ সিটি মেয়র সাঈদ খোকন এই পরিকল্পনার সঙ্গে একমত পোষণ করেছিলেন। সেই পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নে নাগরিক জীবনে স্বস্তি মিলবে রাজধানীবাসীর।

এ ব্যাপারে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জল-সবুজের ঢাকা প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজধানীবাসীর সুস্থ বিনোদন চাহিদার অনেকটাই পূরণ হবে বলে আশা করি। শিশুরা দুরন্ত শৈশব ফিরে পাবে খেলার মাঠগুলোর সংস্কার কাজ শেষ হলেই। শুধু হাঁটা বা বসে থাকার স্থান নয়, সব বয়সী মানুষের অবসর এবং বিনোদনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠবে এই পার্কগুলো। আগামী বছরের জুনের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নগরবাসী উপহার পাবে নতুন এক ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর