সোমবার, ২৯ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

পথে পথে যাচ্ছেতাই

একটু পরেই আক্রমণ। কারা আক্রমণ করেছে জানেন? পাড়ার সুন্দরী যারা আছে, তাদের বড়ভাইরা। তো তাদের আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে আমরা শুরু করলাম ছোটাছুটি...

ইকবাল খন্দকার

পথে পথে যাচ্ছেতাই

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

পাশের বাসায় খুব হৈচৈ হচ্ছিল। বের হয়ে দেখি ওই বাসার ভদ্রলোক তার ছেলেকে টেনে গেটের বাইরে নিতে চাচ্ছেন। এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছে বলেন তো? ওকে টানছেন কেন? ভদ্রলোক বললেন, আর বলবেন না। বাসায় সে যাচ্ছেতাই করছিল। বাসা কি যাচ্ছেতাই করার জায়গা? আমি বললাম, অবশ্যই বাসা যাচ্ছেতাই করার জায়গা নয়। কিন্তু আপনি ওকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন কোথায়? মানে কোথায় নিতে চাচ্ছেন? ভদ্রলোক বললেন, রাস্তায়। রাস্তায় রেখে আসব। আমার মনে হলো, বাসায় যাচ্ছেতাই করা না গেলেও রাস্তায় যাচ্ছেতাই করা যায়। আমার ধারণা যে সঠিক, এর প্রমাণ পাচ্ছি আজকাল। ধরা যাক আপনার শ্বশুরের মেয়ে, আরেকটু সহজ করে বললে আপনার স্ত্রী আরকি। যা-ই হোক, যা বলছিলাম। তো আপনার স্ত্রী আপনাকে বিস্তর ধোলাই দিল। কিল-ঘুষি দিয়েছে। নিতান্তই ছোটবেলায় আপনি দৌড়ে চ্যাম্পিয়ন ছিলেন বলে দৌড়ে পালাতে পেরেছেন। আপনি কিন্তু মোটেই বাড়িতে দাঁড়িয়ে এর প্রতিবাদ করতে পারবেন না। কারণ, প্রতিবাদ করতে গেলে আরেক দফা ধোলাই খেতে হতে পারে। তাহলে কী করতে হবে? এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করতে হবে, যেন উনি মানে আপনার স্ত্রী তেড়ে এলেও আপনাকে ধরতে না পারে। মানে আপনি ঝেড়ে দৌড় দিতে পারেন। আর সেই জায়গাটিই হচ্ছে রাস্তা। রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানানোর ম্যালা ফায়দা। দু-চারশ লোক জড়ো হবে। আপনার বউ যে আপনাকে মারল, এর জন্য সমবেদনা জানাবে। তারাও যদি তাদের বউয়ের হাতে মার খেয়ে থাকে, সেটা আপনার সঙ্গে শেয়ার করবে। শেয়ারে শেয়ারে বাড়বে আপনাদের মধ্যকার পেয়ার। বলতে পারেন মোটামুটি জমজমাট ব্যাপার। কিন্তু এই জমজমাট ব্যাপারের জন্য যে হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তিতে পড়বে, তারা যে ঠিকমতো চলাচল করতে পারবে না, সেটা আপনাকে না ভাবলেও চলবে। রাস্তা তো আর কারও বাবার না! তাহলে আপনি রাস্তায় যাচ্ছেতাই করলে কে আপনাকে কী বলবে? কার এমন বুকের পাটা! আমার এক ছোটভাই বলল, রাস্তায় যাচ্ছেতাই করার সুবিধা আছে। যদি সব ঠিকঠাক থাকে, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। যদি ঠিকঠাক না থাকে, তাতেও সুবিধা। যেমন কদিন আগে আমরা বন্ধুরা ‘প্রেমিকদের সুবিধা দাও’ লিখে একটা ব্যানার বানালাম। তারপর বাসার পাশের রাস্তায় গিয়ে দাঁড়ালাম। একটু পরেই আক্রমণ। কারা আক্রমণ করেছে জানেন? পাড়ার সুন্দরী যারা আছে, তাদের বড়ভাইরা। তো তাদের আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে আমরা শুরু করলাম ছোটাছুটি। একসময় আমরা তিনজন রাস্তায় পড়ে গেলাম। তারা আমাদের ধরে টানাহেঁচড়া শুরু করল। আর সুবিধাটা তখনই পেলাম। আমি জানতে চাইলাম, কী সুবিধা পেলি? ছোটভাই বলল, আমাদের হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় আমাদের হাঁটুর ঘষা লেগেছিল রাস্তায়। এতে হাঁটুর নিচে প্যান্ট ক্ষয় হয়ে ছিঁড়ে গেছে। আর এই ছেঁড়াটা ফ্যাশনের জগতে কিযে নতুন মাত্রা যোগ করেছে! এখন পাড়ার সব ছেলে এই ফ্যাশন ফলো করছে। আপনার চোখেও দুয়েকটা পড়েছে হয়তো। আমি তাড়াতাড়ি করে তার সামনে থেকে কেটে পড়লাম। কারণ, আমার প্যান্টেরও দুয়েক জায়গায় ছিঁড়া ছিল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর