শখ করে আমাদের মহল্লার নাম দিয়েছি শান্তিনগর। সম্ভবত আগে অশান্তিনগর ছিল। আমার কথায় একমত আছেন বিভিন্ন সহমত ভাই। কিন্তু সেই শান্তি তিন-চার গুণ বেড়ে যাবে, তা আগে টের পাইনি। এ মহল্লায় বাসা ভাড়া নিয়ে একদম শান্তিতে আছি। সাতসকালে প্রতিটি মহল্লায় বুক ফুলিয়ে গর্ব করা যায়। নইলে পেটের ভাত অত সহজে হজম হয় না। পাখির ডাকে সবার ঘুম ভাঙলেও আমার ঘুম ভাঙে গরুর হাম্বা হাম্বা ডাকে। প্রতিবেশী মফিজ মিয়া গরুর খামারের পরিকল্পনা করল। বাজার থেকে একটি গরু কিনল। গরুর খামার ঠিক আমার জানালার পাশে। গরুটি রাতদিন হাম্বা হাম্বা ডাকে। কারও কথাও শোনে না। খামার ভরা খাবার, তবু ঠিকমতো খায় না। সারা মহল্লায় শব্দদূষণে একাই যথেষ্ট। নিশ্চিত বলা যায়, এখানে চোর কোনোদিন চুরি করার চান্স পাবে না। এদিক থেকে আমরা বেশ নিরাপদে আছি।
হাম্বা গরুর জন্য অনেক সময় মোবাইলে কল এলেও শুনতে পাই না। এ ক্ষেত্রে অহেতুক কল রিসিভ করার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাই। এমনকি ফোনে যখন কারও সঙ্গে কথা বলি, তখন সেও গরুর ডাক শুনতে পায়। তার জন্যই তো নির্দ্বিধায় যে কারও সঙ্গে কথা বলতে পারি। মনে মনে গান গাই— আমার মতো এত সুখী নেইতো কারও জীবন ...
আমি যে শান্তিনগর নাম দিয়েছি— তা হয়তো হাড়ে হাড়ে জেনে ফেলেছেন। একদিন সংসারের প্রয়োজনে মফিজ মিয়া গরুটি বিক্রি করল। ভাবলাম, শান্তি বুঝি এবার সত্যি সত্যিই ধরা খেল। কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার একটি গরু কিনল। তবে এই গরুটি খুব নিরীহ। রাত দিন সাইলেন্ট মুডে থাকে। মশাগুলো রাতদিন ফুল স্পিডে গান শোনায়। কখনো বা গানের আওয়াজে জেগেই রাত কাটিয়ে দিই। অদূর ভবিষ্যতে আমি একটি দোকান খুলতে পারি। ভাবলাম, সে কথা সবার আগে মফিজ মিয়াকেই বলা জরুরি। প্রচার খরচ নিয়ে একবারও মাথা ঘামাতে হবে না। ফ্রি সার্ভিসে আমার নামও প্রচার হবে। পরিশেষে আরও স্পষ্ট ভাষায় বলি— দিনে গরু রাতে মশা, বুঝে নিও একি দশা!
লেখা : শফিকুল ইসলাম শফিক
কনইল, ভীমপুর, নওগাঁ