সোমবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফেসবুকীয় জ্বর

আমি বললাম, কোথায় যান? ডাক্তারের কাছে? প্রতিবেশী বললেন, আরে না। নিচে যাই ইন্টারনেটের তার কাটার জন্য। ইন্টারনেট নেই, বাসায় ফেসবুকীয় জ¦রও নেই...

ইকবাল খন্দকার

ফেসবুকীয় জ্বর

♦ ডায়ালগ ও আইডিয়া : তানভীর আহমেদ

আগে আমরা সিজনাল জ্বরে ভুগতাম। গরমকাল শেষে শীতকাল শুরু হওয়ার সময় একবার, শীতকাল শেষে গরমকাল শুরু হওয়ার সময় আরও একবার। এখন আর সেইদিন নেই। এখন সারা বছরই মানুষ জ্বরে ভোগে। আর এই জ্বরের নাম ফেসবুকীয় জ্বর। নরমাল জ্বর হলে মানুষ কী করে? আবোলতাবোল বকে। ফেসবুকীয় জ্বর হলেও আবোলতাবোল বকার একটা প্রবণতা দেখা যায়। আর এই আবোলতাবোল বকাবকির তালিকায় উঠে আসে বিশেষ বিশেষ কিছু শব্দ। যেমন- খুশির ঠেলায়, ঘুরতে ইত্যাদি। কিন্তু আজব ব্যাপার হচ্ছে, যারা জ্বরে আক্রান্ত হয়, তারা তো এসব শব্দ বলে আবোলতাবোল করেই, আক্রান্ত না হয়েও অনেকে আবোলতাবোল চালিয়ে যায়। অর্থাৎ না বুঝে। হুজুগে। বিষয়টা এমন- সবাই বলছে, আমি না বললে কেমন হয়। সামাজিকতা বলে একটা কথা আছে না? এক ছোটভাই বলল, এই যে ফেসবুকে কদিন পরপর একেকটা আলোচনা শুরু হয়, এই বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখেন? জিনিসটা কি ভালো? নাকি খারাপ? আমি কিছু বলতে যাব, এমন সময় পাশেরজন বলে উঠলেন, জিনিসটা ভালোই। কারণ, আলোচনা করা মানুষের জন্মগত স্বভাব। যেকোনো বিষয় নিয়েই আলোচনা-সমালোচনা হতে পারে। আর সেটা হতে পারে যেকোনো জায়গায়। তবে অন্য কোনো জায়গায় আলোচনা না হয়ে ফেসবুকে আলোচনা হলে নানাদিক দিয়ে সুবিধা। অত সুবিধার কথা বলতে পারব না। একটা কথা শুধু বলি। আজকাল কোথাও বসে আলোচনা করলে একজনের মুখ আরেকজন দেখতে পায় না ধোঁয়ার কারণে। কারণ, সবার মুখ দিয়েই ধোঁয়া বের হয়। কিন্তু ফেসবুকে আলোচনা করলে বা কোনো বিষয়ে আলোচনা শুরু হলে যেহেতু কাউকে আঙুলে টাইপ করলেই চলে, কাউকে মুখ খুলে কিছু বলতে হয় না, আর মুখ না খুললে যেহেতু ধোঁয়াও বের হয় না, তাই ফেসবুকের আলোচনাটাকেই আমি মোক্ষম আলোচনা হিসেবে জ্ঞান করি। এবার ছোটভাই বলল, ফেসবুকে এক আলোচনা দীর্ঘক্ষণ চালালেও কিন্তু ধোঁয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। দীর্ঘ আলোচনা মানেই দীর্ঘক্ষণ ফেসবুকিং। আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুকিং করলে ল্যাপটপ আগুনের মতো গরম হয়ে ভেতরের কলকব্জা-তারটার পুড়ে একটু ধোঁয়া তো বের হতেই পারে, নাকি? আমার এক প্রতিবেশী বললেন, ফেসবুক জ্বর থেকে সারা দেশের মানুষকে রক্ষা করতে না পারলেও আমার ফ্যামিলিকে কীভাবে রক্ষা করব, সেই পদ্ধতি পেয়ে গেছি। আমি কৌতূহল প্রকাশ করলাম, কীভাবে বলেন তো? প্রতিবেশী বললেন, কীভাবে আবার, যখন বুঝি আমার পরিবারের সবাই ফেসবুক জ্বরে প্রচন্ড ভাবে আক্রান্ত হয়ে গেছে, দৌড়ে নিচে যাই। আমি বললাম, কোথায় যান? ডাক্তারের কাছে? প্রতিবেশী বললেন, আরে না। নিচে যাই ইন্টারনেটের তার কাটার জন্য। ইন্টারনেট নেই, বাসায় ফেসবুকীয় জ্বরও নেই। আমার এক বড়ভাই বললেন, দিন যা পড়েছে, তাতে মনে হচ্ছে অচিরেই নতুন সাইনবোর্ড বানাতে হবে। আর জনসচেততনতা বৃদ্ধির জন্য এসব সাইনবোর্ড টানিয়ে রাখতে হবে রাস্তার মোড়ে মোড়ে। আমি বললাম, টানানোর ব্যবস্থা পরেও করা যাবে। আগে বলেন কিসের সাইনবোর্ড। বড়ভাই বললেন, আজকাল বাচ্চাকাচ্চারা কোনোরকমে প্রাইমারি স্কুলটা পার হয়েই, কেউ কেউ তো প্রাইমারি পার হওয়ার আগেই ফেসবুক আসক্ত হয়ে পড়ে। যা হাম, পোলিও, যক্ষ্মা ইত্যাদি রোগের চেয়ে কোনো অংশেই কম ভয়ঙ্কর নয়। তাই করতে হবে কী, এসব রোগের জন্য যেমন টিকা আছে, ফেসবুক আসক্তির জন্যও টিকার ব্যবস্থা করতে হবে। আর এ বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য রাস্তার মোড়ে সাইবোর্ড টানাতে হবে। সাইনবোর্ডে লেখা থাকবে, আপনার শিশুকে ফেসবুকাসক্তির টিকা দিন, ফেসবুকীয় জ্বর থেকে নিরাপদে রাখুন। ও হ্যাঁ, পুরনো সাইনবোর্ডে হামাগুড়ি দেওয়া বাচ্চার ছবি থাকলেও নতুন সাইনবোর্ডে দেওয়া যেতে পারে ফেসবুকের লোগো। কি, পরামর্শটা দারুণ দিলাম না?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর