সোমবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

মেহমান সমাচার

শফিকুল ইসলাম শফিক

মেহমান সমাচার

ব্যাচেলরের জীবন মানেই অনেক ধৈর্য-শৌর্য নিয়ে টিকে থাকার মহাযুদ্ধ। কখনো কখনো ব্যাচেলরের বাসায় মেহমান এলে মেজাজ বিগড়ে যায়। অবশ্য সেটা মুখফুটে বলা যায় না, মেহমানদের বুঝে নিতে হয়। তাই ফাটা বাঁশের চিপা থেকে উদ্ধারের বিবিধ উপায় খুঁজতে হয়।

খুব তোষামোদ করে একটা বাসায় ভাড়া থাকি। তবে আমরণ একটি শর্ত মেনে চলতে হয়। কোনো অঘটন ঘটলে উত্তম-মধ্যম দিয়ে চিরদিনের জন্য বিদায় জানাবে। সেটা মেনে নিয়েই বাসায় উঠেছি। বাড়িওয়ালার ছেলের নাক খুব পাতলা। সে ভালো কোনো রান্নার ঘ্রাণ পেলেই মেহমানের বাড়তি ভাগ বসায়। এ জ্বালা সইতেও পারি না, কইতেও পারি না। আজ হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছি, ব্যাচেলর কেন বাসা বদলি করে। ভালো বাসা পেলে আমিও রাতারাতি চলে যেতাম।

একদিন বাসায় হঠাৎ একজন ব্যাচেলর মেহমান এল। নিজেই ঠিকমতো খেতে পাই না, আবার মেহমানের নজরদারি। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। মেহমানকে সে কথা বুঝাই কেমন করে? মেহমানের জন্য ভালোয় ভালোয় কিছু নাস্তা-পানির ব্যবস্থা করলাম। প্রথম পর্বে ডিম ও বিস্কুট খেতে দিলাম। মেহমান বলল, চানাচুর ছাড়া বিস্কুট খেতে বিস্বাদ লাগে।

দ্বিতীয় পর্বে আবারও বিস্কুটের সঙ্গে চানাচুর খেতে দিলাম। মেহমান দুটো বিস্কুট খেয়ে চানাচুরগুলো সাবাড় করল। হাতে পানি নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম। বাকি বিস্কুটগুলো চালের ড্রামে রেখে দিলাম। মানে ওটাই গরিবের ফ্রিজ। এই ফ্রিজে নির্ভয়ে অনেক কিছু সংরক্ষণ করে রাখা যায়। যাদের ফ্রিজ নেই, তারাও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারেন।

তৃতীয় পর্বে মেহমান বাদাম খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করল। বললাম, আমি তো বাদাম খাই না। আমার প্রেমিকা নেই। প্রেমিকা থাকলে বাদাম খাওয়ার শখ জাগে। সে থাকলে এটা কোনো ব্যাপারই ছিল না। নানা অজুহাতে তার বাদাম খাওয়ানো ঠেকালাম।

চতুর্থ পর্বে মেহমান ভাত খাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করল। বললাম, অনেক কিছু খেলে, ভাত কোন পেটে রাখবে? রাতে টিউশনি থেকে ফিরে বাসায় মেহমানকে ডাকলাম। সে বলল, আমি হোস্টেলে থাকি। যেখানে যখন খুশি আসতে পারি। কিন্তু রাত ১০টার আগে ফিরতে হয়। নইলে হোস্টেলের সিট বাতিল। অবশেষে সাদরে বিদায় জানালাম।                           -কনইল, নওগাঁ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর