সোমবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

এখন তো সময় বইমেলার

তুই তখন যাবি বইটা ফেরত দেওয়ার জন্য। এতে সে যে বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে, তাতে তার থোতা মুখ ভোঁতা তো হবেই...

ইকবাল খন্দকার

এখন তো সময় বইমেলার

♦ আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

গতরাতে ঘুমাতে যাব, এমন সময় আমার এক বন্ধুর ফোন। ফোনটা ধরব কি ধরব না, ভাবতে ভাবতে অবশেষে ধরেই ফেললাম। জিজ্ঞাসা করলাম, কী অবস্থা? বন্ধু বলল, দুরবস্থা। আমি জানতে চাইলাম দুরবস্থা কেন, কোনো সমস্যা কিনা। বন্ধু বলল, সমস্যা তো বটেই। সারা দিন একটা বিষয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু সামান্যতম সফলতা আসেনি। এখন ঘুমাতে যাওয়ার আগে মনে হলো, তোকে একটা ফোন দিই। মানে শেষ চেষ্টাটা করি। যদি সফল হই, তাহলে অন্তত শান্তিতে একটু ঘুমাতে পারব। নইলে অশান্তিতে ছটফট করতে হবে। ঘুম হওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। আমি বললাম, তোর কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারছি না। সংক্ষেপে বল কী হয়েছে। খুব ঘুম পাচ্ছে। বন্ধু বলল, একটা বই বের করেছিলাম। প্রকাশক তখনই বলেছিল যদি পাঠকের আগ্রহ না দেখে, তাহলে নাকি স্টলের ডিসপ্লে থেকে নামিয়ে রাখবে। দুঃসংবাদ হচ্ছে, মেলা শুরুর পর থেকে আজ পর্যন্ত কেউ নাকি বইটা ছুঁয়েও দেখেনি। এদিকে প্রকাশক বই নামিয়ে ফেলার সিদ্ধান্তে অটল। তাই আমি সারা দিন একশজনকে কমপক্ষে ফোন দিয়েছি যাতে মেলায় যায় আর... বন্ধুর কথা শেষ হওয়ার আগেই আমি বললাম, তার মানে তুই বলতে চাচ্ছিস আমি যাতে মেলায় যাই এবং তোর বইটা কিনি, তাই তো? বন্ধু বলল, কেনারও দরকার নেই। তুই শুধু বইটা উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে দেখে চলে আসবি। প্লিজ। যাতে প্রকাশক বোঝে বইটার প্রতি পাঠকের আগ্রহ আছে। তুই ‘না’ করিস না বন্ধু। কালকে একবার যা মেলায়। রিকশা ভাড়া আমি দেব। আমি বললাম, যেহেতু কেউ তোর বই এখন পর্যন্ত ছুঁয়েও দেখেনি, নিশ্চয়ই বইটার ওপর প্রচুর ধুলা জমেছে। ধুলাগুলো তো আমার হাতে লাগবে, তাই না? অতএব শুধু রিকশা ভাড়া দিলে হবে না। হ্যান্ডওয়াশ কেনার টাকাও দিতে হবে। ঠিক আছে? বন্ধু ‘ঠিক আছে’ বলে ফোন রাখতেই আমি ঝেড়ে একটা ঘুুম দিলাম। সকালে এই ঘুম ভাঙল আরেকজনের ফোনে। সেও আমার বন্ধু। একটু দূরের বন্ধু আরকি। তো এই দূরের বন্ধু জিজ্ঞাসা করল, ক্রেতা অধিকার আইন তো খুব স্ট্রং, তাই না? আমি বললাম, অবশ্যই স্ট্রং। কেন, কী হয়েছে? বন্ধু বলল, আমার এক লেখকবন্ধুর উপর্যুপরি চাপাচাপিতে অতিষ্ঠ হয়ে তার লেখা একটা বই কিনেছিলাম। কিনেছিলাম বলতে কিনতে বাধ্য হয়েছিলাম। এখন বইটা পড়তে বসে দেখি লেখার মান লজ্জাজনক লেভেলের। এই যে ক্রেতা হিসেবে আমি ঠকলাম বা আমাকে ঠকানো হলো, আমি এর বিচার চাইব ভাবছি। আমি চিকন একটা বুদ্ধি বের করে বললাম, আগামীকাল তোর এই লেখকবন্ধু যখন লেখক লেখক ভাব নিয়ে অটোগ্রাফ দেওয়ার জন্য স্টলে বসবে, তুই তখন যাবি বইটা ফেরত দেওয়ার জন্য। এতে সে যে বিব্রতকর অবস্থায় পড়বে, তাতে তার থোতা মুখ ভোঁতা তো হবেই, জীবনে আর কাউকে জোর করে নিজের বই কেনাবে না। হঠাৎ করেই খবর এলো আমার এক ছোট ভাইকে নাকি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সে মেসে থাকত। তো তার বাপ-ভাই আমাকে খবরটা দিতেই আমি বললাম, কোনো টেনশন করবেন না। আমি পত্রিকায় নিখোঁজ সংবাদ ছাপানোর ব্যবস্থা করছি। এরপর আমি যেই পত্রিকা অফিসে গেলাম নিখোঁজ সংবাদ ছাপানোর জন্য, অমনি সেই ছোট ভাইয়ের ফোন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কীরে, কই তুই? ছোট ভাই বলল, ভাই, আমি ইচ্ছা করেই নিখোঁজ হয়ে আছি। আমি অবাক হয়ে বললাম, ইচ্ছা করে নিখোঁজ হয়ে আছিস মানে? কী হয়েছে বল তো! ছোট ভাই বলল, আসলে হয়েছে কী ভাই, আমি যে মেসে থাকি, এই মেসের একাধিক মেম্বারের বই বের হয়েছে। তারা আমাকে অতিষ্ঠ বানিয়ে ফেলেছে তাদের বই কেনার জন্য। তাই গা ঢাকা দিয়েছি। মেলা শেষ হওয়ার আগে আত্মপ্রকাশ করছি না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর