সোমবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

লোক, শোক ও কোকময় ভালোবাসার গল্প

ইশতিয়াক আহমেদ

লোক, শোক ও কোকময় ভালোবাসার গল্প

এক জীবনে ভালোবাসা নিয়ে লিখতে লিখতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। আমি যে পরিমাণ শব্দ ভালোবাসার পেছনে ব্যয় করেছি, সে পরিমাণ ভালোবাসা যদি শব্দ করে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ত তাহলে পৃথিবীর অনেক সমস্যা দূর হয়ে যেত।

অনেকের দাবি ভালোবাসা এখন আগের মতো নেই।

আমি এই দাবির সঙ্গে বরাবরই দ্বিমত। আগেও ভালোবাসা তার আগের মতো ছিল না।

ভালোবাসা বিষয়টা সময়ের হিসেবে চলে। সময় যত অস্থির, ভালোবাসাও তত অস্থির হয়। ভালোবাসার জন্য মানুষ তত অস্থির হয়ে ওঠে। আবার ভালোবাসা থেকে বের হওয়ার জন্যও মানুষের অস্থিরতা কম না।

একটা গল্প জানি, একজন লাস্যময়ী তরুণী কার্ডের দোকানে গিয়ে ভ্যালেন্টাইন ডে-তে প্রেমিককে দেওয়ার মতো সবচেয়ে সুন্দর কার্ডটি দেখতে চাইল। দোকানি একটি কার্ড বের করে আনল। তাতে লেখা, আমি ভালোবাসি তোমাকে, শুধুই তোমাকে।

মেয়েটির কার্ডটি দেখে খুব পছন্দ হলো এবং সে দোকানিকে বলল, আমাকে ২৫টা কার্ড দিন।

যদিও তাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। দোষ যদি দিতে হয়, স্বামী বিবেকানন্দকে দিতে হবে। তিনি মানুষকে শিখিয়ে গেছেন, জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।

আর এ কথা সত্য যে, ভালোবাসা ছিটালে লোকের অভাব হয় না।

 

আমি জীবনে বহু কঠিন ভালোবাসা দেখে বড় হয়েছি। অ্যানালগ এবং ডিজিটাল। দুই সময়ই দেখেছি।

অ্যানালগ সময়ে সবচেয়ে কঠিন ভালোবাসা ছিল, আমার বন্ধু মামুনের। সে ঘণ্টার পর ঘন্টা ফোন ফ্যাক্সের দোকানে বসে কথা বলত তার প্রেমিকার সঙ্গে। একদিকে ফোন ধরে বাঁকা হয়ে বসতে বসতে তার ঘাড়ও বাঁকা হয়ে গিয়েছিল।

সেই মেয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে তার কয়েক বছর হলো। সবচেয়ে বেদনার কথা, তার স্ত্রী মানে সেই মেয়ের সঙ্গে এখন সবচেয়ে বেশি ঝগড়া হয়, মামুন কেন ঘাড় বাঁকা করে রাখে এ বিষয় নিয়ে।

ডিজিটাল সময়ে এসে সবচেয়ে গভীর প্রেম দেখেছি আমার সাবেক কলিগ ফয়সালের। সে একটা ফেক আইডির সঙ্গে প্রেম করে। রিয়েক্টে রিয়েক্টে প্রেম। কমেন্টে কমেন্টে প্রেম। প্রতিদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফয়সাল এবং তার ফেক আইডির প্রেমিকা অনলাইন হয়। লাইক দেয়। লাভ রিয়েক্ট দেয়। কমেন্ট করে। রিপ্লাই দেয়। তারপর আবার অফলাইন হয়ে যায়।

আমি এই প্রেমকে সবচেয়ে শ্রদ্ধার চোখে দেখি। এই সন্দেহের পৃথিবীতে ফয়সাল তামিল নায়িকার ছবি দেওয়া একটা আইডিকে সন্দেহ করছে না। তার প্রেম কতটা গভীর হলে এটা সম্ভব। ভেবে চোখ ভিজে আসে। শোকগ্রস্ত হই।

ভেজা চোখ নিয়ে বেশিক্ষণ লেখা যায় না। সব ঘোলাটে লাগে। অস্পষ্ট দেখা যায়।

তাই একটা প্রেমের গল্প বলে লেখাটা শেষ করি।

ভ্যালেন্টাইন ডে-তে এক প্রেমিক গেছে রেস্টুরেন্টে। উদ্দেশ্য ওই রেস্টুরেন্টের সুন্দরী ওয়েট্রেসকে প্রেম নিবেদন করা। সুন্দরী ওয়েট্রেস এগিয়ে এলো। জানতে চাইল, কি দেব আপনাকে? ছেলেটি বলল, একটা কাটলেট, কোক আর...

মেয়েটি বিস্মিত হলো। জানাতে চাইল, আর?

ছেলেটি কাচুমাচু হয়ে বলল, আর তোমার মুখ থেকে দাও কোনো ভালোবাসার বাণী যা শোনার জন্য আমি যুগ যুগ ধরে অপেক্ষা করছি।

সুন্দরী ওয়েট্রেস অর্ডার নিয়ে চলে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই কাটলেট আর কোক তার টেবিলে নামিয়ে রাখল।

এবার উদগ্রীব প্রেমিক ছেলে বাড়িয়ে দিল গলা কিছু শোনার অপেক্ষায়। বলল, কোনো ভালোবাসার বাণী...?

সুন্দরী ওয়েট্রেস এবার মোহনীয় ভঙ্গিতে মাথা নামিয়ে আনল  প্রেমিকটির কানের আছে। তারপর ফিসফিস করে বলল, কোকটা খাও শুধু। কাটলেটটা খেও না। ওটা দুই দিন আগের।

সর্বশেষ খবর