আমার এক ছোটভাই বলল, আজকাল একটু পরপরই বৃষ্টি শুরু হয়। এতে অনেকে বিরক্ত হলেও আমার কিন্তু ভালোই লাগে। কেন ভালো লাগে জানেন? কারণ, এই বৃষ্টির কারণেই বদের হাড্ডিগুলোতে নাকানি-চুবানি খাওয়াতে পারি। অন্য কোনোভাবে কিন্তু এটা সম্ভব ছিল না। আর শুধু নাকানি-চুবানি খাওয়ানো না, বৃষ্টির কারণে এদের বংশবৃদ্ধিও রোধ করা সম্ভব হয়। যেহেতু বৃষ্টির পানি লাগলে ডিম আর ফোটে না। আমি বললাম, তুই কিসের কথা বলছিস, আমি কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছি না। ছোটভাই বলল, আমিও তো বুঝতে পারছি না এখানে না বোঝার কী আছে। আরে বাপু রে, আমি বলছি উকুনের কথা। আমার ঝাঁকড়া চুলে প্রচুর উকুন। শ্যাম্পোতেও কাজ হচ্ছে না। কিন্তু আমি বৃষ্টিতে ভেজার সময় উকুনগুলো কী যে নাকানি-চুবানি খায়! আর উকুনের ডিম বৃষ্টিতে ভিজলে উকুন সম্প্রদায়ের বংশ যে ধ্বংসের মুখে পড়ে যায়, এটা তো নিশ্চয়ই জানেন? নাকি তাও জানেন না? ছোটভাইয়ের প্রশ্নের উত্তরে আমি ‘হ্যাঁ’ বলব নাকি ‘না’ বলব, ঠিক বুঝে উঠতে না পেরে অন্য প্রসঙ্গে চলে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। বললাম, আজকাল বাজারে যেতে ভয় লাগে। জিনিসপত্রের দাম যা বেড়েছে! ছোটভাই বলল, খুব ভালো কথা মনে করেছেন ভাই। এই যে বৃষ্টি, এই বৃষ্টি কিন্তু আপনাকে বাজার-সদাইয়ের ব্যাপারে খুবই সাহায্য করতে পারে। জিনিসপত্রের বাড়তি দামের জন্য আপনার বাজারে যেতে ভয় লাগে, এটাই তো বললেন? আমি ওপর-নিচে মাথা নাড়ালাম। এবার ছোটভাই বলল, আপনি এক কাজ করবেন, ব্যাগ নিয়ে ঠিকই বাজারের দিকে বের হবেন। কিন্তু কিছুই কিনবেন না। মানে একদম খালি ব্যাগ নিয়ে বাসায় ফিরবেন। আমি বললাম, তুই কি পাগল হয়েছিস? খালি ব্যাগ নিয়ে বাসায় ফিরলে লঙ্কাকান্ড ঘটে যাবে না?
ছোটভাই বলল, আরে না, কিছুই হবে না। কেন হবে না, কীভাবে হবে না, সেটা একটু মনোযোগ দিয়ে শোনেন। আপনি খালি-ব্যাগে বাসায় ফিরে ভাবিকে বলবেন, সব সময় তো মরা মাছ কিনি। কিন্তু আজকে কিনেছিলাম জ্যান্ত মাছ। কিন্তু কপাল খারাপ। কারণ, হঠাৎ বৃষ্টি নামার সঙ্গে সঙ্গেই দৌড় দিয়েছিলাম। আর পিছলা খেয়ে পড়ে গেলাম। আমার হাত থেকে পড়ে গেল ব্যাগটা। আর ব্যাগ থেকে বের হয়ে মাছগুলো বৃষ্টির পানিতে সাঁতার কাটতে কাটতে একেবারে বঙ্গোপসাগরে চলে গেল। আমি আর ধরতেই পারলাম না। তাই খালি-ব্যাগে বাসায় ফেরা ছাড়া উপায় ছিল না। জ্যান্ত মাছ। বোঝ-ই তো। আমি এবার হাততালি দিলাম। বললাম, তোর মাথায় কিন্তু ভালোই কুবুদ্ধি আছে। এত বুদ্ধি মানে কুবুদ্ধি নিয়ে ঘুমাস কীভাবে? ছোটভাই বলল, এমনি তো ঘুমাই না, বৃষ্টি আসলে একটু ঘুমাই আরকী। কারণ, একমাত্র বৃষ্টির সময়ই পাশের বাসা থেকে আসা বিকট সাউন্ডটা বন্ধ থাকে। তাও ভালো গুজবটা ছড়ানো হয়েছিল। নইলে বৃষ্টির দিনেও এই সাউন্ডের যন্ত্রণা সহ্য করতে হতো। আমি বললাম, কিসের সাউন্ড? কিসের যন্ত্রণা? একটু কি খুলে বলা যায়? ছোটভাই বলল, অবশ্যই খুলে বলা যায়। আমার পাশের বাসায় যারা থাকে, তাদের একটা এসি আছে। এসি তো না, শ্যালো মেশিন আর কী। এই জিনিস স্টার্ট দিলে এমন শব্দ হতে থাকে, কী আর বলব! শুকনার দিনে যেহেতু এসিটা অনবরত চলতে থাকে, সেহেতু শব্দের যন্ত্রণায় আমাদের পাগল হয়ে যাওয়ার দশা হয়। আর যেহেতু বৃষ্টির দিনে একটু ঠান্ডা পড়ে, সেহেতু এসিটা বন্ধ থাকে। শব্দের যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় না। তবু অনেক সময় বৃষ্টির দিনেও এই জিনিস তারা চালাত। ঠিক তখনই একটা গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হলো। বলা হলো, আপনাদের এসিটা যেহেতু বেশি শব্দ করে, তার মানে এটার ভিতরে এমন কোনো একটা যন্ত্র আছে, যেটা বজ্রপাতের মতো শক্তিশালী। আর বৃষ্টির দিনে যেহেতু বজ্রপাত হয় অতএব এই সময় এসিটা চালালে এটার ভিতরের শক্তিশালী যন্ত্রটা বজ্রপাতটাকে টেনে কাছে নিয়ে আসতে পারে। তখন বড় ধরনের অগ্নিকান্ড ঘটে যেতে পারে। ব্যস, এরপর থেকে বৃষ্টির দিনে তারা এই শ্যালো মেশিন তথা এসিটা চালায় না। আর আমি নাক ডুবিয়ে ঘুমাই। মজাই মজা।