শিরোনাম
শুক্রবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৪ ০০:০০ টা
গল্প

হিযরত

মেহেদী উল্লাহ

হিযরত

অলংকরণ : আহমেদ তারেক

অবশেষে আমরা উভয়েই ফেসবুকে হ্যাশট্যাগ দিয়ে 'দেখা হচ্ছে কাল' ঘোষণায় ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ড থেকে বাস্তব জগতের প্রেমে হিযরত করলাম।

এখানে 'হিযরত' শব্দটা বেখাপ্পা হলেও কোনো এক বন্ধু আমার স্ট্যাটাসে 'হিযরতে শুকরিয়া' কমেন্ট করার পর শব্দটা মাথায় গেঁথে গেছে। সে সহ আমার আর ফারিয়ার ফ্রেন্ডলিস্টের অনেক বন্ধুই আমাদের ফেসবুক প্রেমের হিস্টোরিটা জানে। এমন অনেক প্রেমই এখন ফেসবুকে হচ্ছে, ভাঙছে, জড়িত হচ্ছে, ওখানেই সীমাবদ্ধ। আমরা ব্যতিক্রম এই কারণে টানা একমাস সতের দিন ফেসবুকে প্রেম করার পর বাস্তবে মিট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাই কমেন্টে ফ্রেন্ডদের ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একটাই কথা, আমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।

আমার আর ফারিয়ার ফিলিং 'শান্তি শান্তি' কিনা জানি না, তবে আমার 'তর সইছে না' এমন অনুভবে উত্তরার ভূত রেস্টুরেন্টে সেকেন্ড গুনছি- এই বুঝি ফারিয়া এলো। এখানে তার জন্য আরও একটা চমক আছে। সে এসে খানিক রেস্ট করার পর হঠাৎ বাতি নিভে যাবে এবং দু'এক জন ভূত এসে আমাকে আর তাকে ভেংচি কাটবে, প্রেমের শিহরণের সঙ্গে ভয়যুক্ত হলে রোমান্টিকতা আরও প্রবল হয়, সে জন্য এখানে বসা।

একটু বাদে 'ও ইউ ফারিয়া' আমি একথা বলে ওঠার পার আমার আর বুঝতে বাকি থাকে না ফারিয়া এসে গেছে আর আমার অপেক্ষা স্টপ।

আমরা এর আগে কেউ কারও পুরো শরীর দেখার সুযোগ পাইনি। ফেসবুকে শুধু প্রোফাইল পিকচারে যেটুকু 'পাসপোর্ট সাইজ' দেখা যায় সেটুকুই। একালে কোনো নারীর রূপ বর্ণনা করাটা আমার দিক থেকে উচিত নয় বিধায় শুধু এটুকু বলে রাখছি, ফেসবুকে ফারিয়ার ছবিটা দেখে বুঝিনি আজ তাকে এরকম দেখব!

আরও কিছুক্ষণ ভাষাহীন কাটানোর পর দেখলাম ফারিয়া ভূতের ভয়ের আগেই অন্য কোনো ভয়ে ঘাবড়ে গেছে, ঠিক ভীত নয়। আমি তাকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করলাম, 'দেখ, আমার ডান হাতটা যে নেই এটা আগে কখনো তোমাকে বলার সুযোগ পাইনি। আর এ ব্যাপারে আমার কোনো অজুহাতও নাই যে, তোমাকে দেখাতে পারি।'

এবার সে মুখ খুলল, 'না তা নয়, যা তুমি ভাবছ, আমার অবাক লাগছে এই ভেবে, তোমার হাত না থাকলেও শার্টের ফ্লোরাল মোটিফের হাতাটা কত জীবন্ত! আই মিন লাইভ।

সে একটা আঙ্গুল আমার শার্টের হাতার দিকে তাক করে আবার তৎক্ষণাৎ নামিয়ে নিল, তার কথাটায় এত ঝলক যে, মুহুর্তের জন্য আমার চোখ ঝলসে গেছিল বলে আঙ্গুলটা চিনতে পারিনি।

এরপর 'আগডুম বাগডুম' নানা কথার একপর্যায়ে সে জানাল, ফেসবুকের মতোই আমার প্রতি তার ভালোবাসা একইরকম অটুট আছে। আর বাস্তবে আমার কথাবার্তা আর ইমোশনও নাকি ফেসবুকের মতোই- বেশকম নেই।

ফলে বাস্তবেও আমি তাকে ভালোবাসাসমেত লাইক সিম্বলটি দিলাম।

আর একটু পর যৎকিঞ্চিৎ খাবারের অর্ডার দিলে আমাদের পূর্ণ মনোনিবেশ হলো। এবার সে তার ডান হাত বাড়িয়ে দিল আমার বাম হাতের দিকে, জীবনে প্রথমবারে মতো যতদিন বাঁচব প্রেমে শান্তি বর্ষিত হবে মর্মে আমরা একে অপরের হাত ছুঁয়ে প্রমিজ করব- বুঝতে পারছিলাম তার ইমোশন। জীবনে এই প্রথম আমি ডান হাতটার তাগিদ অনুভব করলাম। তার জন্য অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, আমি আমার প্রেমিকার দক্ষিণ হস্তের সমর্থনে নিজের দক্ষিণ হস্তই প্রসারিত করতে সক্ষম হয়েছি।

কিছুই করতে হয়নি আমাকে, শুধু শার্টের ভিতর থেকে ডান হাতটা বের করে এনে রঙ্গ করা বন্ধ দিলাম।

এবার সে রেস্টুরেন্টটা মাথায় তুলে খুশিতে চিৎকার করল, 'তোমার হাত!'

আমি বললাম, 'আছে'।

'আছে'টা অবশ্যই হ্যাশট্যাগযুক্ত, তার উচ্ছ্বসিত আবদার।

দুই.

রাতে চারটা-পাঁচটা পর্যন্ত ফেসবুকে জেগে থাকা আমার অনেকদিনের অভ্যাস। তারপর বিছানায়। কখন হঠাৎ দরজা-জানালা হয়ে ফজরের আজানের আরবি সুর ঢুকে পড়ে রুমে। মশগুল হয়ে শুনি, 'ঘুম হইতে নামাজ উত্তম'-এর আরবি ধ্বনি, তারপর সত্যিই মজে যাই। ইদানীং আজান শেষ হলে শহরটা কেমন জানি আরও নীরব হয়ে ওঠে, শেষরাতের নীরবতা আর তখনই শিয়রে কে যেন প্রতিদিন একই কথা তেলাওয়াত করে শোনায়। না ঘুমজাগরণে কানে প্রবেশ করে কথাগুচ্ছ, তার সঙ্গে আমিও শিশুর প্রথম বর্ণমালা শেখার সময়কালীন হাত ঘোরানোর মতো করে যেন মুখ ঘোরাই-

অবশ্যই এই শহরে আমি সুন্দরতম অবয়বে পয়দা হয়েছি এবং ফারিয়ার দিদার লাভ করেছি। এখন অকৃতজ্ঞতার কারণে আমি চিন্তার সর্বনিম্নস্তরে নিক্ষিপ্ত হতে চাই না। দেশভাগ শ্রেষ্ঠ বিচার নয় কি? এই শহর কি আমাকে একরূপ এতিম অবস্থায় পায়নি- অতঃপর সে আমাকে আশ্রয় দিয়েছে। সে কি আমাকে এমন অবস্থায় পায়নি যে, আমি বিব্রত ছিলাম, অতঃপর সে আমাকে সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছে। সে কি আমাকে নিঃস্ব অবস্থায় পায়নি, অতএব সে আমাকে অমুখাপেক্ষী করে দিয়েছে।

এভাবে রোজ রোজ একই ধ্বনি শুনতে শুনতে আমি প্রায় প্রায় সিদ্ধান্ত নিই, আমি কখনো এ শহরে নতুন আগতদের প্রতি জুলুম করতে পারি না, আমি এখানে থেকে তাদের প্রতি এই শহরের অনুগ্রহসমূহ বর্ণনা করে যেতে চাই।

সিদ্ধান্ত নিতে নিতে না নিয়ে আমি ঘুমিয়ে পড়ি, ঘুমোতে থাকি, উঠি রোজ দশটায়।

তিন.

ফারিয়া অলরেডি আমাকে বলেছে, সবচেয়ে বড় কথা সে যেতে চায় না। সে চ্যাটে জানায়, তার দাদা রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ২৫ মার্চ রাতে শহীদ হয়েছেন, তার বেড়ে ওঠার স্মৃতিসমূহ অক্টোপাস, সে মানিয়ে নিয়েছে সবকিছুতে, আসলে তার মানিয়ে নেওয়ার কিছু নেই, তার সঙ্গেই বরং সবকিছু মানিয়ে নিয়েছে, সে আজন্ম তার মতোই আছে। এমনকি তার ছোট ভাইটা যেদিন জন্মদিন সেদিনই তার মৃত্যুদিন। তাকে তাদের বাসার সামনেই বাগানটার পুবপাশে কবর দেওয়া হয়েছে। দাদার লাশটা পাওয়া যায়নি, নইলে নাতিকে দাদার কবরের পাশেই রাখা হতো। সে বার বার আমাকে যুক্তিসমূহ ট্যাগ করে এবং সচেতনতা বাড়াতে চায় আর অমূলক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে উপদেশ দেয়।

এখন মনে হচ্ছে, তাকে জানানোটাই বিরাট ভুল হয়েছে। নিজের সিদ্ধান্ত মেনে নিজেই করণীয় ঠিক করা উচিত ছিল। প্রেমতো প্রেমই, তারপর আর কিছু থাকলে ভালো, না থাকলে ক্ষতি নাই।

ফারিয়া আমাকে আরও বলে, 'এমন শহর আরও বাড়ানো উচিত। গ্রাম-শহর নয় ব্যাপারটি, সব হলো নাগরিক সেবামূলক ইলিমেন্ট, আধুনিক ব্যবস্থায় জনগণের অধিকার, তারা যেখানেই থাকুক পানি-বিদ্যুৎ-গ্যাস-চিকিৎসা-আবাসন-যোগাযোগ ইত্যাদির যুগোপযোগী ব্যবস্থা তাদের নাগালে পৌঁছে যাবে- দেশের এখতিয়ারের মধ্যেই পড়ে সব।

আমি বুঝতে পারি, আমার প্রস্তাবটা কোনো দিন কল্পনায়ও আসেনি নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষক ফারিয়া ফারনাজের। সে যাই হোক, আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল। আমি তার ছাত্র নই, প্রেমিক।

বাসের মধ্যে অন্ধ ছেলেটা নাতে রসুল শুরু করল, 'নবী মোর পরশমণি, নবী মোর সোনার খনি, নবী নাম জপে যে জন সেই তো দোজাহানের ধ্বনি।' কী মিষ্টি কণ্ঠ, চোখের পাওয়ার গলায় পুষিয়ে গেছে। সবই খোদার লীলা খেলা! আমি তাকে পাঁচ টাকা ধরিয়ে দিতেই সে আমার জন্য দোয়া করল এই বলে, আল্লাহ যেন আমাকে হায়াতে তইয়্যবা দান করেন। আমি তাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করলাম, 'না, এই দোয়া না, অন্য কোনো দোয়া থাকলে করেন।' সে তার মতো অন্য হাতের দিকে যাত্রা করল, আমি ভাবলাম, বেশি দিন বেঁচে কী হয়!

আমি ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত। ফারিয়ার সঙ্গে প্রেমটা না হলে তো নিজেকে বলতাম, আমি ক্লান্ত প্রাণ এক।

অন্ধ আলোর বদলে টাকা তুলে বিদায় নেওয়ার পর উঠলে তাবিজ বিক্রেতা। শুরুতে প্রকাশ্যে 'গোপন' রোগের ওষুধ বেচল আর তাপর বলল, 'আসল চমক রইচে। এই যে, এইটা হইলো সেই তাবিজ, সব বালা-মুসিবত দূর করে। এই তাবিজখানা সঙ্গে থাকলে বেঁচে যাবেন, বেঁচে যাবেন ছিনতাই হওয়া থেকে, আপনি এই তাবিজ পরে যেই বাসে উঠবেন, সাঁই সাঁই করে বাস চলে যাবে, জ্যাম থাকবে না, বাসার সামনে কিংবা ভিতরে কেউ গলা কাটতে আসলেও টের পেয়ে যাবেন, এই রকমের যত মুশকিল আছে, এই তাবিজ সব আসান করে দিবে। কারও লাগবে ভাই? লাগবে?'

আমার পাশের সিটে বসা ভদ্রলোক যেই না একটা তাবিজ কিনলেন আর ওমনি বাসটা ছেড়ে দিল, জোরে টান দিল ড্রাইভার, সত্যিই সাঁই সাঁই করে চলে যাচ্ছে। দরজা টপকে নেম গেল তাবিজওলা। টাসকি খেয়ে চোখসব তাবিজের দিকে। কী গুণ!

চার.

আমার সিদ্ধান্তের প্রতি ফারিয়ার যথাযোগ্য সম্মান আছে, তবে সে সিদ্ধান্ত বদলের জন্য আমাকে চিন্তাগতভাবে সাহায্য করছে, নানাভাবে বোঝাচ্ছে। আমার সিদ্ধান্ত বদল হতে হতে হয় না। আমার মন উঠে গেছে অথবা হতে পারে আমি সারভাইভ করতে ভয় পাচ্ছি।

আমি জানি না, ফারিয়া এসব কথা কই পায়। তবুও সে আমাকে বোঝায়-

এই শহর কি তোমার জ্ঞান ধারণের জন্য তোমার বক্ষ উন্মুক্ত করে দেয়নি? সেই তো তোমার ওপর থেকে তোমার বোঝা নামিয়ে দিয়েছে। কী দেয়নি? আমি আবার মাথা নেড়ে বুঝিয়ে দিই যে, সত্যিই দিয়েছে। সে আরও যোগ করে, এমন এক বোঝা যা তোমার পিঠ নুইয়ে দিচ্ছিল, সেই তোমার স্মরণকে সর্বোচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আর হ্যাঁ, জ্যাম, ফ্লাইওভারগুলো হলে আর থাকবে না, তুমি শুধু অবিরাম জ্যামের ব্যাপারে সাবধান থেক।

ফারিয়ার উপদেশ শেষ হয় আবার শেষ হয় না, শেষ রাতে সে আবার আসে। কে? শিয়রের সেই ব্যক্তি না ফারিয়া? চিনতে পারি না, তবে বলে যায়-

এই খারাপ সময়ের শপথ, এই শহরের মানুষ অবশ্যই ক্লান্তি-পরিশ্রান্তি ও নিঃসঙ্গতার মধ্যে নিমজ্জিত আছে, সেই লোকগুলো বাদে, যারা এই বলে অকৃতজ্ঞ হয় না, এই শহর তো তাদের থাকা ও খাওয়ার সুন্দরতম ব্যবস্থা করেছে, ফলে একে অপরকে তারা ধৈর্য ধারণ করার উপদেশ দিয়েছে। এবং দিন শেষে বলে না শহরটা বিশ্রী, জঘন্য। আসলে মানুষকে এক কঠোর পরিশ্রমের মাঝে পয়দা করা হয়েছে।

শেষ রাতের এই যে ডিস্টার্ব, ঘুমাতে পারি না, দিনে ফারিয়া আর রাতে অজ্ঞাতকুলশীল ব্যক্তির যন্ত্রণায় ঘুম হারাম। এই তো, মাত্র ছয় বছর আগে আব্বার সঙ্গে রাগ করে বাড়ি থেকে পকেটে শুধু ভাড়ার টাকাটা নিয়ে এই শহরে হিযরত করার আগে কি সুন্দর দিন কাটাতাম, ঘুমাতাম 'সন্ধ্যা' দশটায়, উঠতাম রাত 'ছয়'টায়। তারপর ক্লান্তি এঙ্প্রেসে যাত্রারম্ভ। কেনই বা এই শহরেই এলাম? এসেই যখন পড়েছি তখন কি করব ঠিক করতে পারছিলাম না, শহরই যেন সব ঠিক করে রেখেছিল। কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিতে শুরু করলাম, টিউশনি করলাম, সাংবাদিক, কবি-সাহিত্যিকদের সঙ্গে পরিচিত হলাম, পত্রিকায় ফিচার লেখা শুরু করলাম আর এখন সাংবাদিকতা। কত সহজে একবাক্যে লিখে ফেললাম এখন অথচ বোঝা নামানোর কষ্টকথা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি পৃষ্ঠার মহান সাহিত্যকর্মটার সমান হবে, বেশিও হতে পারে। সত্যিই 'অতঃপর সে আমাকে আশ্রয় দিয়েছে।'

পাঁচ.

অবশেষে হ্যাশট্যাগযুক্ত করে 'আমি সিদ্ধান্ত বদলালাম' স্ট্যাটাসটি দিয়ে আমি আর ফারিয়া আজ পুরান ঢাকার দেখার মতো জায়গাসমূহ ঘুরে দেখতে বের হলাম। সব তো আর একদিনে শেষ হবে না, ধীরে ধীরে। আজ তবে শাঁখারিবাজার। শাঁখা বানানো দেখব দুজনে। গলি দিয়ে ঢোকার মুখে দেখি সেই ভদ্রলোক, যাকে বাসে তাবিজ বিক্রি করতে দেখেছিলাম মাস কয় আগে। তিনি লো হাইটের একটা কাঠের পাটাতনে পবিত্র কোরআন শরিফ বিক্রি করছেন। নিজে বসেছেন একটি চটের বস্তায়। শাঁখারিবাজারে মহাগ্রন্থ আল-কোরআন পড়বে কে? থাক সে কথা! তাবিজওলাকে আমি চিনি। ওনার নাম শহিদুল্লাহ। আমাদের গ্রামের মানুষ তিনি। ছোটবেলায় এই শহীদুল্লাহকে আব্বা প্রায়ই বলতেন, 'আর কয়দিন কাজ-কাম না কইরা থাকবা, কিছু চালান পুঁজি জোগাড় কর, চলো একটা প্রকাশনী খুলি। আমি ছাপাব তুমি বেচবা। পারবা না? আর হ্যাঁ, নামটা কিন্তু হবে বিউটি প্রকাশনী। অদূরে কাজের মধ্যে থাকতে থাকতে আম্মা হাসতেন। আমার আম্মার ডাক নাম বিউটি। সেই শহীদুল্লাহ চাচা আজ আমার সামনে জীবন্ত বিস্ময়, আমাকে দেখলেও চিনবেন না, আমি অনেক পাল্টে গেছি।

রাতে ঘরে ফিরে ফেসবুক ওপেন করে দেখি, অনেকেই জানতে চেয়েছে, কী সিদ্ধান্ত বদলাইলাম। আমি তাদের এবং এই গ্রহের মানুষদের উদ্দেশ্যে বাংলা ভাষায় কমেন্ট করলাম, 'ফারিয়া আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিলে আমি তাকে একটা শর্ত দিই। শর্তটি হচ্ছে, বিয়ের পর আমার সঙ্গে তাকেও এই শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যেতে হবে। সে রাজি হয়নি, উল্টা দিন দিন আমাকে অনুধাবন করতে শিখিয়েছে, শহরটা ভালো আর শহরের প্রতি আমার কৃতজ্ঞ থাকা উচিত। আমি কেন শহর ছেড়ে যেতে চেয়েছি তার অনেক কারণ থাকলেও আজ আমার সামনে একটাই কার্য- এই শহরে অবশ্যই আমাদের পরবর্তীকাল আগের চেয়ে উত্তম হবে।'

মানুষের হিযরত হয়নি, মানসিকতার হিযরত হয়েছে।

 

 

 

সর্বশেষ খবর