শুক্রবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
গল্প

মুক্তিযুদ্ধের ঘাসফুল ও রাইফেল

মুজতবা আহমেদ মুরশেদ

মুক্তিযুদ্ধের ঘাসফুল ও রাইফেল

শিল্পকর্ম : শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন

এপ্রিলের ২ তারিখ। প্রচণ্ড গরমেও ঘুম থেকে উঠতে ইচ্ছে করছে না। ঘুম ভাঙলেও বিছানা ছাড়তে ইচ্ছে করছে না। আড়িমুড়ি দিচ্ছি। ঘরের ভিতর আলো। মাথা ঘুরিয়ে দেখি ঘরে কেউ নেই। বালিশের তলে হাত দিয়ে নিমের দাঁতনটা বের করলাম। শোবার সময় দাঁতনটা বালিশের তলেই রাখি। প্রতিদিন সকালে নিমগাছের ডাল ভাঙা অনেক কষ্টের। একটা দাঁতনই অনেক দিন চালাই। সেই দাঁতনটাই বালিশের নিচে না রাখলে সকালে পাওয়া মুশকিল। দাঁতনটা যে কেউ মাটিতে ফেলে দিতে পারে। নিমের দাঁতন হারালে দুধিয়া গাছের দাঁতন ব্যবহার করা যায়। কিন্তু ছোট ছোট দুধিয়া গাছের গোড়ায় সবাই পেশাব করে। পুকুর পাড়েরগুলোতে তো সব সময় এ কাজ চলছে। জেনে বুঝে কে এই গাছের দাঁতন ব্যবহার করে! ফলে নিমের দাঁতন সবচেয়ে ভালো। দাঁতনটা হাত দিয়ে হাতড়ে নিয়ে দাঁতের কামড়ে ব্রাসের মতো বানাতে বানাতে ঘরের বাইরে এলাম।

ঘরের বাইরে এসেই দেখি টুকটুকে লাল শার্ট পরা আমার বয়সী একটা ছেলে বারান্দায় বসে। অসম্ভব ফর্সা। খাড়া নাক। টানা টানা খয়েরি রঙের চোখ। কি জানি কি হলো, ছেলেটা আমার দিকে মাথা ফিরিয়ে তাকালো। আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে! ছেলেটার কাছে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গে আমার নাকে বিকট পচা গন্ধ লাগলো। মনে হলো বমি করে দিব। ছেলেটা নির্বাক। পলক নেই চোখে। আমি ওর কাছ থেকে সরে গেলাম। উঠোন পেরিয়ে কলপাড়ে যাচ্ছি। কলপাড়ে বক্কর খান কুলি করছে। বক্কর খানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, চাচা, ছেলেটা কে?

পাঞ্জাবি অফিসারের ছেলে। ঠাকুরগাঁওয়ে পাকিস্তানি অফিসারদের মারার পর ছেলেটা রক্তের ভিতর পড়ে ছিল। গতকাল ওখান থেকে উদ্ধার করে কাল রাতে এখানে আনসি বেটা। তোমার আব্বা আনসে। কালকে স্যার খুব মন খারাপ করছে। অই যে বারোটা অফিসারকে ফায়ার করার হুকুম দিয়ে স্যারের মন খুব খারাপ। কাল দুপুরে এ ছেলেটাকে আর্মি কোয়ার্টারে রক্তের মধ্যে থেকে উদ্ধার করে আরও মন খারাপ।

ওর কি নাম চাচা?

ইয়াসিন খান। ছেলেটা কথা বলে না। একবার শুধু ইয়াসিন বলছে।

আমি ইয়াসিন খানের কাছে গেলাম। ওর সামনে নাশতার থালা। পিঠা, মুড়ি, পায়েস দেওয়া। ও চুপ করে বসে আছে। খাচ্ছে না। আম্মা আদর করে বলেছে, খাও বেটা। নেও খাও। ভুখা হো তুম। খাও।

বুবুও কোমল স্বরে অনুরোধ করছে, তুম খাও।

ইয়াসিন কোনো কথা বলছে না। আম্মা বা বুবু যখনই ওকে খাবার জন্য অনুরোধ করছে, তখুনি ও শুধু একবার করে ওদের দিকে পূর্ণ চোখে তাকাচ্ছে। তাকিয়েই আছে। কোনো কথা বলে না। আম্মার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে শুরু করে। আমি ইয়াসিনের দিকে তাকিয়ে আছি। ও মুখ নিচু করে নিল। মুখটা নিচু রেখেই চোরা চোখে আমাকে দেখছে। আমিও ওর দিকে তাকিয়ে। কিন্তু কোনো কথা নেই। আম্মা আবারও চেষ্টা করল খাওয়াতে। ইয়াসিন হাতটা বাড়িয়ে থালা থেকে অল্প একটু মুড়ি তুলে নিল। হাতটা মুখের কাছে এনে চুপ করে থাকলো। হাতটা মুখের কাছে ধরেই আছে। আম্মা আদর করে বললো, খাও বেটা। খাও। তুম তো ভুখা হো না, খাও।

ইয়াসিন আস্তে করে ক'টা মুড়ির দানা মুখের ভিতর ঠেলে দিল।

ইয়াসিনের দিকে তাকিয়ে আছি। তুমি খেলতে যাবে?

ও শুধুুই তাকিয়ে থাকলো। তারপর একটু মাথা নেড়ে না বোঝাতে চাইলো। আবার মুড়ি মুখে দিল। এবার একটু পায়েসও। তারপর আপেলের একটা টুকরা। আমার নাকে ওর গায়ের পচাটে গন্ধটা খুবই লাগছে, তবুও উঠোনে দাঁড়িয়ে ওর কাছেই আমি। মনটা কেমন খারাপ লাগছে। ওর কাছে বসে আছি। মনে হচ্ছে ওর গায়ের পচাটে গন্ধে ওখান থেকে চলে গেলে ও হয়তো দুঃখ পাবে। আমি ওর বাঁ হাতের আঙ্গুল ধরলাম। ইয়াসিন চোখ মেলে করুণভাবে আমার দিকে তাকালো। শোবার ঘর থেকে আব্বা বেরিয়ে এসেছেন। ইয়াসিনকে ঘিরে আমাদের দেখে বিষণ্ন মুখে ইয়াসিনকে জিজ্ঞাসা করলেন, বেটা ইয়াসিন, তুম মেরা ফেমিলিকা সাথ রহোগে?

ইয়াসিন কিছুুই বললো না। নিশ্চুপে আব্বার দিকে তাকালো। আব্বা এবার বক্কর খান চাচাকে উদ্দেশ করে বলে উঠে, বক্কর আজ তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়বো।

স্যার আজ কি ঠাকুরগাঁও যাবেন, না কি দিনাজপুর?

দিনাজপুর দিয়ে ভারত যেতে হবে। ওখানে কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার।

আম্মা জিজ্ঞেস করলেন, তমহারা ইন্ডয়া যাবেন! আর ইয়াসিন? ও কি দকচাইতেই থাকবে?

হু। সংক্ষিপ্ত উত্তর। তারপর আব্বা যোগ করলেন, আমার মনে হয় ওকে রেডক্রসের হাতে তুলে দেওয়াই ঠিক হবে। এটাই বাস্তব পরিস্থিতি। রেডক্রসের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটা উপায় বের করতে হবে।

আব্বার কথার পর কেউ আর বাড়তি কথা বললো না। একটু পরেই বক্কর খান ইয়াসিনকে নিয়ে কলপাড়ে গেল। মতি কল চালাচ্ছে। বক্কর খান ইয়াসিনের গায়ে খশবু সাবান ঘষে দিচ্ছে। ইয়াসিন চুপ করে দাঁড়িয়ে। ফাকাশু মামা ইয়াসিনের গায়ে পানি ঢালছে। গোসল চললো অনেকক্ষণ ধরে। গোসল শেষে আমি এবার ইয়াসিনের কাছে একটু এগিয়ে গেলাম। চুপ করে একটা বড় শ্বাস নিলাম। মনে হলো এখনো গন্ধটা আছে। মানুষের পচা রক্তের গন্ধ যে এতো বিকট হয় আগে কোনো দিন জানা ছিল না। পচা রক্তের গন্ধ মাখা ইয়াসিনের লাল শার্ট বদলে আমার একটা চেক শার্ট পরিয়ে দিল আম্মা। ওকে অন্য রকম লাগছে। পরিপাটি করে চুল অাঁচড়ানো চেক শার্ট গায়ে আমাদের ইয়াসিন।

দুপুর বেলাতেই গ্রামের সব তরুণ নানাবাড়ির সামনের দহলিজে হাজির। সবার হাতে লম্বা বল্লম। মামা ডাবলব্যারেল বন্দুকটা হাতে নিয়ে সবাইকে বন্দুক চালানোর কৌশল শেখাচ্ছে। প্রত্যেকেই বল্লমগুলোকে বন্দুকের মতো ধরছে আর গুলির ভঙ্গি করছে।

তফিদুল ভাই খেক খেক করে হাসতে হাসতে মামাকে জিজ্ঞেস করছে, এ্য বাজি, এইলা বল্লম দিয়ে পোষায় বার্যে? হামার লাগিবে মেশিনগান।

আরে তুই তামতো বাপু। মেশিন গান পাছোত নিস। এলহা কায়দাটা শিখেক।

বল্লম দিয়ে বন্দুকের ট্রেনিং শেষ হলেই বড়ভাই আম্মার কাছে ধরনা দিচ্ছে দিনাজপুর শহরে যাওয়ার জন্য। আম্মা কিছুতেই রাজি না। বড়ভাইর সঙ্গে রৌফ ভাই আর তফিদুল ভাইও যোগ দিয়েছে আম্মাকে পটাতে। কিন্তু ওরা তিনজনে যতই চেষ্টা করুক আম্মাকে পটাতে, কিন্তু আম্মা অনড়। তোমরা কেন যেতে চাচ্ছো? এমনিতেই তোমার আব্বা দিনাজপুর গেছে। ওখান থেকে আবার ইন্ডিয়া যাবে। এরই মধ্যে গেল কিনা কে জানে। কি হয় না হয় কিছুই বুঝতে পারছি না। দিনাজপুর শহরেই যে কি অবস্থা এখনো তার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই, আর তোমরা ওখানে যেতে চাচ্ছ!

আম্মার কথায় বড়ভাই একটু দমলেও তফিদুল ভাই খুবই বোঝানোর চেষ্টা করছে। বেটি, কিছুই হবা নায় বারে। হামরা যামো আর আসিমো। এতা সস্তা না সব কিছু। ওরা অনেক বড় হয়েছে, ওদের কিছুই হবে না। এই সব।

এবার যেন আম্মা একটু স্থির হলো। তাহলে তুমি কেন উনার সঙ্গে গেলে না? তোমার আব্বার সঙ্গে যাওয়াই উচিত ছিল।

তখন ইচ্ছা করে নাই।

বেটি, ছেচায় কিচ্ছ হবা নায় বারে। সাইকেল মারে যাইতে কতক্ষণ! সাঁই করে এক ঘণ্টায় একলে দিনাজপুর!

ঘণ্টাখানেক পর তিনজন তিন সাইকেল নিয়ে রওনা দিল। আমারও খুব ইচ্ছে হচ্ছিল দিনাজপুর যাওয়ার। কিন্তু আমাকে তো আর নেবে না। মনে হলো, ইস ওদের সমান বড় হলে কত সহজেই সাইকেল নিয়ে দিনাজপুর যেতে পারতাম।

নানার বাড়িটাই এখন আব্বার ঘাঁটি। দকচাই থেকে ২০ মাইল পূর্বে দিনাজপুর শহর, আর ত্রিশ মাইল উত্তরে ঠাকুরগাঁও। ফলে জীপে করে সারাদিন দিনাজপুর আর ঠাকুরগাঁওয় ছোটাছুটি শেষে গভীর রাতে এই গ্রামে ফিরে আসে।

এপ্রিলের আজ ৪ তারিখ। আব্বা খুব গম্ভীর মুখে বসে আছে নানার বাড়ির উঠোনে। কি জানি ভাবছে। রশিদ ভাই আর গ্রামের অন্য বয়স্করাও বসে। বেশ কিছু স্থানীয় নেতাকর্মীও আছে। সবার এক জিজ্ঞাসা, কি হবে? কি হচ্ছে, কি করতে যাচ্ছে আব্বা? এ রকমের শত প্রশ্ন। আব্বা ওদের সবার কাছের মানুষ। জামাই। সবাই নির্ভয়েই মন খুলে কথা বলছে।

নানাজনের নানারকম প্রশ্নের মাঝে আব্বাই মুখ খুললেন। সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট তো আমাদের পক্ষে কব্জা করা খুবই মুশকিল। আমাদের সে রকম ভারি অস্ত্র নাই। কিন্তু ওদের চাপের মুখে রাখতে হবে। আমি সে মোতাবেকই অর্ডার দিয়েছি। দশমাইলে ইপিআর আর জনগণ মিলে ডিফেন্স নিয়েছে। দুপক্ষ থেকেই গোলাগুলি হচ্ছে। কিন্তু কোনো রেজাল্ট আসছে না। আমরাও ট্যাঙ্ক ছাড়া মুভ করতে পারছি না। আবার পাকিস্তানিরা সৈয়দপুর থেকে নদী পার হয়ে এদিকে ঢুকতে সাহস পাচ্ছে না।

ভাইসাহেব, ওরা তো ট্যাঙ্ক নিয়ে সরাসরি ঢুকে পড়তে পারে।

পারে। কিন্তু ওরা ওটাকে রিস্ক মনে করে। না হলে তো এই কয়েক দিনের মধ্যেই ঢুকে পড়তো। ভুসিরবন্দর ব্রিজ পার হওয়া রিস্কি। ওদিকে নদীটাও ওরা সরাসরি ট্যাঙ্ক নিয়ে পার হতে পারছে না। কৌশলগতভাবে আমরা এখন বেটার অবস্থাতে আছি। দিনাজপুর আর ঠাকুরগাঁও অনেক সেইফ।

রশিদ ভাই কথা বলে উঠলো, ফুপা আমাদের কোনো ডিনামাইড নেই? তাহলে সৈয়দপুর আর দশমাইলের মধ্যে এসব পুঁতে রাখলে বেটারা আসতেই পারতো না। সেকেন্ড ওয়ার্ল্ড ওয়্যারের সময়ের ছবি দেখিছুনু বা, ডিনামাইড দিয়েই কত সাফ!

আব্বা রশিদ ভাইর দিকে তাকায়। আমাদের কাছে তেমন কোনো এঙ্ক্লোসিভ নেই। কুঠিবাড়িতে যা ছিল সেগুলো মেশিনগান আর মর্টার। রাইফেল। আমি ভারতে গিয়ে বর্ডার পয়েন্টে ওদের বিএসএফের সঙ্গে দেখা করেছি। সুবেদার কাজিমউদ্দিনকে ভারতে রেখে এসেছি আমার প্রতিনিধি হিসেবে। কিন্তু ওরা মেসেজ পাঠিয়েছে আমাকেই যেতে হবে। এটা যেহেতু পলিটিক্যাল সিদ্ধান্ত, তাই আমি না গেলে হবে না।

মামা চকচকে চোখে আব্বার দিকে তাকায়। ভাইসাহেব, ইন্ডিয়া কি আমাদের সাহায্য করবে?

সে রকমই তো মনে হয়। সিগনাল আছে। আমাকে মনে হয় আবার যেতে হবে। এঙ্ক্লোসিভ আনা খুব জরুরি। না হলে আমার ওদের ঠেকাতে পারবো না। ঠিক আছে আমি এখন যাই। আজকে আমি সেতাবগঞ্জ পীরগঞ্জ থানাও পরিদর্শন করবো। ওখানে পরিস্থিতি খারাপ হলে কি ধরনের ডিফেন্স নেওয়া যায় সেটা আলোচনা করবো। তারপর দশমাইলে যাবো।

আব্বা উঠোন ছেড়ে ঘরে গেলেন। এই ফাঁকে বক্কর খানের হাতে ধরা রাইফেল একটু করে ছুঁয়ে দেখছি। এই দেখে বক্কর খান হেসে উঠলেন, খকা তুমি রাইফেল নেবে? থামো আমি তমাকে রাইফেল ধরার কায়দা শিখায়ে দিচ্ছি। এই বলে বক্কর খান কিভাবে রাইফেল ধরতে হয় সেটা বুঝাতে শুরু করলেন। রাইফেলটা বেজায় ভারি। আমি ঠিকমতো তুলতেও পারছি না।

বক্কর খান দিলখোলা হাসি দিয়ে বলে উঠলো, খকা, এইটার ওজন সাড়ে সাত সের। তুমি বরং এই পিস্তলটা নাও।

আমি এবার পিস্তল হাতে নিলাম। কিন্তু এটাও খুব ভারি। বিশাল বড় এক পিস্তল। কিছুতেই হাত সোজা রাখতে পারছি না। শেষে ডান হাতে পিস্তল ধরে, বাঁ হাত দিয়ে ডান হাতের কব্জি চেপে ধরে ব্যালেন্স করা শিখলাম। যেই ট্রিগারে আঙ্গুল দিয়েছি, অমনি বক্কর খান হা হা করে নিষেধ করে উঠলো। খকা, না না। গুলি করিস না। গুলি করলেই ভীষণ ধাক্কা খাবি। এই যে রাইফেল, এইটা দিয়ে গুলি করলে এই, এই যে ঠিক বুকের এই খানে দড়াম করে রাইফেলটা ধাক্কা মারবে। ধাক্কা সামলাতে না পারলে বাবা যুদ্ধ করা যাবে না বলেই আমার ডান বুকের উপর একটা জোরে ধাক্কা মেরে দেখালেন। ধাক্কার চোটে তিন পা টাস করে পিছিয়ে গেলাম। সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।

রাইফেল আর পিস্তল চালানো শেখার মাঝেই আব্বা রেডি হয়ে জীপে উঠলেন। জিপটা স্টার্ট নিয়েছে। ইয়াসিন জীপে উঠছে। পেছনে বক্কর খান রাইফেল হাতে। উনার পাশে মাথায় পিঠে হেলমেট ঝোলানো ঠাকুরগাঁওয়ের সুবেদার কাজিমউদ্দিন। হাতে স্টেনগান। ইয়াসিন জীপে উঠতে গিয়ে আমার দিকে এগিয়ে এলো। আমার একটা হাত ধরে শুধু মাথাটা নাড়লো। কিছুই বলছে না। আমার মনে হলো হয় তো বলছে, খোদা হাফেজ। চলি। আবার দেখা হবে। আমার জন্য দোয়া করো।

প্রতিদিনের মতো গ্রামের প্রায় সবাই জীপটা ঘিরে। আমি আব্বার দিকে তাকাচ্ছি। সবাই আমাদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়াসিন জীপের মাঝখানে গিয়ে বসলো। হাতে ওর লাল শার্টটা নিয়েছে। জীপটা ছেড়ে দিল। একটানেই জীপটা বাড়ির সদর গেটটা পেরিয়ে চলে গেল। আমরা সবাই দাঁড়িয়ে আছি। আমার চোখে ইয়াসিনের লাল রঙের শার্টটা ভাসছে। নীলাভ চোখ দুটো কী মায়াময়! আর তার সঙ্গে ভাবছি, আব্বা ইন্ডিয়া যাচ্ছে কিন্তু ফিরবে কবে?

 

 

সর্বশেষ খবর