অথচ তোমার জন্য বসে থাকি অজুহাতের স্টেশনে—ইচ্ছাকৃত ফেল করে
আহ্নিকগতির ট্রেন! তুমি আসতে চেয়েছো অথবা চাও—এর বেশি কোনো
কিছুই তো ঘটেনি; তোমার আসতে চাওয়াটা কেন এত ব্যঞ্জনা রচে আমারএলোমেলো ভাবনায়—আমি সেও বুঝি না! তুমি যদিবা আসোই—সেও তো
নিজ কক্ষপথে ফিরে যাওয়ার জন্যই আসবে—এতটুকুও রয়ে যাবে না—রেখে
যাওয়ার মতো কিছুই আনবে না সঙ্গে,—তারপরও তোমার জন্য কেন এই
অদ্ভুত অপেক্ষা?
আমি তো গ্রহ-নক্ষত্রের ভিড়ের মধ্যেই থাকি যে ভিড়ে অংশ রয়েছে
আমারও; এমনিতেই ঝালাপালা কান; তো কীসের আবার নতুন ডাক!
অথচ তোমার কণ্ঠ শোনামাত্র কানদুটো ভারকেন্দ্র হয়ে ওঠে! মনে হয়—
মেঘলাকণ্ঠের সিক্তমাধুরী বাড়িয়ে দেয় তোমার মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের পরিধি—
যা ছুঁয়ে ফেলে আমার অন্তরঙ্গ অস্তিত্বের আঙিনা,—বাকি সারাটা সময়
যা রাষ্ট্রীয় ভূগোলের মতো স্থির থাকে লৌহবেড়াহীন সীমান্তে ও সীমানায়!
আমি স্বতঃসিদ্ধের হৃদয় নিয়ে ভেবে দেখি—নিপাতনে সিদ্ধির টিকেট নিয়ে
যদিবা তুমি এসেও যাও, আমার কোনো শূন্যতাই ভরে দিতে আসবে না,
আর আমার তো কোনো শূন্যতাই নেই; সবখানেই থই থই জল; ভদ্র বাতাসের
টোকাও সয় না! তারপরও ভরা নদীটি নিয়ে কেন আমি অপেক্ষায় থাকি—
একখানা মেঘলা আকাশের, কিংবা উজান-উপচানো নবীন ঢলের? আমি কি
নিজের পাড় ভেঙে ছড়িয়ে যেতে চাই—অগন্তব্যের বিস্তারে,—যেখানে যুক্তি-
হীনতার অবাধপ্রান্তর,—অসংসারের হরিণ-উপবন? আমার মধ্যে কে সঞ্চার
করছে এই অগন্তব্যগামী মুক্তির বেগ? আমি তো চাই না এ উড়াল; অথচ
আমার এ প্রার্থনাতেও খাদ রয়ে যায়—‘হে পৃথিবী, হে আমার ডাঙা ও জলের
সবখানি ভালোবাসা, আমাকে ধরে রাখো—বাড়িয়ে দিয়ে তোমার অভিকর্ষীয় টান!’