এই গল্পটা জন্মভূমির, গল্পের ভেতর মাটি ও মানুষ
বিষণ্ন বুড়ো বটগাছ, অস্থির কাঠবিড়ালি, লালমুখো
টিয়া আর উচ্ছল তারুণ্য। বিবর্ণ মেঠোপথ পেরিয়েদোচালা স্কুলবাড়ির এক চিলতে ধূসর স্বপ্নের ভেতর
গল্পটার জন্ম—তার স্নিগ্ধ শরীর জুড়ে কালোমেঘ;
তারও চেয়ে কালো কুচকুচে অন্ধকারে দাবড়ে বেড়ায়
একপাল শিয়াল আর মড়া খুবলে খাওয়া শকুনের মত
একগুচ্ছ ভয়।
এই গল্পটা একাত্তরে নিষ্পেশনে জেগে ওঠা ক্ষুব্ধ জন্মভূমির
পাঁজরের গোঁফওয়ালা মিলিটারি আর কদাকার রাজাকারের
যৌথ তাণ্ডব।
মাটি ও মানুষের ওপর নিষ্ঠুরতা ঠেকাতে অস্ত্র হাতে নেওয়া
ভাইয়ের আদরের ছোট বোনের স্বপ্ন ভাঙ্গার উল্লাসে
মেতেছিল ওরা—
বিপন্ন মানবতার এই গল্পটার বোবাসাক্ষী বুড়ো বটগাছ;
নিরীহ কাঠবিড়ালি; টিয়াপাখির তীক্ষ আর্তনাদ যেন
আকাশভরা শ্রাবণের গর্জন।
এই গল্পটা বিধ্বস্ত জন্মভূমির; অঝোর রক্তের; মায়ের অশ্রুর;
বোনের সম্ভ্রমের; অচ্ছুত ভ্রূণের; মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে আসা
হাড়গোড় কংকালের নৈশব্দের ভেতর কবিতার
খেরোখাতার দীর্ঘশ্বাস!
এই গল্পটা শোকমগ্ন লোকালয় পেরিয়ে ওপারে মুক্তির
ঘননিঃশ্বাস। প্রবল বর্ষা শেষে প্রচণ্ড শীতের ঘন কুয়াশায়
বাজপাখির মতো ক্ষিপ্র যুদ্ধবিমানের শব্দের ভেতর যখন
স্বাধীনতা আসি আসি করছে—যেমন ভাটার টান শুরু হলে
মাথা তুলে দাঁড়ায় জলমগ্ন ঘরের চালা; যেমন
রাত শেষে উঁকি দেয় ভোরের প্রথম আলো—
শোক ও শঙ্কার ঘুলঘুলি গলিয়ে তখন লালসবুজ
টিয়ার মত উড়ে উড়ে নতুন পতাকা
প্রাণে প্রাণে জাগায় নতুন আশা।
এই গল্পটা দেশকে পাগলের মত ভালোবেসে
যুদ্ধে গিয়ে স্বাধীনতা সঙ্গে নিয়ে মায়ের কাছে ফেরা
বীর কী পরম ভক্তিতে মাটিতে ছোঁয়ায় মাথা!
দুচোখে অশ্রু তার; উঠোনে পিতার কবর; বোন নিরুদ্দেশ—
তখন স্কুলবাড়ির দোচালায় আধপোড়া ‘জয়বাংলা’ মাথা তুলে
ছড়ায় বিভা।
আমাদের এই গল্পটা কখনো শেষ হয় না।