শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

নগর ঢাকায় বুদ্ধদেব বসু

মাসউদ আহমাদ

নগর ঢাকায় বুদ্ধদেব বসু

শাহবাগে, জাদুঘরের সামনে লোকটিকে প্রথম দেখে নীতু।

নীলক্ষেত কর্মজীবী মহিলা হোস্টেল থেকে বেরিয়ে সে আজিজ সুপার মার্কেটে গিয়েছিল, স্যারের রিকমেন্ড করা বই আনতে। কিছু বই সব সময় পাওয়া যায় না। বইয়ের দোকানে বলে রাখতে হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বজিৎ স্যারের তত্ত্বাবধানে সে পিএইচডি করছে। তার গবেষণার বিষয় ‘বুদ্ধদেব বসুর কবিতায় নীরবতার ব্যবহার’।

মাস্টার্স হয়ে যাওয়ার পর মা বলেছিল, মেয়েদের এত পড়ালেখা দিয়ে কী হবে নীতু? অনেক পড়েছ, এবার বিয়ে করে সংসারী হও।

নীতু জানিয়েছে, ওসব আমার ভালো লাগে না, মা।

তার কী ভালো লাগে, সে-কথা অবশ্য মা জানতে চায়নি। কেবল অচেনা মুখে একবার তাকিয়েছিল মেয়ের দিকে। নীতু, চোখ নাচিয়ে বলতে গিয়েও বলেনি, মা দেখো, জীবন ও সংসারের সব কথা জানতে নেই, কেমন।

নীতু মেয়েটা শ্যামলা। দীর্ঘাঙ্গী। সে সুন্দরী কিনা তা নিয়ে মাথা নেই কোনো। ছিলও না। নিজের যা কিছু ভালো লাগে, আনন্দ পায়—তা নিয়েই সে ডুবে থাকতে ভালোবাসে। ভালো তাকে অনেকেই বাসে, কিংবা বাসার কথা জানিয়েছে গোপনে; কেউ সরাসরিও। সে সযত্নে এড়িয়ে গেছে, দিনের পর দিন। একার জীবনটা খারাপ নয় তো, ভাবে সে; সেই ভাবনায় দিন কেটে যায়। বাংলায় পড়ালেখা শেষ করে সে গবেষণাটা করছে নিজের ভালো লাগা থেকে। চাকরি-বাকরির দিকে খুব একটা মন নেই তার। নগর ঢাকায় নীরবতা খুঁজে ফেরা, তাও কোনো কবির কবিতার ভিতর—কীভাবে সে এমন ভাবনায় থিতু হলো সেও এক রহস্য।

নীতুর এক বন্ধু চারুকলায় পড়ায়। তার সঙ্গে একবার দেখা করে সে নিজের ডিপার্টমেন্টে যাবে বলে মনস্থির করে। বন্ধুটির কাছে বুদ্ধদেব বসুর দুষ্পাপ্য বই আছে বলেছিল। পায়ে হেঁটে সে যখন জাদুঘরের সামনে আসে, ঠিক তখনই লোকটিকে দেখে সে। মুগ্ধতা যেমন, বিস্ময়ও কিছু কম নয় নীতুর। স্বপ্নকল্পনার মানুষ বাস্তবেও এভাবে ধরা দেয়? কিন্তু এত বছর পর, ছেড়ে যাওয়া এই জনপদে কীভাবে এলেন তিনি?

জাদুঘরের সামনের পথে অগণন মানুষ, রিকশা ও গাড়ির স্বাভাবিক চলাফেরা। আর শব্দ। কোলাহল। রাস্তার ওপাশে ফুলের দোকান থেকে কাঁচা ফুলের সুবাস ভেসে আসছে। সময় ভুলে, নিজের কাজ ও ব্যস্ততার কথা বিস্মৃত হয়ে প্রশ্ন চোখে তাকায় নীতু। এক সময় ধীরপায়ে লোকটির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

লোকটি ইতিউতি তাকায়, কিছু একটা খোঁজে, কাউকে কিছু জিজ্ঞেস করবে কিনা ভাবে; নীতু কাছে যেতেই, কিংবা কোনো কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগ না-দিয়েই লোকটি বলে—এখানে ডাকঘরটি কোথায় বলতে পারেন?

নীতুর খটকা লাগে। ডাকঘর?

লোকটি বলে, আসলে হয়েছে কী—নতুন এসেছি তো, ভালো করে কিছু চিনতে পারছি না। আবার এমনও হতে পারে, এই এলাকায় অনেক দিন পর আসার কারণে রাস্তাঘাট ও পরিবেশ সব বদলে গেছে। সবকিছু গুলিয়ে ফেলেছি।

নীতু ধাক্কা খায়। স্বপ্ন-কল্পনার মানুষকে সরাসরি দেখতে গেলে মানুষের বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্বপ্নভঙ্গ হয়। তার বেলায়ও ব্যাপারটা এমন মিলে যাবে, ভাবেনি সে; তবুও ঘটলো। কিন্তু মুহূর্তেই সামলেও নেয় নিজেকে।

চেনা মানুষের মতো ভঙ্গি করে সে বলে, আসুন আমার সঙ্গে।

চা খেতে খেতে কবি অপলক চোখে পরিপার্শ্বে চোখ বুলিয়ে নিতে থাকেন। কবির চোখ অনুস্মরণ করে নীতু আবিষ্কার করলো—এক বয়সী ভদ্রলোক তাকিয়ে আছেন কবির মুখে, নির্ণিমেষ। তার চোখে-মুখে কৌতূহল ও সন্দেহ। কারণ কী? একবার ভাবে নীতু। আর তিনিও, চায়ের পেয়ালা হাতে, কিন্তু চায়ে চুমুক দেওয়ার নাম নেই। কবি যে ভারি অস্বস্তিবোধ করছেন, নীতু টের পায়।

চা অসমাপ্ত রেখেই বুদ্ধদেব বসু বললেন, নীতু, চলো।

সে কী, চা-টা তো শেষ করুন।

কবি গলা কিছুটা খাদে নামিয়ে বললেন, না, অসুবিধা আছে। চলো।

পায়ে পায়ে হেঁটে জাদুঘরের সামনে দিয়ে পাবলিক লাইব্রেরি হয়ে ওরা চারুকলার দিকে এগুতে থাকে।

নীতু লজ্জিত ভঙ্গিতে বলে, আপনি নতুন কোথাও গেলে ডাকঘর খুঁজে বের করতেন, আপনার লেখা পড়ে তা জেনেছি। কিন্তু এতকাল পরেও সেই অভ্যেস আজও রয়ে গেছে?

বুদ্ধদেব বসু মৃদু চোখে তাকিয়ে হাসেন। সঙ্গে সঙ্গেই কথার উত্তর দেন না কোনো। লিকলিকে চিকন শরীর, লম্বাও খুব বেশি নন; কিন্তু চোখে ও ব্যক্তিত্বে কিছু একটা আছে কবির। নীতু নিজের মনে হিসাব করে।

বুদ্ধদেব বসু প্রথমে প্রায় শোনা যায় না, এমন ভঙ্গিতে কথা বলে ওঠেন। একটু পর, স্পষ্ট ও সুন্দর গলায় বলেন, জানো, ছোটবেলায় ডাকঘর ছিল আমার মনের একটি রহস্য-নিকেতন। থাকতাম মফস্বলের ছোট শহরে, সেখানে নিত্যনতুন উত্তেজনা উন্মাদনা ছিল না, সিনেমা তখন পর্যন্ত সেখানে পৌঁছায়নি। নদীর ধারে, মাঠে-ঘাটে বনে-বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানো ছাড়া ইশকুলে-না-পড়া বালকের কিছুই করার ছিল না। যেতে-আসতে যখনই ডাকঘরের কাছে এসেছি, থমকে দাঁড়িয়েছি একটু, শিক-আঁটা জানলার বাইরে দাঁড়িয়ে দেখেছি ভিতরকার ব্যস্ততা, দুমদুম শব্দে টিকিটে ছাপ পড়ছে, নানা রঙের টিকিট-মারা ছোট-বড় কত পার্সেল, মস্ত মস্ত থলি উপুড় করে মেঝেয় ঢালা হচ্ছে রাশি রাশি চিঠিপত্র—সে এক বিচিত্র ব্যাপার। বাড়ির লোকের ডাকঘরে কোনো কাজ থাকলে আমি যেতুম দৌড়িয়ে, কী ভালোই লাগতো চিঠি ডাকে দিতে, টিকিট কিনতে...

নীতু হা হা হা করে হেসে ওঠে।

কবি গম্ভীর হয়ে জিজ্ঞেস করেন, সে কী, হাসছ কেন?

নীতু হাসি থামিয়ে বলে, আপনি এমন ভঙ্গিতে কথাগুলো বলে গেলেন, মনে হলো, কোনো বাড়িতে বিয়ের দাওয়াত খেয়ে এসেছেন কবে। কিন্তু অনেক দিন পরেও আপনার জিভে সেই স্বাদ লেগে আছে।

বুদ্ধদেবও একচোট হেসে নেন সলজ্জ মুখে।

নীতুর ফোনে কেউ কল করে। সে মুঠোফোন বের করে কল কেটে দেয়। কবির দিকে তাকিয়ে বলে, আপনি এমএ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছিলেন ১৯৩১-এ। ওই বছরই তো কলকাতায় চলে গেলেন। পরে আর কখনো ঢাকায় আসেননি, না?

মানুষ হিসেবে আপনি বরাবরই প্রেমিক পুুরুষ, না?

এই টিংটিঙে বুড়োকে দেখে তোমার তাই মনে হয়, নীতু?

এখন তো নয়, আমি আপনার জীবনের বসন্ত-সময়ের কথা বলছি। রানু সোমকেও তো প্রেমের জালেই ধরেছিলেন। না? হা হা হা।

তুমি তো অনেক কথাই জানো দেখছি। তা তুমি কী করো বাপু?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বুদ্ধদেব বসুর কবিতার ওপর পিএইচডি করছি।

বুদ্ধদেব বসু কি আপ্লুুত হয়ে ওঠেন? নীতু তা খেয়াল করে না। তার মুঠোফোন আবার বেজে ওঠে।

কবি বলেন, তা বেশ। কিন্তু তোমার গবেষণার বিষয়টা কী?

‘বুদ্ধদেব বসুর কবিতায় নীরবতার ব্যবহার’।

বাপ রে। এত বিষয় থাকতে এমন বিষয় বেছে নেওয়ার কারণ কী, বলো তো?

নীতু সে-কথার উত্তর না দিয়ে বলে বসে, আর আপনি লেখক হিসেবে ভীষণ দুষ্টুও।

বুদ্ধদেব অবাক—সেটা কী রকম?

সত্যিই তো। না হলে একজন লেখকের এত বই নিষিদ্ধ হয় নাকি?

এবার শব্দ করে হেসে ওঠেন বুদ্ধদেব বসু, ওই একটা বই, কী যেন নাম—রাত ভ’রে বৃষ্টি...

নীতু একরোখা বালিকার মতো বলে ওঠে, না। আরও আছে—এরা আর ওরা এবং আরো অনেকে?

এবার বেশ সহজ হয়ে আসেন কবি। বলেন, দেখো, কম বয়সে এমন হয়। আর তখন সময়টা বড় কড়াও ছিল। নয়? তবে আমার প্রথমদিকের গল্প ‘রজনী হলো উতলা’ খুবই উতলা করেছিল সজনীকান্ত দাসকে। সজনীকে চেনো তো? ‘শনিবারের চিঠি’ বাংলা সাহিত্যে এক ভিলেন পত্রিকা, এর নাটের গুরু ছিল সজনী।

ওরা চারুকলা পেরিয়ে নজরুলের মাজারের সামনে এসে পড়ে।

বুদ্ধদেব কোনো কথা না বলে সামনে কয়েক পা এগিয়ে গেলেন, খুব মনোযোগ দিয়ে দেয়ালে যত্ন করে লাগানো নেমপ্লেটটি পড়তে থাকেন। বহুদিন পর, পুরনো বন্ধুকে দেখলে মানুষ যেমন আকুল হয়ে কথা বলে, জড়িয়ে ধরে, নজরুলের মাজারের সামনে তিনি তেমন ছেলেমানুষটি হয়ে গেলেন।

নীতু চুপ করে কবির পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর বুদ্ধদেব বললেন, দেখো, নজরুল এই এখানে শুয়ে আছেন। লোকটির একটা সাধ পূরণ হয়েছে। ওই যে গানে সে বলেছিল— মসজিদের পাশে আমার কবর দিও ভাই, যেন সকাল-সন্ধ্যা আজান শুনতে পাই। জানো নীতু, একবার তিনি আমাদের জগন্নাথ হলে এসেছিলেন এক অনুষ্ঠানে। আর একবার আমার পল্টনের বাসায়।

নীতুর চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে—তারপর?

আমি যখন জগন্নাথ হলে ছিলাম, একরকম জোর করে আমাকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পাসও করেছিলাম। কিন্তু ছাত্রদের প্রতিনিধি হয়ে ওঠার ব্যাপারটা আমার কাছে বিশুদ্ধ বিড়ম্বনা ঠেকেছিল। কিন্তু তারচেয়ে বড় একটি ঘটনা ঘটেছিল। যেটার সঙ্গে আমার হৃদয়ের সংযোগ ছিল।

কী রকম?

সেই প্রথম আমি নজরুলকে দেখি এবং অন্য অসংখ্যের মতোই দেখামাত্র তার প্রেমে পড়ে যাই। চওড়া-কাঁধে বলিষ্ঠ তার দেহ, মাঝখান দিয়ে সোজা-সিঁথি-করা কোঁকড়া চুল গ্রীবা ছাপিয়ে প্লাবিত, মুখখানা বড় ও গোলছাঁদের, চোখ আয়ত ও কোণরক্তিম। মনোলুণ্ঠনকারী একটি মানুষ।

নীতু বলে, নজরুলের ছবি দেখেও বোঝা যায়, সেও এক প্রেমিকপুরুষ ছিল।

কবি হা হা করে হেসে ওঠেন।

নীতু আহ্লাদি গলায় বলে, আচ্ছা, হঠাৎ আপনি চশমা ধরলেন যে? সারাজীবনে কখনো তো ওটা ব্যবহার করেননি?

আর বলো না। এখানে এত ধুলো আর পরিবেশ দূষণের হাওয়া। বড় নাকাল করে দেয়।

কথা বলতে বলতে ওরা টিএসসি মোড়ে চলে আসে।

নীতু বলে, এই কড়া রোদে আসুন, আপনাকে একটা ডাব খাওয়াই। আরাম পাবেন।

প্রথমে খানিক ইতস্তত করলেও সম্মতি দেন কবি। ভ্যানে করে ডাব বিক্রি করছে যে লোকটি, বলল, কচি খাবেন না শাঁসওয়ালা?

কবি লাজুক হেসে বলেন, কচি ডাব দাও ভাই।

ডাব খাওয়া হয়ে গেলে ওরা একটি গাছের ছায়ায় দাঁড়ায়। নীতু বলে, জানেন, একেবারেই ছেলেমানুষী ব্যাপার, তবুও, আমি বেশ কয়বার একা পায়ে হেঁটে জগন্নাথ হলের ভিতরে চলে গিয়েছি। এমন নয় যে, ওই হলে আমার কোনো বন্ধু থাকে। হলের ভিতরে বিস্তৃত মাঠ, পুকুর, গাছপালা এবং নিশ্চুপ ও মুখর প্রকৃতি; মাটি ও ছাত্রদের নিয়ত চলাফেরা দেখে কত কী যে ভেবেছি। অনুভব করতে চেয়েছি, এই পরিবেশে ও আলো-ছায়ায় একদিন আপনি সত্যিই ছিলেন। ছিলেনই তো, সুদীর্ঘ সময়...

বুদ্ধদেব মুগ্ধ হয়ে নীতুর কথা শুনতে থাকেন।

নীতু গাড়ি টার্ন করার মতো করে কথাটা ঘুরিয়ে নেয়। বলে, চলুন, আমরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভিতরে  ছায়ায় কিছু সময় বসে কথা বলি।

কিন্তু উদ্যানের ভিতরে ঢুকেই বুদ্ধদেব বলেন, আমার বড় তেষ্টা পেয়েছে, নীতু।

নীতু অবাক। এই তো ডাব খেলেন। আপনাকে জল এনে দিব?

আরে না। বলছি যে, একটা সিগারেট খেতে ইচ্ছে করছে।

কবির কথা শুনতে শুনতে নীতু ফোনটা অন করে।

আপনি ঢাকার পটভূমিতে যত লেখা লিখেছেন, পল্টনকে ঘিরে আপনার এক ধরনের ঘোর ও মুগ্ধতা বেশিরভাগ লেখায় ধরা পড়েছে।

বুদ্ধদেব শেষবারের মতো টান দিয়ে সিগারেটের শেষ অংশটা ফেলে দেন—দেখো, মানুষের মনে অতীতের মোহ আশ্চর্য; বর্তমানে যার সম্বন্ধে অভিযোগের অন্ত নেই, তা যখন অতীতে পরিণত হলো, তার ধার ক্ষয়ে গিয়ে মনের ওপর কোমল স্পর্শের মতো এসে লাগে; স্মৃতির রঙিন কাচের ভিতর দিয়ে সব জিনিসই সুন্দর দেখায়, মনোরম দেখায়।

নীতুর ফোনটা বেজে ওঠে। সে কলটা ধরেই দাঁড়িয়ে যায়—জি স্যার। আমি আছি ক্যাম্পাসেই। আসব? শাহবাগে? ওকে স্যার, এখনই আসছি।

ফোনটা ব্যাগে রাখতে রাখতে নীতু বলে, বিশ্বজিৎ স্যার শাহবাগে আসছেন, তিনি আমাকে কিছু নোট দেবেন। একটু উঠতে হবে। চলুন, আমরা যেতে যেতে কথা বলি।

ছবির হাট পেরিয়ে ওরা মূল রাস্তায় উঠে আসে।

বিশ্বজিৎ স্যার নোট দিয়ে বলেন—এগুলো ভালো করে দেখো। কাজে লাগবে। আমি ঢাকার বাইরে যাচ্ছি। ফিরে এসে কথা হবে কেমন।

নীতু আবার কবির সঙ্গে এসে মেলে।

চোখ উপরে তুলে জাদুঘরের ছাদে তাকিয়ে ছিলেন বুদ্ধদেব; সেদিকে চোখ রেখেই বা ঈষৎ ঘাড় কাত করে বললেন, য়্যাঁ, কিছু বলছ? আমি শুনছি তো, বলো।

নীতু লাজুক হেসে, মুখে একটু গম্ভীর ভাব তৈরি করতে করতে বলে, এই যে পড়ন্ত দুপুর, দুপুরের আলো-ছায়া, শাহবাগের মোড়ে এত মানুষ— মানুষের ছুটে চলা, জীবনের নিবিড় মায়া ও অন্ধকার; এসব ফেলে একদিন হারিয়ে যাব। আমি থাকবো না। থাকবো না যে, তা তো সত্যিই, তবুও বেশিরভাগ মানুষই হয়তো এসব ভাবার অবকাশ পায় না। তো থাকবো না— সে-কথা ভাবলেই মন কেমন করে ওঠে। আবার নতুন মুখ নতুন মানুষে ভরে উঠবে শাহবাগ-টিএসসির এই পথ, এই আলো-হাওয়া...

কথা থেমে যায় নীতুর।

কথা মুখ বাড়ায়। কথা এসেও ভিজে গলায় আটকে থাকে। নীতু অপলক চোখে শ্রাবণের নীল আকাশ দেখে, হয়তো দেখেও না। আকাশে কুয়াশা জমেছে। মেঘ করেছে নাকি? সেটুকু বোঝার আগেই তার হাতব্যাগের ভিতর মুঠোফোনের ভাইব্রেশন শুরু হলে সে আনমনে ফোন বের করেই সামনে তাকায়। পেছনে তাকায়। দ্রুত চোখে এপাশ ওপাশ করে। নেই। কবি কোথাও নেই। জাদুঘরের সামনের পথে অগণন মানুষ, রিকশা ও গাড়ির স্বাভাবিক চলাফেরা। শব্দ। কেবল নিতুর খুঁজে ফেরা কাঙ্ক্ষিত মানুষটি নেই। তখন, শ্রাবণের নীল দুপুরে আকাশের সিঁড়ি বেয়ে তিরতিরিয়ে বৃষ্টি নামে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর