তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি বাবা! তুমি আমার জন্য যে কষ্ট সহ্য করছ তা চিরদিন মনে রাখব। আমি বড় হয়ে তোমার কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব করার চেষ্টা করব। সত্যি বলছি বাবা। তুমি শুধু আমার জন্য দোয়া করো, আমি যেন মানুষের মতো মানুষ হই। তুমি দেখ, আমি অবশ্যই তোমার স্বপ্ন পূরণ করব। আমি প্রতিজ্ঞা করছি বাবা।
শ্রেয়সীর পড়ার টেবিলে রাখা ডাইরিতে বাবাকে উদ্দেশ্য করে লেখা চিঠি পড়ে চোখে পানি আসে শাকিল আনোয়ারের। তিনি স্থির হয়ে কিছুক্ষণ বসে রইলেন। চোখের পানি মুছে আবার চিঠিটা পড়লেন। আবারও তার চোখে পানি এলো। চিঠির প্রতিটি শব্দ এতোটা আবেগ জড়ানো যে, চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না তিনি।
বাবার প্রতিটি বিষয় শ্রেয়সী ফলো করে। বাবার কথা বলার ধরন, চলনবলন, খাওয়াদাওয়া সবই তার ভীষণ পছন্দ। কখনো কখনো সে বাবাকে মায়ের মতো শাসন করে। বাবার কোনো কাজ তার পছন্দ না হলে সঙ্গে সঙ্গে বলে, এটা কেন করেছ বাবা? এটা করা ঠিক হয়নি। বাসায় দেরিতে ফিরলে কিংবা অনিয়ম করলে সঙ্গে সঙ্গে মেয়ের কাছে তাকে জবাবদিহি করতে হয়। আবার কোনো কারণে মেয়ের প্রতি রাগ করলে বেশ বকুনিও খেতে হয়।
শাকিল আনোয়ার মেয়ের সব কথা, সব ধরনের আবদার ছোট্ট শিশুর মতো মেনে চলেন। কোনো কারণেই যাতে মেয়েটা মন খারাপ না করে, মনে কষ্ট না পায় সেদিকে খেয়াল রাখেন।
শ্রেয়সী সবে এগারোতে পা দিয়েছে। এখনই সে যা বুদ্ধি রাখে তা সত্যিই বিস্ময়কর। এতোটুকু মেয়ে এতোকিছু ভাবে! বাবার কষ্ট সে উপলব্ধি করতে পারে!
শাকিল আনোয়ারের আজ স্ত্রীকে হারানোর সেই ভয়ংকর দুর্ঘটনার কথা মনে পড়ে। এখন থেকে পাঁচ বছর আগের ঘটনা। দুঃসহ সেই ঘটনার কথা মনে পড়লে আজও গা শিউরে ওঠে। তার স্ত্রী আমেনা হক আর মেয়ে শ্রেয়সী একসঙ্গে রিকশায় যাচ্ছিল। একটি বাস পেছন থেকে রিকশাটিকে ধাক্কা মেরে চলে যায়। রিকশাটি রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে। এতে আমেনা হকের মাথায় প্রচণ্ড আঘাত লাগে। অলৌকিকভাবে অক্ষত থাকে শ্রেয়সী। সে তার মাকে রক্তাক্ত দেখে চিৎকার দিয়ে কান্নাকাটি করতে থাকে। রিকশা ড্রাইভারের অবস্থাও সংকটাপন্ন।
শিশুকন্যার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন দৌড়ে আসে। অতঃপর আমেনা হককে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে শ্রেয়সী। কিছুতেই তার কান্না থামে না। বাবা মেয়েকে সান্ত্বনা দেন। তাতে কি আর ওর কান্না থামে! সারাক্ষণ সে মা মা করে ডাকে। যে মানুষটি ছিল শ্রেয়সীর সব সময়ের সঙ্গী, যাকে এক মুহূর্ত না দেখলে তার চলে না; সেই মানুষটি ওর কাছ থেকে চিরদিনের জন্য চলে গেলো! এর চেয়ে কষ্টদায়ক ঘটনা আর কী হতে পারে!
সেই কষ্টের মুহূর্তে শাকিল আনোয়ারই হয়ে ওঠেন শ্রেয়সীর মা। তিনি বাবার আদর তো দিয়েছেনই, মায়ের অনুপস্থিতিও ভোলাবার চেষ্টা করেছেন। সব সময় মেয়েকে নিয়েই কাটান। মেয়ের সঙ্গে গল্প করা, তাকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া, তার পছন্দের পোশাক, খাবার দাবার সবকিছুর দিকেই শাকিল আনোয়ার বিশেষ নজর দেন।
শাকিল আনোয়ার জানেন, কোনো সন্তানের মায়ের অভাব পূরণ করা যায় না। তার পরও সে যাতে অনাদর, অবহেলার শিকার না হয় সেদিকটির প্রতি তিনি খেয়াল রেখেছেন। তাছাড়া মেয়েকে দেখভালের জন্যই তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। অল্প বয়সে স্ত্রীকে হারালেও তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেননি। সৎ মা শ্রেয়সীকে যদি ভালোভাবে না দেখে! এ রকম চিন্তা থেকেই তিনি নিজে সব রকম ত্যাগ স্বীকার করছেন। ছোট্ট মেয়েটি সেটা এখনই উপলব্ধি করতে পারছে। এটা যে শাকিল আনোয়ারের জন্য কত বড় ভালোলাগার বিষয় তা বলে বোঝানো যাবে না। সেই ভালো লাগা থেকেই আজ মেয়ের ছোট্ট চিঠি পড়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি তিনি। চিঠিটা যতবার পড়ছেন ততবারই তার চোখ দিয়ে দরদর করে পানি পড়ছে।
হঠাৎ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন শ্রেয়সীকে স্কুল থেকে আনার সময় হয়ে গেছে। তিনি দ্রুত স্কুলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন। বাসা থেকে স্কুল পায়ে হাঁটার পথ। তিনি বাসা থেকে পায়ে হেঁটে স্কুলে যান। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখেন, আরও পাঁচ মিনিট তার হাতে আছে।
শ্রেয়সীর স্কুল উত্তরার এক নম্বর সেক্টরে। স্কলাসটিকা স্কুলের মেইন ক্যাম্পাসে ক্লাস ফাইভে পড়ে সে। পড়ালেখায় সে খুব ভালো। পড়ালেখা করে সে মস্তবড় বিজ্ঞানী হবে। সে কারণে পড়ালেখায় অনেক বেশি মনোযোগী। লেখাপড়া আর বাবার সঙ্গে খেলাধুলা আর গল্প করে সময় কাটানোই তার কাজ। কখনো কখনো বাবার অফিসে যাওয়ার আবদার। অবশ্য বাবাই তাকে স্কুল থেকে এনে খাইয়ে দাইয়ে কয়েকটা গল্পের বই ব্যাগে ঢুকিয়ে তার অফিসে নিয়ে যান। বাবার সঙ্গে দারুণ সময় কেটে যায় তার।
মাকে হারানোর পর থেকে বাবার সঙ্গেই তার পুরো সময় কাটে। বাবার কাছেই তার সমস্ত আবদার। বাবার আদর্শে বড় হচ্ছে সে। বাবা তার আইডল। বাবার স্বপ্নকে নিজের স্বপ্ন মেনে এগিয়ে চলছে।
একদিন শ্রেয়সী বায়না ধরে, নানাবাড়ি যাবে। তার মা যে বাড়িতে বড় হয়েছে সেই বাড়ি দেখবে। সেখানে তার কোনো স্মৃতি আছে কি না তা খুঁজবে।
মেয়ের কথা শুনে বিস্মিত হন শাকিল আনোয়ার। মেয়েটা এতো কিছু বোঝে কী করে! ঢাকার বাসায় শ্রেয়সীর মা মানে আমেনা হকের যা যা স্মৃতি আছে তা সে সংরক্ষণ করে রেখেছে। কোনো কিছু যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য সেগুলোর ওপর রয়েছে তার বিশেষ নজরদারি। বাবাকে নিয়ে সে কখনো কখনো মায়ের কবরের কাছে যায়। স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। বিড় বিড় করে কী যেন বলে। মনে হয়, ওর মাকে ডাকে। কবরে সে কেমন আছে, ভালো না মন্দ তা জানতে চায়। কখনো কখনো শব্দ করে বলে, কবরে তোমার কষ্ট হচ্ছে না তো মা! তোমার জন্য আমি দোয়া করি। আল্লাহ যেন তোমাকে কষ্ট না দেন। আর তোমাকে কি কষ্ট দেবেন? তুমি তো কোনো অপরাধ করোনি!
অনেকক্ষণ কবরের কাছে থেকে বাড়িতে ফিরে আসে।
আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই সে বাবাকে বলেছে, নানাবাড়ি যাবে। ওর নানাবাড়ি খুব বেশি দূরে নয়। গাজীপুরের কালিগঞ্জে। ওদের উত্তরার বাসা থেকে গাড়িতে এক ঘণ্টার পথ। মেয়ের আবদার তো রাখতেই হবে। শাকিল আনোয়ার না করলেন না। তিনি বললেন, গোসল করে রেডি হও। আমরা এক ঘণ্টার মধ্যে নানাবাড়ির উদ্দেশে রওনা হব।
শ্রেয়সী তো মহা খুশি। সে দ্রুত গোসল সেরে নতুন পোশাক নিয়ে বাবার কাছে এসে বলে, বাবা এটা পরবো?
শাকিল আনোয়ার বলেন, অবশ্যই।
তারপর নিজের পছন্দের শার্ট প্যান্ট বাবার হাতে দিয়ে বলে, তুমি কিন্তু এই ড্রেস পরবে!
শাকিল আনোয়ার মেয়ের দেওয়া শার্ট প্যান্ট পরে রেডি হন। মেয়ে রেডি হয়ে বাবার কাছে এসে বলে, আমি রেডি। চলো এবার যাই।
নানাবাড়ি যাবে বলে খাওয়ার কথাও ভুলে যায় শ্রেয়সী। বাবা যখন বলে, সকালের নাশতা করবে না?
এখন ক্ষুধা নেই বাবা। পথে খেয়ে নেব।
পথে কোথায় খাবে মা? এসো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
শাকিল আনোয়ার নিজে খান এবং মেয়েকে খাইয়ে দেন। খাওয়া শেষ করে ব্যাগে পানির বোতল, কিছু ফল আর বিস্কুট চানাচুর নিয়ে রওনা হন। আজ তিনি নিজেই ড্রাইভ করবেন। মেয়েকে ড্রাইভিং সিটের পাশে বসিয়ে সিটবেল্ট বেঁধে দিলেন। নিজে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলেন। গাড়ি ছুটে চলল কালিগঞ্জের দিকে।
রাস্তায় যেতে যেতে মেয়ে আর বাবার গল্প বেশ জমে ওঠে। এক ঘণ্টা সময় কীভাবে পার হয়ে যায় তাও টের পায় না তারা। পৌঁছে যায় কালিগঞ্জে। নানাবাড়িতে পা রাখতেই শ্রেয়সীর খালা, নানি দৌড়ে আসেন ওর কাছে। ওকে জড়িয়ে ধরে আদর করেন তারা। নানি আর খালার গা থেকে যেন মায়ের গন্ধ পায় শ্রেয়সী।
শ্রেয়সীর নানি তার জন্য মজার মজার খাবার রান্না করে। সেগুলো খেয়ে অপার আনন্দ পায় শ্রেয়সী। সেই রান্নাতেও মায়ের হাতে স্বাদ পায় সে। মনে হচ্ছে, অনেক বছর পর মায়ের হাতের রান্না খাচ্ছি।
শ্রেয়সীর কথা শুনে ওর নানি আর খালার চোখে পানি আসে। তারা উভয়েই গোপনে চোখের পানি আঁচল দিয়ে মোছেন। শ্রেয়সীর কাছে আবেগ লুকানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু ওর চোখ ফাঁকি দেওয়া বড় কঠিন। সে তাদের কৌশল ধরে ফেলে। সে বলে, মা’র জন্য তোমাদের খুব খারাপ লাগছে তাই না? আমাকে বাবা জাদু দিয়ে সব ভুলিয়ে রেখেছেন। মা বলতেন, আমি যেন বড় বিজ্ঞানী হই। আসলে এটা বাবার স্বপ্ন। মা বলতেন, তোর বাবা তোকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখে আমিও তাই দেখি।
শ্রেয়সীর কথা শুনে অবাক হন ওর নানি আর খালা। তারা ভাবতেই পারেননি এতো ছোট্ট মেয়ে এতো সুন্দরভাবে কথা বলতে পারে। সে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছে।
শ্রেয়সী ওইদিন বিকালেই উত্তরার বাসায় ফিরে আসে। কিন্তু নানাবাড়িতে সে সবার আবেগকে যেন নাড়িয়ে দিয়েছে। শ্রেয়সীর মাঝে তারা খুঁজে পায় এক আমেনা হককে।
শ্রেয়সী ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছে ঠিকই; কিন্তু তার বাবা শাকিল আনোয়ার তাকে এমনভাবে বুকে আগলে রেখেছে যে, মা’র অভাব অনুভব করতে দেয়নি। মা’র অনুপস্থিতি তার জীবনে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারেনি। উল্টো সে মা-বাবার স্বপ্ন পূরণের ব্যাপারে অনেক বেশি মনোযোগ দিয়েছে। শ্রেয়সী ওর বাবাকে কখনো বাবা হিসেবে, কখনো মা, কখনো শিক্ষক, কখনো যোগ্য অভিভাবক আবার কখনো বন্ধু হিসেবে পেয়েছে। এটাই তাকে নিয়ে যায় অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে।
২.
কী আশ্চর্য! শ্রেয়সী অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এই খবর শুনে চিৎকার দিয়ে সে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে। পাগলের মতো হাসে। হাসতে হাসতে তার চোখে কান্না চলে আসে। এ কান্না আনন্দের। এরপর তার মা’র কথা মনে পড়ে। মনে মনে সে বলে, আজ মা যদি বেঁচে থাকতেন কতই না খুশি হতেন। কতই না আনন্দ করতেন আমাকে নিয়ে। সে মনে মনে বলে, মা তুমি কোথায় আছো? আসমানে নাকি পৃথিবীতে? তোমার আত্মা কি আমাকে দেখতে পাচ্ছে? বলো না মা, তুমি কোথায় আছো?
শাকিল আনোয়ার শ্রেয়সীর চোখের পানি মুছে দিয়ে বলেন, কেঁদো না মা। এভাবে একটার পর একটা স্বপ্ন পূরণ করতে পারলেই তোমার মা মণির আত্মা শান্তি পাবে। তোমাকে অনেক দূর যেতে হবে মা!
শ্রেয়সী আবার মনে মনে সংকল্প করে, তাকে এবার আরও কঠিন পথ পাড়ি দিতে হবে। কিন্তু বাবাকে ছেড়ে সে কীভাবে বিদেশে যাবে? তাছাড়া সে ভাবে, বাবার মাথার ওপর খরচের বোঝা চাপিয়ে সে লন্ডনে চলে যাবে তা কী করে হয়!
শাকিল আনোয়ার মেয়েকে সাহস জোগান। অক্সফোর্ডে পড়ার সুযোগ কিছুতেই হাতছাড়া করা যাবে না। আমি মাঝেমধ্যে গিয়ে তোমাকে দেখে আসব। তুমি চলে যাও মা। কোনো রকম দ্বিধা করো না। শোনো, খরচের কথা তোমার ভাবতে হবে না। নিশ্চয়ই ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তুমি তো জানো, আমি মোটেই বৈষয়িক মানুষ না। তুমি মানুষের মতো মানুষ হলেই আমি খুশি। আমার আর কিছু চাই না।
তা আমি জানি বাবা। তারপরও তোমাকে নিয়ে চিন্তা হয়। তুমি কীভাবে ম্যানেজ করবে? ওদের হিউজ টিউশন ফি।
শাকিল আনোয়ার মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেন, মা রে, ব্যবসাপাতি তো খুব একটা খারাপ করি না। তারপরও এতো দুশ্চিন্তা কেন করো? আমি না পারলে তোকে পাঠানোর সিদ্ধান্তই নিতাম না।
অবশেষে শ্রেয়সী লন্ডনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আসলে শাকিল আনোয়ার মেয়েকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেন। এতে দারুণভাবে উজ্জীবিত হয় শ্রেয়সী। সে সব টেনশন ঝেড়ে ফেলে লন্ডনে যায়। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিশাল এক গণ্ডিতে পা রাখে সে।
৩.
অতি অল্প সময়ের মধ্যেই অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিচিত মুখ হয়ে ওঠে শ্রেয়সী। সে এতো ভালো রেজাল্ট করে যে, প্রতি বছরই তাকে স্কলারশিপ দিতে বাধ্য হয় ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। পদার্থ বিজ্ঞানে চমৎকার রেজাল্ট করে সবাইকে একেবারে তাক লাগিয়ে দেয়। বিগত পাঁচ বছরে এতো ভালো রেজাল্ট আর কেউ করেনি। সংগত কারণেই কর্তৃপক্ষ তাকে ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেন।
মেয়ের সুখবর শুনে শাকিল আনোয়ার আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান। তার সেই আনন্দ মুহূর্তে হঠাৎ বিষাদে রূপ নেয়। ভয়াবহ হার্ট অ্যাটাকের শিকার হন তিনি। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
শ্রেয়সী দুই দিন পর বাবার মৃত্যুর সংবাদ জানতে পারে। সে ছুটে আসে দেশে। যে মানুষটি তাকে হাত ধরে এতোটা পথ এগিয়ে নিয়েছেন; তিনি আজ সবকিছুর ঊর্ধ্বে চলে গেছেন। কিন্তু তিনি তার মেয়েকে এমন একটা জায়গায় তুলে দিয়ে গেছেন যে, মেয়েটি বিশ্বের কাছে এক অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
শ্রেয়সী সর্বত্র ওর বাবাকে খুঁজে বেড়ায়। কাঁদতে কাঁদতে বলে, আমার বাবা কোথায়! বাবা! বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে! না না! এটা হতেই পারে না! বাবা, তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারলে!
শ্রেয়সী তার বাবার কষ্টের দিনগুলোর কথা মনে করে। বাবার জন্য তার ভীষণ কান্না পায়। বারবার মুখোচ্ছবি শ্রেয়সীর চোখের সামনে ভেসে ওঠে। ওর বাবার অনুপস্থিতি ও গভীরভাবে উপলব্ধি করতে পারছে। যেন ওর মাথার ওপর থেকে ছাতাটা সরে গেছে। সে এখন তা টের পাচ্ছে। পর মুহূর্তেই সে ভাবে, আমার মনোবল শক্ত রাখতে হবে। বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। তাহলেই তাদের আত্মা শান্তি পাবে।
বাবার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্য নিয়ে আবার পা বাড়ায় শ্রেয়সী।