শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নতুন বইয়ের মন মাতানো ঘ্রাণ

বই উৎসব ২০১৭

আবদুল কাদের

নতুন বইয়ের মন মাতানো ঘ্রাণ

শিক্ষাকে প্রতিটি শিশুর হাতে পৌঁছে দিতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা অনেক। আর সেই লক্ষ্যে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরের শুরু থেকেই প্রতিটি জেলা আর উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে বই উৎসব। নতুন বইয়ের মৌ মৌ ঘ্রাণ আর বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়েছিল সারা দেশ। শিক্ষার্থীদের মুখে এক ফালি হাসি আর শিক্ষিত হয়ে গড়ে ওঠার স্পৃহা বাতলে দেয় পরিবর্তনে এক নতুন বাংলাদেশ। নিষ্পাপ এই শিশুদের মুখের মৃদু হাসি আর বইয়ের প্রতি ভালোবাসা জানান দেয়, অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ দেখবে আরও নতুন কোনো ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর। সম্ভাবনাময় বাংলাদেশ পাবে নতুন কোনো সূর্য-সন্তান, যারা বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে তুলে ধরবে অনন্য কোনো উচ্চতায়।

‘নতুন বইয়ের গন্ধ শুঁকে ফুলের মতো ফুটব, বর্ণমালার গরব নিয়ে আকাশ জুড়ে উঠব’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকারের বই উৎসবের উদ্যোগ বরাবরের মতো সকল স্তরে প্রশংসিত। তাই তো সপ্তাহব্যাপী বই উৎসবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের ১১১টি বই নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। গত শনিবার বই বিতরণের উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

‘বই উৎসব’ উপলক্ষে লাল-সুবজ কাপড়ে তৈরি বর্ণিল মঞ্চ, চারদিকে শত শত রঙিন বেলুন, মাথায় রঙিন ক্যাপ আর হাতে রঙিন বই। কেউ আবার উৎসবকে অন্যরকমভাবে মাতিয়ে তুলতে রঙিন শাড়ির সঙ্গে বাহারি রঙের ফুল দিয়ে সেজে এসেছে। এমন উৎসবের আবহে বছরের প্রথম দিন সারা দেশে একযোগে পালিত হয়েছে বই উৎসব। এ দিনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে পাঠ্যবই বিতরণ করা হয়।

উৎসব উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার দুটি স্থানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মূল অনুষ্ঠান সাড়ে ৯টায় হলেও ভোরে উৎসব প্রাঙ্গণে ছিল শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের মিলন মেলা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত হয় পাঠ্যপুস্তক উৎসব। এখানে আয়োজিত বই উৎসবের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান।

 

 

অন্যদিকে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় উৎসবের আয়োজন করা হয় রাজধানীর আজিমপুর সরকারি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে। এই বই উৎসবের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। উৎসবে রাজধানীর ৩১টি বিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেয়। নতুন বই হাতে পেয়ে তা উঁচিয়ে ধরে উল্লাস প্রকাশ করে শিক্ষার্থীরা। শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশে একযোগে উদযাপিত হয় বই উৎসব। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ পেয়ে সাড়ে ৪ কোটি শিক্ষার্থী ছিল উচ্ছ্বসিত। সঙ্গে অভিভাবক, শিক্ষকরাও। নতুন বছরের নতুন বই শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় আরো বেশি মনোযোগী হবে, অনুপ্রাণিত হবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ বই উৎসবের উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রথম বইটি তুলে দেন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী তাসনিম বিনতে রাশেদের হাতে।   ২০১০ সালে যখন বিনামূল্যে এই বই দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয় তখন শিক্ষার্থী ছিল আড়াই কোটির মতো। আর এখন শিক্ষার্থী বেড়ে হয়েছে চার কোটি ৪৪ লাখ ১৬ হাজার। বইয়ের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৭৭২ কপি। তিনি বলেন, সাফল্য ও ব্যর্থতা নিয়েই শিক্ষা কার্যক্রম আছে। তবে শিক্ষা ক্ষেত্রে গত সাত বছরে যুগান্তকারী সাফল্য এসেছে। বিশেষ করে সংখ্যাগত দিক থেকে সাফল্য যুগান্তকারী। শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার্থীদের মাঝে গিয়ে বেলুন উড়িয়ে দেন। শিক্ষার্থীরাও উৎসাহ নিয়ে বই ওপরে তুলে ধরে। প্রায় দুই সহস্রাধিক শিক্ষার্থী মাথায় ক্যাপ আর রঙিন বই হাতে মাঠে অপেক্ষা করতে থাকে শিক্ষামন্ত্রীর জন্য। এতে সঙ্গ দেন ক্লাস শিক্ষকরাও। কেউ আবার উৎসবকে মাতিয়ে তুলে রঙিন শাড়ি ও বাহারি রঙের ফুল দিয়ে সেজে আসে। শিক্ষামন্ত্রী সকালে পাঠ্যপুস্তক উৎসবে শুভ সূচনা করার পর এই অন্য পরিবেশ তৈরি হয়। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বই উৎসব এখন সকলের কাছে বড় উৎসবে পরিণত হয়েছে। আগামী বছরগুলোতেই এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’

আয়োজিত বই উৎসবে মন্ত্রী তাদের ছেলেবেলায় ফিরে যান। ক্ষণিকের জন্য হলেও ছেলেবেলার মেঠো পথ পেরিয়ে টিনের বিদ্যালয় ঘরের কথা স্মরণ করেন। কেননা, তাদের সময় এমন বই উৎসব ছিল না। তখনকার সময় শিক্ষার্থীদের পুরনো বই দিয়ে ক্লাস করতে হতো।’

আয়োজিত অনুষ্ঠানে আসা অতিথি সকলেই চান, তাদের সন্তানরা জ্ঞান আহরণে আগ্রহী হয়ে উঠুক। শিক্ষাদীক্ষায় মানুষের মতো মানুষ হয়ে গড়ে উঠুক। তাহলেই এই দেশের উন্নয়নে ভবিষ্যতে তারা অবদান রাখতে পারবে।

বই উৎসব উপলক্ষে আসা কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর হাতে নতুন বই তুলে দেওয়া হয়, হৈ-হুল্লোড়ে আর পতাকা উড়িয়ে তারা মাতিয়ে রাখে পুরো মাঠ প্রাঙ্গণ। ছিল শিশুদের নাচ-গান আর সিসিমপুরের পরিবেশনা।

এদিকে, ইসলামিক ফাউন্ডেশন সারা দেশে ১৯ লাখ ৪১ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে পাঠ্যবই দেয়। ফাউন্ডেশনের মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্পের আওতায় প্রাক-প্রাথমিক, বয়স্ক ও সহজ কুরআন শিক্ষার মোট ৫১ হাজার ৫৬৮টি কেন্দ্রে বই বিতরণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

এদিকে সপ্তাহব্যাপী চলা বই উৎসব শুধু রাজধানীর স্কুলগুলোতেই নয়, সারা  দেশের স্কুলগুলোতেও একযোগে পালিত হয়েছে পাঠ্যপুস্তক উৎসব। শিক্ষার্থীরা সকালে খালি হাতে স্কুলে এসে বাড়ি ফিরছে নতুন বই হাতে। আর নতুন বই হাতে নিয়ে নিজেকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার শপথ নিচ্ছে তারা।

কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগাম, চাঁদপুর, ঝালকাঠি, খুলনা, বাগেরহাট, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নরসিংদী, আশুগঞ্জ, ফরিদপুর, যশোর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, কক্সবাজারসহ সারা দেশের বিভিন্ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে নতুন বই। বিভিন্ন জেলা শহর ও উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে আয়োজন করা হয়েছিল এই বই উৎসবের।

পুরো বই উৎসবের আয়োজক ছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এ বছর সারা দেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৩৬ কোটি ২১ লাখ ৮২ হাজার ২৪৫টি বই শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর