শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

মঙ্গলের মাটি ছোঁবে বাংলাদেশের রোবট

জয়শ্রী ভাদুড়ী, রাবি প্রতিনিধি

মঙ্গলের মাটি ছোঁবে বাংলাদেশের রোবট

মানুষ স্বপ্ন দেখে। কখনো জাগরণে কখনো ঘুমের ঘোরে। ঘুমে দেখা স্বপ্ন হয়তো বাস্তবে রূপ পায় না। তবে জাগরণের স্বপ্ন পূরণ হতে বাধা কোথায় যদি থাকে একাগ্রতা, নিষ্ঠা আর অধ্যবসায়। আমাদের দেশের তরুণরা প্রতিনিয়ত স্বপ্ন দেখছেন স্বপ্ন ছুঁইছেন। এরই ধারাবাহিকতায় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু তরুণ স্বপ্ন দেখছেন গোলাপি আকাশ আর লাল মাটির মঙ্গলগ্রহ ছোঁয়ার। তারা মঙ্গলগ্রহে পাঠাতে চান তাদেরই তৈরি রোবট। এ রোবট নিয়ে আসবে মঙ্গলগ্রহ সম্পর্কে অজানা সব তথ্য। মঙ্গলগ্রহ মানুষ বসবাসের উপযোগী কিনা, সেখানকার মাটি ও আবহাওয়ার প্রকৃতি কেমন তা জানার জন্য রোবট কিউরিসিটির পর আবারও একটি নতুন রোবট ২০২০ সালে মঙ্গলগ্রহে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাসা। আমেরিকার মার্স সোসাইটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে রোবটের নকশা সংগ্রহ করছে। এসব নকশা থেকে নমুনা নিয়ে তৈরি করা হবে নতুন একটি রোবট। যে রোবটটিকে পাঠানো হবে মঙ্গলগ্রহে। আগামী মার্চে আন্তর্জাতিক মার্স সোসাইটির প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে ‘অগ্রদূত’ নামের একটি রোবট প্রস্তুত করছেন রুয়েটের একদল তরুণ শিক্ষার্থী। চলতি বছরের জুনে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব রোবার চ্যালেঞ্জে অনুষ্ঠিত হবে এ প্রতিযোগিতা। সেখানে অংশ নেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে গোটা বিশ্বের ৫৩টি দল। দলগুলো তাদের তৈরি রোবটের ক্রিটিক্যাল ডিজাইন রিভিউ পাঠাবে মার্স সোসাইটিতে। এসব নকশার মধ্যে যেসব মার্স সোসাইটির পছন্দ হবে সেগুলো অংশ নেবে প্রতিযোগিতায়। এ প্রতিযোগিতায় বাছাইকৃত রোবটের নমুনাটি সংগ্রহ করবে নাসা। প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ থেকে রেজিস্ট্রেশন করেছে ১২টি দল। এর মধ্যে ১টি দল রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯ জন শিক্ষার্থীর দলটির তৈরি এ রোবটটির নাম ‘অগ্রদূত’। মেকাট্রনিক্স বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুকিদুর রহমানের নেতৃত্বে গত অক্টোবরে শুরু হয় রোবট তৈরির কাজ। ‘অগ্রদূত’ মঙ্গলগ্রহে যে কোনো অভিযান চালাতে সক্ষম এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে অভিযান চালিয়ে সেখানকার আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি, বিষাক্ত যে কোনো গ্যাস শনাক্তকরণ, ভূ-প্রকৃতির গঠন ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্যাদি অনুসন্ধান ও ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠাতে পারবে। রুয়েট শিক্ষার্থীদের এখন স্বপ্ন আগামী জুনে ইউনিভার্সিটি রোবার চ্যালেঞ্জের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া।

 

 

কিন্তু এ স্বপ্নযাত্রায় আছে অনেক বিপত্তি, অর্থনৈতিক বাধাও। তার পরও থেমে নেই তাদের পথচলা। আত্মবিশ্বাসের সুরে অগ্রদূত তৈরির দলনেতা মুকিদুর রহমান বলছিলেন, ‘ঘুমের মধ্যে দেখা স্বপ্ন স্বপ্ন নয়, স্বপ্ন হলো যা ঘুমাতে দেয় না।’ এ যেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত এ পি জে আবদুল কালামের কণ্ঠের প্রতিধ্বনি। তিনি আরও বলেন, ‘এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে ১২টি দল অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ১টি। প্রথমে আমরা এ প্রতিযোগিতার জন্য নিবন্ধন করি। আর এ নিবন্ধনের জন্য সম্পূর্ণ খরচ দিয়েছেন উপাচার্য রফিকুল আলম বেগ স্যার। এখন চলছে পূর্ণাঙ্গ রোবট তৈরির কাজ। কিন্তু এ কাজটি সম্পন্ন করার জন্য ৪-৫ লাখ টাকা প্রয়োজন। এ ছাড়া অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতিরও দরকার।’

এতসব সীমাবদ্ধতার মধ্যে রোবটটি তৈরি সম্ভব হবে কিনা— এমন প্রশ্নে তিনি দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, ‘আমরা যখন প্রাথমিকভাবে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছি তখন মার্চে অনুষ্ঠেয় প্রতিযোগিতার জন্য আমাদের পূর্ণাঙ্গ রোবট তৈরি সম্পন্ন করতে পারব।’

মার্চে মার্স সোসাইটিতে রোবট ‘অগ্রদূত’-এর ক্রিটিক্যাল ডিজাইন রিভিউ পাঠাতে হবে। আর এজন্য পরিকল্পনা অনুযায়ী দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন মুকিদুর রহমান ও তার দল। বছরের শুরুর দিন ১ জানুয়ারি রোবটটির আনুষ্ঠানিক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয় রুয়েট শহীদ মিনার চত্বরে। প্রদর্শনী দেখতে সেখানে জমায়েত হন রুয়েটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

রুয়েট শিক্ষার্থীদের নানা উদ্ভাবনের পেছনে   কারিগরি ও প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা করে আসছে রোবোটিক সোসাইটি অব রুয়েট। এ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ড. রোকনুজ্জামান বলেন, ‘রুয়েট শিক্ষার্থীরা যে রোবট তৈরি করেছে তা বাংলাদেশের জন্য গর্বের। তবে এ রোবটটি এখন পর্যন্ত প্রদর্শন-উপযুক্ত। মূল রোবট তৈরির কাজ চলছে। এটা তৈরির জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন; যা আমাদের সংগঠনের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি স্পন্সরশিপ নেয় তবে আরও ভালোভাবে কাজটি শেষ করা সম্ভব হবে।’ শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন এবং বাস্তবতা এক সুতায় গাঁথতে প্রতিনিয়ত যে মানুষটি উৎসাহ ও সহযোগিতা করে আসছেন তিনি রুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল আলম বেগ। রোবট ‘অগ্রদূত’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মঙ্গলগ্রহে অভিযান চালাতে সক্ষম এ রোবট তৈরি করে রুয়েট শিক্ষার্থীরা আবারও তাদের সৃজনশীলতা ও সক্ষমতার প্রমাণ রাখল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে তাদের প্রতি সহায়তার ধারা অব্যাহত থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যাতে এমন নানা উদ্ভাবনের প্রতি আরও বেশি আগ্রহী হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর