শনিবার, ৭ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
জাস্টিস ফর উইমেন বাংলাদেশ

সাইবার ক্রাইম রুখতে লড়াকু তারুণ্য

তারুণ্য

সাইবার ক্রাইম রুখতে লড়াকু তারুণ্য

জাস্টিস ফর উইমেন বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ইফরীত জাহিন কুঞ্জ

ইফরীত জাহিন কুঞ্জ। মেধা, পরিশ্রম ও সৃজনশীল কাজ দিয়ে নিজেকে নিয়ে গেছেন উচ্চতার শিখরে। তিন ভাইবোনের মধ্যে তিনিই বড়। তিনি শহীদ বীরউত্তম ল্যা. আনোয়ার গার্লস কলেজ থেকে ২০১০ সালে এসএসসি ও ২০১২ সালে এইচএসসি-তে জিপিএ-৫ নিয়ে পাস করেন। বর্তমানে পড়ছেন ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজে তৃতীয় বর্ষে। রিটায়ার্ড সেনা অফিসার বাবা ও গৃহিণী মায়ের আদরের মেয়ে কুঞ্জ ছোট থেকেই ছিলেন দারুণ চঞ্চল। আর্থিক সচ্ছল পরিবারের মেয়ে হয়েও কুঞ্জের জীবনযাপন খুবই সাদামাটা। অসহায় মানুষের আইনি সহায়তা প্রদানে গড়ে তুলেছেন জাস্টিস ফর উইমেন, বাংলাদেশ। প্রতিনিয়ত পরের উপকারে খেটে যাওয়া কুঞ্জের চোখে-মুখে আগামীর স্বপ্ন পূরণের পুলকিত আভা। সাহায্য পাওয়া ভিকটিমদেরও আত্মার আত্মীয় এই তরুণী।

 

কাজের শুরু যেভাবে

ছোট থেকেই আশপাশে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনা মেনে নেওয়া কুঞ্জের জন্য অসম্ভব ছিল। কুঞ্জ বলেন, ‘যখন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে পারতাম না, তখন মানসিকভাবে ভেঙে পড়তাম। শেষমেশ পরিকল্পনা করি আত্মহত্যার। কিন্তু আবার রুখে দাঁড়ালাম অন্যায়ের বিরুদ্ধে।’ আশপাশের অসংগতি ও অন্যায়গুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে সোশ্যাল মিডিয়াতে মানুষজনদের আইনি সহায়তা দেওয়া শুরু করলেন। কয়েকজন পুলিশ অফিসার ও আইনবিদ বন্ধুর   সাহায্য নিয়ে ঢাকায় প্রতিষ্ঠা করলেন জাস্টিস ফর উইমেন, বাংলাদেশ। কুঞ্জ জানান, ফেসবুকে আমাদের কাজের পোস্ট-শেয়ার দেখে এগিয়ে আসেন অনেকে। তখন ময়মনসিংহ শহরের একটি জনসেবামূলক ফাউন্ডেশন হেল্প এইডকে সঙ্গে নিয়ে ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে কুঞ্জ জাস্টিস ফর উইমেন, বাংলাদেশকে রেজিস্ট্রেশন করেন। কাজের পরিধি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সেবা দিতে শুরু করল ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, আমেরিকা ও ব্রাজিলে।

 

উল্লেখযোগ্য কাজ

কুঞ্জের হিসাব অনুযায়ী প্রতিদিন কমপক্ষে ১০টি সমস্যা আমাদের কাছে জমা হয়। কখনো বেশিও থাকে। গত দুই বছরে কয়েকশ কাজ তারা করেছেন বলে কুঞ্জের দাবি। কিছুদিন আগে ফেসবুকে বিশিষ্টজন ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের আপত্তিকর ছবি এবং ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে ‘ডেসপারেটলি সিকিং আনসেন্সরড (ডিএসইউ)’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপকে ধরা হয়। এমন অনেক কাজের পেছনে তারা আছেন।

 

দশে মিলে করি কাজ

কুঞ্জ বলেন, প্রথমেই আমি ধন্যবাদ জানাব মার্ক জাকারবার্গকে। তার আবিষ্কার ফেসবুক আমার কাজের জন্য সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম। ফেসবুকে জাস্টিস ফর উইমেন, বাংলাদেশের ওপেন পেজের মাধ্যমে আমার সঙ্গে নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে শুরু করে রেজিস্টার সাড়ে ছয় হাজারের ওপরে ভলান্টিয়ার এবং আনরেজিস্টার অসংখ্য ভলান্টিয়ার যুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে পেজটির ফলোয়ার ৩০ হাজারের ওপরে, সদস্য ১ লাখ ২৫ হাজারের বেশি। সেবা নিয়েছেন সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে থাকা ভিকটিমরা।

 

যেসব সেবা মিলছে

— সাইবার ক্রাইম মামলায় আইনজীবী ও পুলিশ দিয়ে সহায়তা করা।

— গৃহস্থালি নির্যাতনে আইনি সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া।

— সক্ষম বাঙালি প্রবাসীর সহায়তা নিয়ে অসহায় প্রবাসী বাঙালিকে সাহায্য করা হয়।

— সোশ্যাল নুইসেন্স নিয়ে জনমত গড়ে তোলাসহ নানা সামাজিক অসংগতির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া।

— নির্যাতিত ছেলেদের জন্যও আছে জাস্টিস ফর ম্যান।

 

যত বাধা

প্রথমদিকে পরিবার থেকে বকাঝকা করত। বন্ধুরা হাসাহাসি করত। তবে ইচ্ছা আর লক্ষ্য অটল থাকায় আজকের এই অবস্থান। এখন অনেকেই সাহায্য করছে। কুঞ্জ বলেন, আমিসহ আমার ভলান্টিয়াররা নানারকম ঝুঁকির মধ্যে কাটাচ্ছি। এমনকি সিলেটে আমাদের এক ভলান্টিয়ারের ওপর সশস্ত্র হামলাও হয়েছে।

 

আগামীর স্বপ্ন

কুঞ্জের মতে, অপরাধী খুঁজলে দেশে কয়েক কোটি পাওয়া যাবে। এখন এত সংখ্যক অপরাধীকে কারাগারে বেকার বন্দী রাখলে সামাজিক সুফল আসবে না। তাদের মানসিক সহায়তা ও কারাগারের অভ্যন্তরে কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। অসহায় মেয়েদের জন্য একটি সেফহোম থাকবে, যাতে তারা নিরুপায় হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে না নেন। একই সঙ্গে একটি বৃদ্ধাশ্রম ও অনাথ আশ্রম খোলার ইচ্ছাও আছে তার। সেখানে মেডিকেল কলেজ স্থাপনের স্বপ্নও দেখেন এই তরুণী। কলেজটিতে ৩০০ সিটের ব্যবস্থা থাকবে। সহায়সম্বলহীন ছেলেমেয়েরা বিনা খরচে পড়বে। তাদের আয়ের একাংশ দিয়ে চলবে বৃদ্ধাশ্রম, অনাথ আশ্রম ও সেফহোম। কুঞ্জ বলেন, আমার এই স্বপ্ন পূরণ না করে মৃত্যু হলে পরপারে গিয়েও শান্তি পাব না।

আপনি যদি হেল্প চান

বিপদ সব সময় অনাকাঙ্ক্ষিতই হয়। আপনার সামাজিক পরিচিতি ও সম্মানকে পুঁজি করে অনেকেই হয়তো বিপদে ফেলতে চাইছে। আইনের আশ্রয়ও নিতে পারছেন না। এই অবস্থায় সঠিক সমাধান জাস্টিস ফর উইমেন, বাংলাদেশের সাহায্য নিতে পারেন। Justice For Women, Bangladesh - JFWBD ফেসবুক পেজে গিয়ে যে কেউ সাহায্যের আবেদন করতে পারেন। সাহায্য পেতে ইনবক্স করা, গ্রুপে পোস্ট দেওয়া বা পেজে দেওয়া নম্বরে কল করেও আপনার সমস্যা জানাতে পারেন।

সর্বশেষ খবর