শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

‘জিরো’ থেকে ‘জারা’

শনিবারের সকাল ডেস্ক

‘জিরো’ থেকে ‘জারা’

স্পেনের এক রেলকর্মীর সন্তান আমানসিও ওর্তেগা বরাবরই চাইতেন অন্যরকম কিছু করতে। টেইলারিং দিয়ে কর্মজীবন শুরু করে অল্প বয়সেই শুরু করেন ইন্ডিটেক্স নামে একটি কাপড় তৈরির প্রতিষ্ঠান। সেখান থেকে বিশ্বখ্যাত ফ্যাশন হাউস ‘জারা’-এর আবির্ভাব। ফ্যাশন দুনিয়ায় এখন তার সামনে আছে শুধু গ্যাপ ও হেনেস অ্যান্ড মার্তিজের মতো ব্র্যান্ড। বর্তমানে তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় ধনাঢ্য ব্যক্তি। ফ্যাশন জগতের এই পথিকৃেক নিয়েই আজকের আয়োজন...

 

১৯৬৪ সালে মুক্তি পেয়েছিল ব্রিটিস-গ্রিক কমেডি ড্রামা ঘরানার ‘জোরবা দ্য গ্রিক’ মুভিটি। অ্যান্তনি কুইন ও অ্যালান বেটস অভিনীত মুভিটি তখন ব্যাপক সারা জাগায় গোটা দুনিয়ায়। এরও দশ বছর পর মুভিটির নাম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এক স্প্যানিশ কাপড় ব্যবসায়ী ‘জেরবা’ নামে শুরু করলেন ফ্যাশন হাউস। মজার বিষয় স্পেনের লা করোনাতে শুরু হওয়া ফ্যাশন হাউসটির ঠিক দুই রাস্তা পরেই একই নামে একটি বার আবিষ্কার করেন সেই ব্যবসায়ী। তাই পরবর্তীতে নিজের ফ্যাশন হাউসের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘জারা’। কম খরচে মানসম্মত কাপড় ও আকর্ষণীয় ডিজাইনের সমাহার দিয়ে শুরু করা সেই জারা এখন বিশ্বের অন্যতম প্রধান ফ্যাশন হাউসে পরিণত হয়েছে। গোটাবিশ্বে তার খ্যাতি। আর স্বনামধন্য এই ফ্যাশন হাউসটির প্রতিষ্ঠাতা আর কেউ নন, আমানসিও ওর্তেগা। বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনাঢ্য ব্যক্তি। ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী আশি বছর বয়স্ক আমানসিও ওর্তেগার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমানে ফ্যাশনের গণ্ডি পেরিয়ে বিভিন্ন সেক্টরে পা দিচ্ছেন তিনি। তার মালিকানায় রয়েছে এপিক হোটেল, একটি ৫৪ তলার বিলাসবহুল ভবনসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। ২০১১ সালে বিশ্বখ্যাত ইন্ডিট্যাক্স গ্রুপের প্রধান হিসেবে কাজ শুরু করেন। এর আগে ১৯৬৩ সালে তিনি এবং তার প্রাক্তন স্ত্রী রসিলা মিরা মিলে প্রতিষ্ঠা করেন এই কাপড় তৈরির প্রতিষ্ঠান ইন্ডিটেক্স। এখন বয়স হয়েছে, তাই ব্যবসা নিয়ে নতুনভাবে ভাবতে শুরু করেছেন ওর্তেগা। মেয়ে মার্থার নামে তার সব সম্পত্তি উইল করে দিচ্ছেন তিনি। মেয়েকে ব্যবসা শেখানোর জন্য ইতিমধ্যে তাকে প্রশিক্ষণও দিতে শুরু করেছেন।

 

জন্ম, বেড়ে ওঠা

১৯৩৬ সালে ২৮ মার্চ স্পেনে জন্মগ্রহণ করেন এই ব্যবসায়ী। তিনি থাকেন স্পেনের লা করোনায়। তার বাবা ছিলেন রেল কর্মচারী। এ কারণে স্পেনের কোনো শহরেই স্থায়ী হতে পারেননি তারা। ছুটে বেড়িয়েছেন স্পেনের এক শহর থেকে আরেক শহরে। ওর্তেগার বাবার নাম অ্যানটেনিয় ওর্তেগা রদ্রিগজ ও মায়ের নাম জোসফ গোয়ানা হারনান্দেজ।

 

স্ত্রী ও সন্তান

প্রথম স্ত্রী রসিলা মিরার সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার পর ২০০১ সালে ফ্লোরা প্যারিজ মারকটেকে বিয়ে করেন আমান সিও ওর্তেগা। তিন সন্তানের জনক আমানসিও ওর্তেগা। এরা হলেন সান্দ্রা ওর্তেগা মিরা, মারকেজ ওর্তেগা মিরা এবং মার্তা ওর্তেগা প্যারিজ। উল্লেখ্য, ওর্তেগা প্রথম বিয়ে দিনক্ষণ কোনো এক রহস্যময় কারণে গোপন রেখেছেন। তবে জানা যায় তিনি ১৮ বছর বয়সে প্রথম বিয়ের পিঁড়িতে বসেন।    

 

কর্মজীবন

ফ্যাশন হাউসকে ঘিরে যারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছেন সবাই এমান্সিও ওর্তেগাকে গুরু মানেন। তিনি রীতিমতো ফ্যাশন বিপ্লব ঘটিয়েছেন। কিন্তু কর্মজীবনে প্রথমে টেইলারিং শুরু করেন। প্রতিষ্ঠা করেন ইন্ডিটেক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠান। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ‘জোবরা’ নামের ফ্যাশন হাউস যা পরবর্তীতে ‘জারা’ নামে বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করে। নামকরণের ইতিহাস শুরুতেই অলোচনা করেছি। বর্তমানে ‘জারা’ ইন্ডিটেক্স গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এতে কাজ করছেন প্রায় ৯২ হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী। জারা’র পর আরেক ব্র্যান্ড গোয়া ও সেমলর প্রতিষ্ঠান করেন ১৯৭৭ সালে। পুর্তুগালে প্রথম জারার স্টোর প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৮৮ সালে। নিউইয়র্কে প্রথম জারার স্টোর আসে ১৯৮৯ সালে। এর ঠিক এক বছরের মাথায় ফ্রান্সে প্রথম জারা’র স্টোর স্থাপিত হয় ১৯৯০ সালে। এরপরই পল অ্যান্ড বিয়ার ও মাসিমোডুত্তি শুরু করেন ১৯৯১ সালে।

 

নজিরবিহীন সাফল্য

আমানসিও ওর্তেগা নজিরবিহীন ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করেছেন। বিশ্বের শীর্ষ ধনী বিলগেটসকে কয়েকবার পিছনে ফেলেছেন ওর্তেগা। সর্বোশেষ গত বছরের শেষ দিকে তিনি বিলগেটসকে ছাপিয়ে বিশ্বের শীর্ষধনীর খেতাব অর্জন করেছিলেন। বর্তমানে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ওর্তেগার সম্পদের মূল্যমান ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

সাধারণ জীবনযাপন

ওর্তেগা বরাবরই খুব সাধারণ জীবনযাপন করেছেন। এমনকি ১৯৯৯ সালের আগে কোথাও ওর্তেগার কোনো ছবি প্রকাশ পায়নি। তিনি প্রচুর অর্থ ব্যয় করে থাকেন নিজের ব্যক্তিগত গোপনীয়তায়। মজার ব্যাপার আমানসিও ওর্তেগা প্রতিদিন একই কফিশপে কফি খেতে যান এবং প্রতিদিন কোম্পানির ক্যাফেটেরিয়ায় কর্মচারীদের সঙ্গে বসে একসঙ্গে দুপুরের খাবার খান। আরও মজার বিষয় হলো একেবারে সাধারণ জীবনযাপন করা অসাধারণ এই মানুষটি সবসময় সাদা শার্ট, নীল ব্লেজার আর গ্রে প্যান্ট পরে অফিস করেন। কখনোই এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।  

 

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াও আমানসিও ওর্তেগা সাফল্যের শীর্ষে অবস্থান করছেন। যে কারও জন্য তিনি অনুপ্রেরণীয়। তাই বিশ্বজুড়ে উদ্যোক্তরা আমানসিও ওর্তেগাকে অনুসরণ করেন।

 

জারার বিখ্যাত উক্তি

ব্যবসা

‘ব্যবসায়িক সাফল্য নির্ভর করে কম দামে ফ্যাশনে আপনি কতটা সর্বাধুনিক পণ্য ক্রেতাকে দিতে পারছেন তার ওপর, এর জন্য ব্যবসায়ে পণ্য তৈরি, বাজারজাতকরণ এবং বিক্রির মধ্যে সমন্বয় এনে খরচ কমিয়ে আনতে হবে।’

জীবন

‘জীবনে অন্তত তিনবার সংবাদপত্রের খবর হতে হবে- জন্মের সময়, মৃত্যুর সময় এবং বিয়ের সময়।’

কর্ম

‘আমি যতদিন বেঁচে আছি ততদিনই কাজ করে যাব।’

যাপিত জীবন

‘আমি জীবনের চলার পথে আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং সহকর্মীদের দ্বারা পরিচিত হতে চাই।’

সামর্থ্য

‘বিনিয়োগকারীদের সুবিবেচনায় আসতে সবসময় লাভজনক সাফল্যে সামর্থ্য ব্যবহার করতে হবে।’

গ্রাহক দর্শন

‘ব্যবসায়িক মডেল সর্বদা চালিত হয় গ্রাহক দ্বারা।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর