শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

মুদির দোকান থেকে মহাকাশ যাত্রা

শনিবারের সকাল ডেস্ক

মুদির দোকান থেকে মহাকাশ যাত্রা

২৬ বছরের যুবক বিকাশ অগ্রবাল। ভারতের ছত্তিশগড়ের এই যুবক এখন মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে উঠেছেন। ইচ্ছা থাকলে উপায় হয় কথাটির যথাযথ মর্যাদা দেখিয়েছেন এই যুবক। প্রবল ইচ্ছাশক্তি যে মানুষকে মহাকাশেও নিয়ে যেতে পারে, তারই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।

মাত্র এক বছর আগে বিকাশ অগ্রবাল মুদি দোকানে জিনিস বিক্রি করতেন। অথচ আজ তিনিই ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন বা ইসরোর বিজ্ঞানী দলের সদস্য। ইতিমধ্যে একসঙ্গে ১০৪টি উপগ্রহ মহাকাশে সফল উেক্ষপণ করে গোটা বিশ্বে অনন্য নজির তৈরি করেছে ভারত। এই প্রকল্পে কাজ করছেন এই তরুণ বিজ্ঞানী। ছত্তিশগড়ের কোরবা শহরের বাসিন্দা বিকাশ বরাবরই মেধাবী ছাত্র। পারিবারিক ব্যবসা মুদির দোকান। তাই পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গেই ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে পারিবারিক মুদি দোকানে বাবাকে সাহায্য করতে হতো বিকাশকে। সেই থেকে গত বছর পর্যন্তও এই দোকানেই চাল, ডাল, তেল, নুন বিক্রি করতেন বিকাশ। আর এখন সার্ভিস দিয়ে যাবেন ইসরোর বিজ্ঞানী হিসেবে। নিজের মেধা আর মননের সংমিশ্রণে মেলে ধরবেন নিত্যনতুন প্রযুক্তির অচিন্তনীয় সব সম্ভাবনার দুয়ার। যদিও বিকাশের বাবার ইচ্ছা ছেলেও তার মতো পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরুক। কিন্তু সে ইচ্ছায় এখন গুড়েবালি। তাতে আফসোস নেই। বিকাশের এমন সাফল্যে বাবা হিসেবেও এখন ছেলেই তার গর্বের কারণ।  ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই একা একাই পড়াশোনা করতেন বিকাশ। এমনকি বর্তমানে যেখানে শিশু শ্রেণি থেকেই বাবা-মা’রা ভালো মনের গৃহশিক্ষকের জন্য উঠে পড়ে লাগে সেখানে জীবনে কখনো গৃহশিক্ষকের সাহায্য নেননি বিকাশ। এরপর গত বছর ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন বা ইসরোর পরীক্ষা দিয়ে ২ লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে পঞ্চম স্থান দখল করেন তিনি।

বর্তমানে ইসরোর তিরু অনন্ত পুরম সেন্টারে কর্মরত রয়েছেন বিকাশ। নিরাপত্তাজনিত কারণেই ইসরোর অভিযান নিয়ে সংবাদমাধ্যমের কাছে ইনফরমেশন প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে তার সম্পর্কে খুব বেশি আসেনি আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে।

মূলত রকেটের ওপরের যে অংশে উপগ্রহ বহন করা হয় সেই অংশটি তৈরি করতে   সাহায্য করেছেন বিকাশ অগ্রবাল। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস ছিল ছোটবেলা থেকেই। মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। বিকাশের স্বপ্ন ছিল বিজ্ঞানী হবেন; হয়েছেনও তাই।  বিকাশ দোকানে বেচাকেনা করার মাঝে যেটুকু সময় পেতেন ওইটুকু সময়ই পড়াশোনার কাজে লাগাতেন। নিজের বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্নপূরণ করতে গভীর রাত পর্যন্তও পড়তে হয়েছে তাকে। দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় ৮৯ শতাংশ নম্বর পান বিকাশ। এরপর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হন তিনি। গোটা দেশের মধ্যে বিকাশের র‌্যাঙ্ক ছিল ১৬০০। কিন্তু বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে পড়াশোনার অনুমতি পাননি বিকাশ।

একদিন বাড়ির লোকজনকে কিছু না জানিয়েই ২০১৪ সালে ইসরোর পরীক্ষায় বসেন বিকাশ। সেবার সফলতা পাননি। কিন্তু নিজের অদম্য ইচ্ছাশক্তির কারণেই হোক আর বিধির বিধান যাই হোক না কেন হাল না ছেড়ে চেষ্টা করে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন তিনি। যার ফলেই ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে ফের ইসরোর পরীক্ষায় বসেন তিনি। এবারে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। দুই লাখ পরীক্ষার্থীর মধ্যে থেকে ৫ নম্বর র‌্যাঙ্ক পান বিকাশ। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মোট ৩০০ জনের ইন্টারভিউ নেয় ইসরো। তার মধ্যে নির্বাচিত হন বিকাশ। শুরু হয় বিকাশের মহাকাশযাত্রা।

সর্বশেষ খবর