শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা
অনুপ্রেরণীয়

রেস্টুরেন্ট গার্ল থেকে বিশ্বতারকা

শনিবারের সকাল ডেস্ক

রেস্টুরেন্ট গার্ল থেকে বিশ্বতারকা

শাকিরা

সিনেমার নায়িকা বা মডেল নন, তবে মঞ্চ কাঁপান কণ্ঠে রিদমিক গান আর কঠিন নাচের কম্বিনেশন দিয়ে। প্রজন্মের হার্টথ্রব হিসেবে বিশ্ব মাতিয়ে রাখতে শাকিরা কম যান না। ছোটবেলাতেই দারিদ্র্যের ঝড় হয়তো তাকে উড়িয়ে  দিতে পারত। কিন্তু কঠিন লক্ষ্যভেদী এই নারী জয় করেছেন সব কষ্টকে। এক সময় রেস্টুরেন্টে কাজ করলেও আজ বিশ্বতারকা।

 

শাকিরা ইসাবেল মেবারাক রিপোল। গানের জাদুতে পৃথিবী বিখ্যাত শাকিরা।  কলম্বিয়ার বারানকিলাতে জন্মেছেন ১৯৭৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারিতে। কলম্বিয়ান এই গায়িকা একই সঙ্গে গীতিকার, সুরকার, সংগীত প্রযোজক, নৃত্যশিল্পী ও জনহিতৈষী হিসেবেও খুব পরিচিত। স্কুল জীবনে সরাসরি উপস্থাপনার মাধ্যমে নিজের প্রতিভার প্রকাশ ঘটাতে শুরু করেন। সেখানে তার নিজস্ব বেলি ড্যান্সিংয়ের সঙ্গে কণ্ঠে স্বার্থকভাবে রক অ্যান্ড রোল, ল্যাটিন, পূর্ব মধ্যপ্রাচ্যের সংগীত ফুটিয়ে তুলতেন। শাকিরার মাতৃভাষা স্প্যানীস হলেও, তিনি অনর্গল ইংরেজি, পর্তুগিজ এবং ইতালীয় ভাষায় কথা বলতে পারেন।

 

বিত্তশালী পরিবারে জন্ম হলেও হঠাৎই তাদের পরিবারে নেমে আসে চরম অনিশ্চয়তা। তখন শাকিরার বয়স মাত্র আট বছর। ব্যবসায় ধস নামলে শাকিরার বাবা অর্থাভাবে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন। ভরণপোষণের দায়িত্ব ছেড়ে দেন আত্মীয়দের ওপর। কিছুদিন পর শাকিরা নিজ শহরে ফিরে এসে দেখেন তাদের আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। শাকিরার গান-নাচ সব থেমে যাওয়ার উপক্রম। কিন্তু বড় হয়ে যিনি বিশ্ব মাতাবেন, তার তো থেমে যাওয়া চলে না। শত প্রতিকূলতার মাঝেও তিনি নিজের আত্মবিশ্বাস অটুট রেখে সংগীতচর্চা অব্যাহত রাখেন। গানের টানে শাকিরা নিজ শহর বারানকিলা থেকে চলে যান রাজধানী শহর বোগোটায়। শুরুতে নিজের খরচ চালানোর জন্য বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে। বার, রেস্টুরেন্টসহ বেশকিছু জায়গায় পার্টটাইম কাজ করেছেন।

পাশাপাশি ঘরে ও বন্ধুদের সামনে অব্যাহত রেখেছে গান শোনানো।

 

নিদাইয়া দেল কারমেন রিপোল তোর্রাদো এবং লেবানিজ বংশোদ্ভূত উইলিয়াম মেবারাক শাদিদ দম্পত্তির একমাত্র সন্তান শাকিরা। মোট ভাইবোনের সংখ্যা আট, যারা সবাই তার বাবার আগের স্ত্রীর গর্ভজাত। তার দাদা-দাদি লেবানন থেকে নিউইয়র্কে বসবাস করা শুরু করেন এবং সেখানেই তার বাবার জন্ম হয়। এরপর ৫ বছর বয়সে তার বাবা নিউইয়র্ক থেকে কলম্বিয়াতে চলে আসেন।

 

কলম্বিয়ার স্থানীয় প্রযোজকদের সহায়তায় শাকিরার সংগীত জীবনের প্রথম দুটি অ্যালবাম প্রকাশ পায়। দুর্ভাগ্যবসত সেগুলো কলম্বিয়ার বাইরে খুব একটা পরিচিতি পায়নি। পরবর্তীতে শাকিরা নিজেই নিজের অ্যালবাম প্রযোজনার সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৯৫ সালে প্রকাশ করেন অ্যালবাম ‘পিয়েস দেসকালসোস’। এই অ্যালবামই তাকে লাতিন আমেরিকা ও স্পেনে খ্যাতি এনে দেয়। শ্রোতাদের কাছে তাকে একজন রহস্যময় সংগীতশিল্পী হিসেবে চিহ্নিত করে। কিন্তু ১৯৯৮ সালে ‘দোন্দে এস্তান লোস লাদ্রোনেস’ অ্যালবামটি শিল্পী হিসেবে তার গুরুত্ব বাড়াতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে। এই অ্যালবামটির জন্য তিনি রোলিং স্টোন, অল মিউজিক গাইড এবং বিলবোর্ড ম্যাগাজিনের সংগীত সমালোচকদের কাছ থেকে উৎসাহব্যাঞ্জক সাড়া পান।

 

তিনি দুবার গ্র্যামি পুরস্কার, সাতবার ল্যাটিন গ্র্যামি পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কারের জন্যও মনোনীত হয়েছিলেন। বিএমআইয়ের তথ্যানুসারে, তিনি ব্যবসায়িকভাবে সফল দ্বিতীয় ল্যাটিন অ্যামেরিকান নারী শিল্পী, যার অ্যালবাম বিশ্বে পাঁচ কোটি কপি বিক্রীত।

এ ছাড়াও তিনি দক্ষিণ আমেরিকা থেকে সুযোগ পাওয়া একমাত্র শিল্পী যিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিলবোর্ড হট ১০০, কানাডিয়ান বিলবোর্ড হট ১০০, অস্ট্রেলিয়ান এআরআইএ চার্ট, ও ইউকে সিঙ্গেলস চার্টে প্রথম স্থান পাওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। হলিউড ওয়াক অফ ফেইমে একজন তারকা হিসেবে শাকিরা পুরস্কৃত হয়েছেন।

 

শাকিরার মাঝে কৃতজ্ঞতাবোধ তৈরি করতে তার বাবা মাঝেমাঝে অনাথ শিশুদের দেখাতে নিয়ে যেতেন। সেই দৃশ্যগুলো তার মনে গেঁথে যায়। একদিন তিনি এই শিশুদের সাহায্য করবেন বলে মনে মনে ঠিক করেন। শাকিরার একটি অলাভজনক ফাউন্ডেশন রয়েছে। নিজের জনপ্রিয় অ্যালবাম ‘পিয়েস ডেসক্যালজোস’-এর নামে ১৯৯৭ সালে শাকিরা তার ফাউন্ডেশন গড়ে তোলেন নিজ দেশে। সার্বজনীন শিক্ষার প্রচারই এর মূল উদ্দেশ্য।

যার অর্থায়নে তিনি মানব সেবার কাজ করে থাকেন। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি আটটি বিদ্যালয় গড়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন চ্যারিটেবল কনসার্টে তিনি অংশগ্রহণ করেন, তার বিভিন্ন অ্যালবাম ও গান থেকে অর্জিত কিছু অর্থ তিনি এই ফাউন্ডেশনে দান করেন। এ ছাড়া তিনি যুক্ত আছেন ক্লিনটন গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে।

 

শাকিরা সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা সাইটে একটি নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়েছেন। তিনি ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যে কিনা ফেসবুকে ১০০ মিলিয়ন লাইক পেয়েছেন। শাকিরার প্রথম প্রেমিকের নাম অ্যান্টোনিও। দীর্ঘ ১১ বছর একসঙ্গে থাকার পর পৃথক হন।

এরপর স্প্যানিশ ফুটবল তারকা জেরার্ড পিকেকে নতুন সঙ্গী হিসেবে বেছে নেন। এখন তাদের সংসারে রয়েছে একটি ছেলে সন্তান।

    

যেভাবে ক্যারিয়ারের শুরু

মাত্র চার বছর বয়সে শাকিরা প্রথম কবিতা লিখেন, যার শিরোনাম ছিল ‘লা রোসা দে ক্রিস্টাল’। অর্থাৎ স্ফটিকের গোলাপ। সেই বয়সেই স্থানীয় মিডল ইস্টার্ন রেস্টুরেন্টে প্রথমবার ডোম্বেক শোনেন এবং টেবিলের উপর উঠে নাচতে শুরু করেন। সাত বছর বয়সে বাবাকে একটি টাইপরাইটারের গল্প লিখতে দেখে আগ্রহী হন। বড়দিনের উপহার হিসেবে একটি টাইপরাইটার চেয়ে নেন। তখন থেকেই তিনি কবিতা লেখা চালিয়ে যান। তার কবিতাগুলো ক্রমেই গানে রূপ নেয়। দুই বছর বয়সে শাকিরার এক বড় সৎ ভাই মারা গেলে শোকাতুর বাবাকে চার বছর কালো চশমা পরে থাকতে দেখেছেন। সেটা নিয়ে শাকিরা আট বছর বয়সে প্রথম গান লেখেন ‘তুস গ্রাফাস ওসকুরাস’ অর্থ তোমার কালো চশমা। তিনি স্কুলের সহপাঠী ও শিক্ষকদের গান শোনাতে ভালোবাসতেন। প্রতি শুক্রবারে তার শেখা বেলি ড্যান্সিংয়ের ধাপগুলো স্কুলে করে দেখাতেন। এভাবেই তিনি লাইভ পারফরম্যান্সের প্রতি নিজের ভালোবাসা আবিষ্কার করেন। কিন্তু দরিদ্র পরিবারে নিজের প্রতিভার চর্চায় বেগ পেতে হয়। বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে জীবিকা অর্জন করেছেন। পাশাপাশি চালিয়েছেন নাচ-গানের চর্চা।

সর্বশেষ খবর