শনিবার, ৩ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
সাবিনা আক্তার

টাওয়ার হ্যামলেটসে বাঙালি স্পিকার

সাইফ ইমন

টাওয়ার হ্যামলেটসে বাঙালি স্পিকার

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তের স্থানীয় সরকারে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাউন্সিলরের সংখ্যা বছর বছর বাড়ছেই। সেই সঙ্গে এসব কাউন্সিলর আসীন হচ্ছেন স্থানীয় সরকারের শীর্ষ পদে। নিজেদের প্রমাণ করে চলেছেন প্রতিনিয়তই, নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্পিকার, মেয়র ও ডেপুটি মেয়র হিসেবেও। যুক্তরাজ্যে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা অনেক। কাউন্সিল নামে পরিচিত স্থানীয় সরকারের আওতাধীন এলাকার বাসিন্দাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসন, নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতাসহ যাবতীয় সেবা প্রদানের কাজটি করে থাকে। আর কাউন্সিল পরিচালনা ও এর নীতিনির্ধারণ করেন নির্বাচিত কাউন্সিলররা। সম্প্রতি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাউন্সিলর সাবিনা আক্তার স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছেন। এর আগে কাউন্সিলর নির্বাচনে ১ হাজার ৬৪৩ ভোট পেয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন সাবিনা আক্তার। তখন তিনি পরাজিত করেন ১ হাজার ৪৭২ ভোট পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু তালহা চৌধুরীকে।

 

পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের স্পিকার হয়েছেন কাউন্সিলর সাবিনা আক্তার। টাওয়ার হ্যামলেটসে প্রথম বাঙালি নারী হিসেবে তিনি এই দায়িত্ব লাভ করলেন। গত টার্মে তিনি ডেপুটি স্পিকার ছিলেন। গত ১৭ মে রাতে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের এজিএমে তিনি নির্বাচিত হন। এজিএমে টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র জন বিগস এই পদে নাম প্রস্তাব করেন। তার প্রস্তাবটি সমর্থন করেন ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলর র‌্যাচেল সন্ডার্স। সাবিনা আক্তার প্রায় ২০ বছর ধরে লেবার পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। এই পার্টির আরেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব রুশনারা আলী অভিনন্দন জানান সাবিনা আক্তারকে। তিনি বলেন, প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নারী হিসেবে সাবিনা আক্তার ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন।

 

স্পিকার হিসেবে কাউন্সিলর সাবিনা আক্তারের মূল কাজ কাউন্সিলের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করা এবং অধিবেশন পরিচালনা করা। রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠান থেকে কাউন্সিলের প্রতিনিধিত্ব করবেন তিনি। আরও একটি গুরুত্ব কাজ হলো তিনি ‘স্পিকার্স ডিনার’ আয়োজনের মধ্য দিয়ে নিজের পছন্দমতো দাতব্য সংস্থার জন্য তহবিল প্রদান করবেন। সাবিনার সঙ্গে ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আরেক কাউন্সিলর আয়াছ মিয়া। এছাড়াও সাবিনা আক্তার লন্ডনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। ইনার নর্থ ইস্ট লন্ডন জয়েন্ট হেলথ ওভারভিও অ্যান্ড সিকিউরিটি কমিটির সদস্য তিনি। আবার স্ট্র্যাটেজিক ডেভেলপমেন্ট কমিটিরও সদস্য সাবিনা আক্তার।

 

পূর্ব লন্ডনে জন্ম নেন এই বাঙালি নারী। তার আদি পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায়। জন্ম লন্ডনে হলেও সাবিনা বাংলাদেশের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি ভালোবাসেন। প্রায়ই বাংলাদেশে আসেন সাবিনা আক্তার। এ প্রসঙ্গে তিনি গণমাধ্যমে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমার সম্পর্ক এখনো অটুট। প্রায় প্রতি বছরই আত্মীয়দের সঙ্গে সময় কাটাতে বাংলাদেশ ঘুরে আসি। পেশায় হেমাটোলজিস্ট এই বাঙালি নারী কাজ করেন জর্জ ইউনিভার্সিটি মেডিকেল কলেজে। এর পাশাপাশি তার স্বাস্থ্য ও রূপচর্চাবিষয়ক প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।

স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় তিনি তার কাউন্সিলর নির্বাচনী প্রচারণায় স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দেন। বর্তমানে তিনি সাফল্যে সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছেন। সাবিনা আক্তার স্থানীয় কমিউনিটিতে খুবই সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। ফলে দিন দিন তার জনপ্রিয়তার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী। তিনি সড়ক ক্রসিংয়ের জন্য পিটিশন সংগঠিত করার পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠনে নিয়মিত অংশগ্রহণ করছেন। সাবিনা আক্তার সবাইকে পাশে নিয়ে স্থানীয় জীবন উন্নয়নে কাজ করে যাবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। 

 

বর্তমানে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের মোট ৪৭ জন কাউন্সিলর রয়েছেন। যাদের মধ্যে ২৬ জনই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। তবে যুক্তরাজ্যে  ৪১৮টি কাউন্সিলে মোট কাউন্সিলরের সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার ৮০০। তবে এই কাউন্সিলগুলো পরিচালনার ধরন ভিন্ন ভিন্ন এবং শীর্ষ পদের নামও ভিন্ন ভিন্ন। কোনো এলাকায় মেয়রই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। আবার কোনো এলাকায় স্পিকারই সর্বোচ্চ পদ। এরা দেশের প্রথম শ্রেণির নাগরিকের পদমর্যাদা পান। শীর্ষ এসব পদে দায়িত্বের মেয়াদ হয় সাধারণত এক বছর। শীর্ষস্থানীয় এই প্রতিনিধিরা ব্রিটিশ রানীর প্রতিনিধি হিসেবেও কাজ করেন। রাজপরিবারের কেউ কোনো কাউন্সিল এলাকায় গেলে সংশ্লিষ্ট কমিউনিটির স্পিকার বা মেয়রই তাকে স্বাগত জানান। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে নির্বাহী মেয়র পদ্ধতি হলেও এখানে স্পিকারের পদটি শীর্ষে।

যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকারে জনপ্রতিনিধি হয়ে কাজ করছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাউন্সিলররা। সম্প্রতি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আরও তিনজন কাউন্সিলর কাউন্সিলে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হয়েছেন। বার্কিং অ্যান্ড ডেগেনহাম কাউন্সিলের অ্যাসেম্বলি প্রধান নির্বাচিত হয়েছেন সৈয়দ ফিরোজ গণি, স্যান্ডওয়েল মেট্রোপলিটন বারা কাউন্সিলের মেয়রের দায়িত্ব পেয়েছেন আহমেদুল হক এবং সুইন্ডন বারা কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন জুনাব আলী।  

সর্বশেষ খবর