শনিবার, ৩ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
আমেরিকায় মুট কোর্ট বিশ্বকাপে

প্রথম বাংলাদেশি বিচারক

শনিবারের সকাল ডেস্ক

প্রথম বাংলাদেশি বিচারক

মুট হলো চর্চার খাতিরে কাল্পনিক মামলার বা কেসের ওপর আলোচনার সমাবেশ। মূলত এটি হচ্ছে একটি কাল্পনিক কেসে আইনের ছাত্রদের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করা। এটি হয়ে থাকে একটি কাল্পনিক কোর্ট, যেখানে বিজ্ঞ জজের আসনে বসেন বিচারকরা। সাধারণত একটি টিমে তিনজন থাকেন, দুইজন মুটার এবং একজন রিসার্চার থাকেন, এমন দুটি টিম থাকে, একাধিক বিচারক থাকেন এবং একজন বেঞ্চ অফিসার থাকেন। মজার বিষয় হলো দুটি টিমকেই নিজেদের পক্ষে ও বিপক্ষে তৈরি করতে হয় কারণ তারা তাদের অবস্থান জানতে পারেন মাত্র পাঁচ কি দশ মিনিট আগেই। সাধারণত উচ্চ আদালতে যেমন করে একটি মামলা পেশ করা হয় ও বিচার করা হয় তেমনি মুটিংয়ের সময়ও এসব নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। গত ৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ফিলিপ সি. জেসাপ মুট কোর্ট কম্পিটিশনের ইন্টারন্যাশনাল রাউন্ডে বাংলাদেশের মুটিং ইতিহাসে প্রথমবারের মতো অংশ নেয় ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ও ঢাকা ইউনিভার্সিটির দুটি দল। ১৫ এপ্রিল প্রতিযোগিতা শেষে হাতে অর্জন কিছু কম নয়। সেরা নবীন দল এবং সেরা ন্যাশনাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর- দুটি স্বীকৃতি। সঙ্গে ভবিষ্যতের পথে আরও অনুপ্রেরণা, উৎসাহ আর দিগ্বিজয়ের সাহস। বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নুরান চৌধুরী সেই মুট কোর্টে বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন।

 

পথটা সহজ ছিল না

শেষটা মধুর হলেও পথটা সহজ ছিল না। বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নুরান চৌধুরীকে একাই টেনে আনতে হয়েছে স্বপ্ন পূরণের অনেকটা। অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে অনেক ধৈর্য পরীক্ষায় উিরয়ে আসতে হয়েছে। অবশেষে শিক্ষক, অগ্রজ ও বন্ধুদের প্রেরণা, সহযোগিতা আর কিছুটা সৌভাগ্য- এই মিলে এলো এই অর্জন। জেসাপ’১৭ বাংলাদেশ রাউন্ড বাংলাদেশের মুটিং ইতিহাসের জগতে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এটি শুধু একটি সাফল্য বা অর্জন নয়, এটি একটি স্বপ্নের শুরু, বিশ্ব মুটিংয়ে বাংলাদেশের বড় অবদানের প্রতিশ্রুতি। ২০১৭ সালের ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় এই ফিলিপ সি. জেসাপ মুট কোর্ট কম্পিটিশন, ২০১৭-এর বাংলাদেশ জাতীয় রাউন্ড। এবারই সর্বপ্রথম বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয় জেসাপ মুট কম্পিটিশনের জাতীয় রাউন্ড। এই প্রতিযোগিতাটি মঞ্চস্থ করার জন্য ইন্টারন্যাশনাল ‘ল স্টুডেন্ট’স অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে এশিয়ান সোসাইটি অব ইন্টারন্যাশনাল ল’ এবং নর্দান বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ।

 

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ

ফিলিপ সি. জেসাপ আন্তর্জাতিক আইন মুট কোর্ট কম্পিটিশনের ৫৮তম সংস্করণ এবং এতে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান এতে অংশগ্রহণ করে। ফিলিপ সি. জেসাপ আন্তর্জাতিক আইন মুট কোর্ট কম্পিটিশন, ২০১৭ বিশ্বের আইন ছাত্র-ছাত্রীদের সবচেয়ে বড় মিলনমেলা। এই প্রতিযোগিতাটি ইন্টারন্যাশনাল ‘ল স্টুডেন্ট’স অ্যাসোসিয়েশনের মূল আয়োজন। এই অনুষ্ঠানটি ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশন এবং হোয়াইট অ্যান্ড কেস নামক একটি আন্তর্জাতিক আইনজীবী ফার্ম দ্বারা স্বীকৃত ও সমর্থিত।

প্রতিযোগিতাটি তার প্রতিযোগী মনোভাব ছাড়িয়ে আইন জগতের অতীত ও ভবিষ্যতের মিলনমেলায় পরিণত হয়। আইন জগতের তরুণ সদস্যরা দেশের প্রখ্যাত আইনজ্ঞদের সংস্পর্শে আশার সুযোগ পায়।

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম এই ধরনের রাউন্ডে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের দল সরাসরি অংশগ্রহণ করে। এরা হলো ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্টার্ন  বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, গ্রিন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি এবং সাউথ-ইস্ট ইউনিভার্সিটি। এছাড়াও পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবজারভার দল অংশ নেয়। এরা হলো নর্দান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ  ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি। বাংলাদেশের এই জাতীয় রাউন্ড ছিল ২০১৬-১৭ সেশনে জেসাপের সবচেয়ে বড় আয়োজনগুলোর একটি।

 

 

১৭ বিচারক

প্রিলিমিনারি রাউন্ডে ১৭ জন বিচারক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। এই বিচারকদের মধ্যে ছিলেন আইন শিক্ষক, আইনজীবী ও বিচারিক কর্মকর্তারা। সেমি-ফাইনাল রাউন্ডের সব সম্মানিত বিচারকরা আসেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট ডিভিশনের সম্মানিত বিচারকদের মধ্য থেকে। এটি বাংলাদেশের যে কোনো মুটিং প্রতিযোগিতার জন্য অভূতপূর্ব ঘটনা। প্রতিযোগিতার ফাইনাল রাউন্ডের বিচারকদের মধ্যে প্রধান ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাই আপীলেট ডিভিশনের সম্মানিত বিচারক জাস্টিস মীর্জা হুসাইন হায়দার। অন্য দুইজন বিচারক ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট ডিভিশনের সম্মানিত বিচারক জাস্টিস সৈয়দ রেফাত আহমেদ এবং নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন ড. এডব্লিউএম আবদুল হক। এসব আয়োজন শুরু হয় সেপ্টেম্বর-২০১৬ তে বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে তুখোড় বিতার্কিক ও মুটার নুরান চৌধুরীকে মনোনয়ন দেয়। সব সময়ই সমমনা আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ও সংস্থার সহযোগিতায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন নুরান চৌধুরী। তেমনি একটি প্রতিষ্ঠান এশিয়ান সোসাইটি অব ইন্টারন্যাশনাল ল’ এর বাংলাদেশ চ্যাপটার ওখঝঅ- র এই মুট কম্পিটিশনের সহ-আয়োজক হতে আগ্রহ প্রকাশ করে। অনুষ্ঠানের স্পন্সর হিসেবে থাকার আগ্রহ প্রকাশ করে নর্দান ইউনিভার্সিটি। আইএলএসএ তার জেসাপ মুট কম্পিটিশনে যে একটি বেশ বাস্তবধর্মী মূল্যায়ন প্রক্রিয়া চালায় তা মূলত রাউন্ড পয়েন্ট সিস্টেমের ওপর ভিত্তি করে করা হয় এবং এই রাউন্ড পয়েন্ট সিস্টেম বাংলাদেশে এর আগে কোনো মুটিং প্রতিযোগিতায় ব্যবহূত হয়নি। আয়োজকরা একনিষ্ঠ প্রচেষ্টার সঙ্গে সফলভাবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করেছেন এবং এতে প্রতিযোগিতার ফলাফলে বাস্তবধর্মী পার্থক্য দেখা যায়। পাশাপাশি এই প্রতিযোগিতায় অনন্য প্রকৃতির একটি পুরস্কার দেওয়া হয়, যার নাম সেরা জেসাপ স্পিরিট।  অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগী দলগুলো তাদের প্রতিযোগীদের মধ্য থেকে ভোটের মাধ্যমে সেরা জেসাপ স্পিরিটের দলটি নির্বাচিত করে। প্রতিযোগিতা শেষে আগের সব ভাবনা বাস্তব সাফল্যে পরিণত হয়। এই মুট কম্পিটিশনের অর্জনকারী অনেকেই। কম্পিটিশনের চ্যাম্পিয়ন দল ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এবং এর রানারআপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সেরা মেমোরিয়ালের পুরস্কারও গ্রহণ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাগিব মাহতাব সেরা মুটারের (আইনজীবী) পুরস্কার পান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দল সেরা জেসাপ স্পিরিট পুরস্কারটি পাওয়ার জন্য মনোনীত হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর