শনিবার, ৩ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা

আলমডাঙ্গার তারকারা

এ কেন্দ্রে স্থানীয় শিশুরা নাচ, গান, আবৃত্তি, অভিনয়সহ সংস্কৃতির নানা বিষয়ে বিনা বেতনে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে...

গাজী মুনছুর আজিজ

আলমডাঙ্গার তারকারা

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তমা রানী বিশ্বাস (পেছন থেকে সবার মাঝে)

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলায় ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আলমডাঙ্গা কলা কেন্দ্র। এ কেন্দ্রে স্থানীয় শিশুরা নাচ, গান, আবৃত্তি, অভিনয়সহ সংস্কৃতির নানা বিষয়ে বিনা বেতনে প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। আর এ কেন্দ্রের শিক্ষার্থীরাই জাতীয় পর্যায়ে সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় একাধিকবার প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আয়োজিত জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় হামদ-নাতে প্রথম হয়েছে এ কেন্দ্রের শিক্ষার্থী রজনী খাতুন।

শুধু রজনী নয়, একই প্রতিযোগিতায় এ কেন্দ্রের আরেক শিক্ষার্থী সিনথিয়া পল্লীগীতিতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে। ১৮ মে বিকালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

রজনী এবার ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত হামদ-নাত প্রতিযোগিতায়ও জাতীয়ভাবে প্রথম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার হাতে পুরস্কার তুলে দেন। এর আগে ২০১৫ সালে আন্তপ্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহে রজনী দেশাত্মবোধক গানেও জাতীয়ভাবে প্রথম হয়। এ পুরস্কারও দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে সিনথিয়া এবার আন্তপ্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহে জাতীয়ভাবে একক অভিনয়ে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এ ছাড়া এ কলা কেন্দ্রের শিক্ষার্থী তমা রানী বিশ্বাস ২০১৬ জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় জাতীয় পর্যায়ে পল্লীগীতিতে প্রথম স্থান অর্জন করে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তার   হাতে পুরস্কার তুলে দেন। একই বছর মাধ্যমিক শিক্ষা সপ্তাহেও সে হামদ-নাতে সারা দেশে প্রথম স্থান অর্জন করে। এ ছাড়া এ কেন্দ্রের শিক্ষার্থীরা উপজেলা, জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ে সংস্কৃতির নানা বিষয়ে একাধিকবার পুরস্কার অর্জন করেছে।

পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও তারা অংশগ্রহণ করে থাকে। এ কেন্দ্রের শিক্ষার্থীরা স্থানীয় বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পীও। কলা কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা করেন রেবা রানী সাহা। তিনি চাকরিজীবী।

প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি তিনি এখনো কেন্দ্রের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। বর্তমানে তিনজন শিক্ষকসহ কেন্দ্রে শিক্ষার্থী আছে ৪৫ জন।

শিক্ষকরা হলেন এস এম সেলিম, সুশীল কুমার কর্মকার ও মো. রবিউল।বর্তমানে কেন্দ্রের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে আলমডাঙ্গা উপজেলা পরিষদ চত্বরের ছোট্ট একটি টিনশেডের ঘরে। এ ঘর ও ঘরের বারান্দায় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে। কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা রেবা রানী সাহা বলেন, সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে শিশুদের সুকুমারবৃত্তি বৃদ্ধি পায়। এতে শিশুরা যেমন বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারে, তেমনি তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জাগ্রত হয় ও তারা দেশকে ভালোবাসতে শেখে।

কলা কেন্দ্রের সভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজের ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব। সে পরিবর্তনের লক্ষ্যেই আমরা এ কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুদের সাংস্কৃতিক চর্চায় উৎসাহিত করছি। পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তাদের মধ্যে বড় হওয়ার স্বপ্ন বোনার চেষ্টাও করছি।

 

তবে এ কেন্দ্রের কার্যক্রম আরও ভালোভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজন উন্নত অবকাঠামো ও আর্থিক জোগান।

 

আর শিক্ষার্থীরা বিনা বেতনে শেখার সুযোগ পেলেও শিক্ষকদের আমরা নিয়মিত সম্মানী দিই। এ সম্মানী আমরা সভাপতি ও সম্পাদক ব্যক্তিগতভাবে দিই।

 

এবারের জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় হামদ-নাতে প্রথম হওয়া রজনী খাতুন বলে, ‘কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা রেবা রানী সাহা ও কেন্দ্রের সভাপতি ইকবাল হোসেনের প্রচেষ্টায়ই আমরা আজ এত দূর আসতে পেরেছি, জাতীয়ভাবে প্রথম হওয়ার গৌরব অর্জন করেছি।’

সর্বশেষ খবর