শনিবার, ৮ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্রিটেনের পার্লামেন্টে বাংলাদেশি তিন কন্যা

শনিবারের সকাল ডেস্ক

ব্রিটেনের পার্লামেন্টে বাংলাদেশি তিন কন্যা

টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক, রুশনারা আলী, রূপা হক

২০২০ সাল পর্যন্ত মেয়াদ থাকার পরেও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ঘোষণা দেন। রাজনৈতিক কারণে দেওয়া এ ঘোষণার পঞ্চাশ দিন পরে ৮ জুন ব্রিটেনে অনুষ্ঠিত হয় সাধারণ নির্বাচন। যুক্তরাজ্যের আগাম এই নির্বাচনে সমগ্র বাংলাদেশের দৃষ্টি ছিল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন নারী রুশনারা আলী, টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক ও রূপা  হকের ওপর। লেবার দলের এই তিন প্রার্থীই বিজয়ী হয়েছেন স্ব স্ব আসন থেকে। লন্ডনে জনপ্রিয়তায় লেবার পার্টি বহু বছর ধরেই কনজারভেটিভের চেয়ে এগিয়ে ছিল।

তা এবারও প্রকট হয়েছে ব্যাপক ব্যবধানে তাদের জয়ে।  আর এ জয়ে ছিল বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিন নারীর প্রশংসনীয় অংশগ্রহণ।

 

টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক

প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনে প্রার্থী হওয়ায় তিনি ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রে

ব্রিটেনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে ১৫ হাজার ৫৬০ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন টিউলিপ সিদ্দিক

 

ব্রিটেনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে ব্যাপক ব্যবধানে নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। তার আরেকটি পরিচয় হলো, বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ। ব্রিটেনের লেবার দলের প্রার্থী হিসেবে টিউলিপ পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৪৬৪ ভোট। অপরদিকে তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ দলের প্রার্থী ক্লেয়ার লুইচ লিল্যান্ড পেয়েছেন ১৮ হাজার ৯০৪ ভোট। এর আগে ২০১৫ সালে মাত্র ১ হাজার ১৩৮ ভোটের ব্যবধানে প্রথমবার এমপি নির্বাচিত হন টিউলিপ। নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় এই দুই বছরে তার জনপ্রিয়তা বেড়েছে উল্লেখ করার মতো। আর তারই প্রমাণ হিসেবে এবারের নির্বাচনে টিউলিপের জয়ের ব্যবধান ছিল ১৫ হাজার ৫৬০ ভোট। একদিকে পারিবারিক পরিচয়, অন্যদিকে লন্ডনের তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ আসনে প্রার্থী হওয়ায় তিনি ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রে। টিউলিপ সিদ্দিক জন্মগ্রহণ করেন লন্ডনে। জন্মসূত্রে তিনি ব্রিটিশ নাগরিক। তবে ছেলেবেলার বেশির ভাগ সময় কাটে বাংলাদেশ, ব্রুনাই, ভারত, সিঙ্গাপুর ও স্পেনে। ১৫ বছর বয়সে তিনি নর্থ লন্ডনে চলে যান উচ্চ ডিগ্রি লাভের আশায়। ইংলিশ লিটারেচারের ওপর তার মাস্টার্স ডিগ্রি আছে। দ্বিতীয় মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন রাজনীতি, নীতি ও সরকার বিষয়ে। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হওয়ায় ছোট থেকেই এ বিষয়টি তাকে দারুণভাবে টানে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের লেবার পার্টিতে যোগ দেন। একই সময়ে টিউলিপ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালেও কাজ করেন। তিনি ২০০৬ সালে ক্যামডেন কাউন্সিল থেকে নির্বাচনে প্রথমবারের মতো অংশ নেন।  ২০১০ সালে জয়লাভ করার মধ্য দিয়ে টিউলিপ প্রথম ক্যামডেন কাউন্সিলের বাঙালি নারী কাউন্সিলরের সম্মান অর্জন করেন।

 

রূপা হক

১৩ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন

লন্ডনের ইলিং আসনে লেবার পার্টির প্রার্থী রূপা হকের জয় ১৩ হাজার ৮০৭ ভোটের ব্যবধানে

 

লন্ডনের ইলিংয়ে লেবার পার্টির প্রার্থী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রূপা হক ১৩ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন। তিনি ভোট পেয়েছেন ৩৩ হাজার ৩৭। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জয় মোরিসি কনজারভেটিভ দলের পক্ষে পেয়েছেন ১৯ হাজার ২৩০ ভোট। এর আগে ২০১৫ সালে রূপা হক প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন। তখন তার জয় ছিল মাত্র ২৭৪ ভোটের ব্যবধানে। রূপা হকের বাবা মুহম্মাদ হক এবং মা রোশান আরা হক ১৯৬০ সালে সন্তানদের নিয়ে অভিবাসী হয়ে ব্রিটেনে যান। রূপা হকের জন্ম বার্মিংহামের কুইনস শার্লটস হসপিটালে। তিনি ১৯৯৩ সালে গ্রাজুয়েশন ও ১৯৯৯ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনে তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করেছেন। তিনি ২০০৪ সালে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনে লেবার পার্টি ও ২০০৫ সালে লেবার পার্টির হয়ে পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হন। এরপর ২০১০ সালে রূপা লন্ডন বরাহ অব ইলিংয়ের ডেপুটি মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালে লেবার পার্টি তাকে পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে। তাকে লড়তে হয়েছিল কনজারভেটিভ পার্টির এমপি অ্যাঞ্জি ব্রে-এর বিরুদ্ধে।

 

রুশনারা আলী

৩৫ হাজার ৩৯৩ ভোটের ব্যবধানে জয়ী রুশনারা আলী

ব্রিটেনের বেথনালগ্রিন অ্যান্ড বো থেকে লেবার পার্টির প্রার্থী রুশনারা আলী জয়ী হয়েছেন ৩৫ হাজার ৩৯৩ ভোটের ব্যবধানে

 

ব্রিটেনের বেথনালগ্রিন অ্যান্ড বো থেকে লেবার পার্টির প্রার্থী আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত রুশনারা আলী। তিনি এবার ৩৫ হাজার ৩৯৩ ভোটের ব্যবধানে জয় পান। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের মোট ৬৫০ আসনের বিপরীতে মোট ২ হাজার ৩০৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

রুশনারা আলী ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে জন্ম নেন সিলেট জেলার বিশ্বনাথে। ৭ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে লন্ডনের পূর্ব প্রান্তে অভিবাসী হন। সেখানে তিনি মালবেরি স্কুলস অব গার্লস ও টাওয়ার হ্যামলেট কলেজে পড়াশোনা করেন। এরপর মেধাবী রুশনারা আলী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট জনস কলেজে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি বিষয়ে পড়াশোনা করেন। কর্মজীবন শুরু করেন মাইকেল ইয়ংয়ের গবেষণা সহকারী হিসেবে। মানবাধিকার বিষয়ে তিনি বিদেশি কার্যালয়ে কাজ করেন ২০০০ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত। এর আগে রুশনারা আলী একজন গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করেন আইপিপিআরে। রুশনারা আলী টাওয়ার হ্যামলেটস সামার বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য, লন্ডন শিশু দারিদ্র্য কমিশনের কমিশনার এবং বোর্ড সদস্য টাওয়ার হ্যামলেট কলেজের পল হ্যাম্লাইন ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি ও টেট ব্রিটেন কাউন্সিলের সদস্য। দ্য গার্ডিয়ান, প্রসপেক্ট ও প্রগ্রেস ম্যাগাজিনে তিনি জাতীয় ও স্থানীয় নানা রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ লিখেছেন। ২০০৭ সালের এপ্রিলে লেবার পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বাউ এলাকার জন্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১০ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।  তিনি হাউস অব কমন্সে নির্বাচিত প্রথম বাংলাদেশি ও ২০১০ সালে নির্বাচিত প্রথম তিনজন মুসলিম নারী এমপির অন্যতম।

সর্বশেষ খবর