শনিবার, ২২ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
বাংলাদেশে প্রথম তৈরি

সোলার সাইকেল তিন বন্ধুর

রিয়াজুল ইসলাম, দিনাজপুর

সোলার সাইকেল তিন বন্ধুর

পরিবেশবান্ধব সোলার সাইকেল। নেই কোনো চার্জের খরচ। দিনে এটি সূর্যের আলোয় চার্জ হয় এবং যদি রাতে চালানো হয় তাহলে রাস্তায় অন্যান্য যানবাহনের হেডলাইটের আলোতেও এটি চার্জ হবে। আর ১ ঘণ্টায় ২০-২৫ কিলোমিটার চলবে। সৌরবিদ্যুৎ দিয়ে বাড়ি-কারখানায় বিদ্যুৎ তৈরিসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের পর এবার এলো সৌরবিদ্যুৎ দ্বারা চালিত দ্রুতগতি ও সাশ্রয়ী এ বাইসাইকেল।

দেখতে ও শুনতে অদ্ভুদ মনে হলেও এমন একটি সাইকেল তৈরি করেছেন দিনাজপুরের তিন বন্ধু। এ পদ্ধতিতে তৈরি এই ধরনের দ্রুতগতিসম্পন্ন ও সাশ্রয়ী সাইকেল বাংলাদেশে এটাই প্রথম। এটা তাদের দাবি। যার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সোলার সাইকেল’। এটি বাণিজ্যিকভাবে দেশের জন্য লাভজনক তাই সরকারি কোনো সুযোগ সুবিধা পেলে এটাকে বাজারজাত করতে পারব— এরকম আশা পোষণ করেন ওই তিন বন্ধু। তারা মনে করেন, যা আমাদের চলার পথকে ছোট করে দেবে ও দেশের জন্য অনেক লাভজনক বয়ে আনবে। এতে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও বিশেষ অবদান রাখবে। ওই তিন বন্ধু জানান, ইনস্টিটিউটের স্কিল প্রজেক্ট-এর জন্য ২০১৫ সালে প্রথম সোলার সাইকেল তৈরি করা হয়। পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের পাওয়ার টেকনোলজির ছাত্র দিনাজপুর শহরের বাসুনিয়াপট্টির মাধব মল্লিকের পুত্র বিজয় মল্লিক, মাশিমপুরের আবদুস সামাদের পুত্র সাব্বির হোসেন ও নীলফামারী জেলার বেড়াকুঠির হেমন্ত কুমার রায়ের পুত্র শান্ত কুমার রায় নামের এ তিন বন্ধু। তারা তখন তিন বন্ধুই ষষ্ঠ পর্বের ছাত্র ছিলেন। তারা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা শেষ করে বর্তমানে বিজয় মল্লিক ঢাকার বেসরকারি এক কোম্পানিতে চাকরি করেন। সাব্বির ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসির ছাত্র এবং শান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সোলার সাইকেল তৈরির বিষয়ে সাব্বির হোসেন জানান, আমি স্কুলজীবনে চিন্তা করতাম আমার বাবা আমাকে মোটরসাইকেল তো কিনে দেবেন না। কিন্তু সেরকম গতিসম্পন্ন সাইকেলটা যদি হয় তাহলে ভালোই হতো। এ চিন্তাটা মাথায় ঘুরপাক খেত। পলিটেকনিকে ভর্তি হলাম। তখন আমার ক্লাসমেট বন্ধু বিজয় মল্লিক, শান্ত কুমারের সঙ্গে বিষয়টা শেয়ার করলাম। এরই মধ্যে দিনাজপুর পলিটেকনিক ছাত্র ইনস্টিটিউটের স্কিল প্রজেক্ট-এর জন্য এটাই নির্ধারণ করে তিন বন্ধু এই সোলার সাইকেলটি তৈরি করলাম। বিজয় মল্লিকসহ তারা জানান, যদি চলতে চলতে কখনো চার্জ শেষ হয়ে যায় তাহলে স্বাভাবিক সাইকেল যেভাবে প্যাডেল ব্যবহার করে চালাতে হয় ঠিক সেভাবেই চালাতে হবে। তাতে অটোমেটিক ব্যাটারিগুলো চার্জ হতে থাকবে। আর এই সাইকেল বেশি ভারীও নয়। এই সাইকেলের আরেক সুবিধা হলো সাধারণ সাইকেলের চেয়ে অনেক দ্রুতগতিসম্পন্ন। মোটর লাগানো তবুও বিদ্যুৎ খরচ করে চার্জ দিতে হয় না। আর তেল খরচ তো নেই। বিজয় মল্লিক বলেন, যে কোনো শহরে এটির চাহিদা আছে। সাইকেলটি আমার দিনাজপুর শহরে বের করলেই সবাই কেমন যেন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। আর বর্তমানে মোটরসাইকেলের পাশাপাশি আরেকটি বৈদ্যুতিক চার্জ সিস্টেম মোটরসাইকেল বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু তার দামও অনেক বেশি। আর এ ধরনের একটি সোলার সাইকেল তৈরি করতে প্রয়োজন একটি যে কোনো সাইকেল, ২০ ওয়াটের ১টি সোলার প্যানেল, ২৪ ভোল্টের ২টি ব্যাটারি, পিকআপ সেট, ১টি ডিসি মোটর ও ১টি আইপিএস। আর এতে খুব জোর হলে খরচ হয় প্রায় ১১ থেকে ১৫ হাজার টাকা। যা আমদানিকৃত বৈদ্যুতিক চার্জ সিস্টেম মোটরসাইকেলের চেয়ে অনেক কম এবং পরিবেশবান্ধব। এটাকে মডিফাউড করে আরও উপযোগী করা যাবে। তাদের দাবি, এ সোলার সাইকেলটি এদেশের আবহাওয়া উপযোগী। এটার ব্যবহার থাকলে বৈদ্যুতিক চার্জ সিস্টেম মোটরসাইকেলের আমদানি কমে যাবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ী হবে। পাশাপাশি বৈদ্যুতিক ব্যবহারও সাশ্রয়ী হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর