শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা
এ আর রহমান

হতে চেয়েছিলেন ড্রাইভার হলেন মিউজিশিয়ান

হতে চেয়েছিলেন ড্রাইভার হলেন মিউজিশিয়ান

উপমহাদেশের অন্যতম সংগীতশিল্পী এ আর রহমান। যার নতুন কোনো অ্যালবাম মুক্তি পাওয়ার আগেই হয়ে যায় সুপারহিট। ভারতের সংগীত ভুবনে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তার প্রতিটি গানই একেকটি স্বতন্ত্র শিল্প। আনপ্রেডিক্ট্যাবল টিউনের জন্য তাকে বলা হয় মোজার্ট অব মাদ্রাজ। আবার তামিল ভাষায় তাকে বলা হয় ‘ইসাই পুঁইয়ার’ যার অর্থ ‘সুরের ঝড়’ । ৮১তম অস্কারের মিউজিক ক্যাটাগরিতে ডাবল অস্কারজয়ী এই সংগীতশিল্পীকে নিয়ে লিখেছেন— সাইফ ইমন

 

মানবতার জন্যও কাজ করে চলেছেন বড় মনের মিউজিশিয়ান এ আর রহমান। ২০০৪ সালে ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের স্টপ টিবি প্রজেক্টের গ্লোবাল অ্যাম্বাসেডর ছিলেন। সুনামি আক্রান্ত এতিম শিশুদের পাশেও দাঁড়িয়েছিলেন।

 

এ এস দিলীপ কুমার নামে পরিচিত ছিলেন আজকের এ আর রহমান। জীবনের একটা পর্যায়ে এসে দিলীপ কুমার থেকে হয়ে গেলেন আবদুল রহমান। পরবর্তীতে আবদুল রহমান থেকে আল্লা রাখা রহমান বা এ আর রহমান। ৬ জানুয়ারি, ১৯৬৭ সালে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের চেন্নাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আর কে শেখর ছিলেন একজন সংগীত পরিচালক আর মায়ের নাম কস্তুরি। সংগীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করার ফলে পরিবার থেকেই সংগীতের হাতেখড়ি হয়েছে এ আর রহমানের। বাবার সঙ্গে বিভিন্ন রেকর্ডিং স্টুডিওতে কিবোর্ড নিয়ে নাড়াচাড়া করতেন ছোট্ট এ আর রহমান। এভাবেই সংগীতে হাতেখড়ি তার।

ছন্দপতন : ভালোই চলছিল সবকিছু। এর মধ্যে মারা যান এ আর রহমানের বাবা। তখন তার বয়স মাত্র ৯। সংসারে আর্থিক সমস্যা দেখা দেওয়ায় বাবার সংগীত যন্ত্রগুলো ভাড়া দিয়েই পরবর্তীতে বেশ কিছুদিন সংসার চলে। তবে সংগীতচর্চা থেমে থাকেনি এ আর রহমানের।

সংগীত শিক্ষা : প্রথম জীবনে এ আর রহমান ওস্তাদ ধনরাজের কাছে তালিম নেন। খুব অল্প সময়েই প্রখ্যাত মিউজিশিয়ানদের সঙ্গে বাজানো শুরু করেন। এরপরই লন্ডনের ট্রিনিটি কলেজে স্কলারশিপ পান তিনি। ওই কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর পশ্চিমা সংগীতের ওপর ডিপ্লোমা করেন।

 

হতে চেয়েছিলেন ড্রাইভার : এ আর রহমান জিঙ্গেলে ক্যারিয়ার শুরু করার সিদ্ধান্ত নেন। ঠিক করেছিলেন এ লাইনে সফল না হলে তিনি ড্রাইভার হিসেবে অর্থ উপার্জনের পথ বেছে নেবেন।

 

ব্যান্ড দল ‘রুট’ : ছোটবেলার বন্ধু মিউজিশিয়ান শিবামানির সঙ্গে জন অ্যান্থনি, সুরেশ পিটার, জোজো এবং রাজাকে নিয়ে ‘রুট’ নামে একটি ব্যান্ড দল গঠন করেন। চেন্নাইয়ের রক ব্যান্ড ‘নেমেসিস অ্যাভেনিউ’রও প্রতিষ্ঠাতা তিনি।

 

দিলীপ কুমার থেকে এ আর রহমান :

সময়টা ১৯৮৪ সাল। এ আর রহমানের ছোট বোন প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক ডাক্তার, কবিরাজ দেখানোর পরও সুস্থ হওয়ার কোনো লক্ষণ না দেখে তার মা আজমীর শরিফে মানত করেন। ১৯৮৮ সালে শেখ আবদুল কাদির জিলানী নামের একজন মুসলিম পীরের সাহায্যে তার বোন নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পায়। এ ঘটনার পর সপরিবারে এ আর রহমান ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাম পরিবর্তন করেন।

জীবনের টার্নিং পয়েন্ট : ১৯৮৭ সালে পরিচালক মনি রত্নমের নজরে আসেন এ আর রহমান। রত্নমের তামিল ‘রোজা’ চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করেন তিনি। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। ১৯৯২ সালে এ আর রহমান নিজ বাড়িতেই ‘পঞ্চাখান রেকর্ড ইন’ নামে একটি রেকর্ড ও মিক্সিং স্টুডিও চালু করেন। স্টুডিওটি ভারতের গণ্ডি ছাড়িয়ে এশিয়ার অন্যতম একটি রেকর্ডিং স্টুডিও হিসেবে পরিচিতি পায়। ২০০৬ সালে পঞ্চাখান রেকর্ডিং ইন নামের তার স্টুডিওর নাম বদলে রাখেন এ এম স্টুডিও। শুধু সিনেমায় মিউজিক কম্পোজিশনের মধ্যেই নিজেকে আবদ্ধ রাখেননি তিনি। ১৯৯৭ সালে তার বন্দে মাতরম অ্যালবাম শুধু ভারতেই বিক্রি হয়েছিল ১.২ কোটি পিস। চলচ্চিত্রের বাইরে কোনো অ্যালবাম ভারতে এ-ই প্রথম এতটা ব্যবসা সফল হয়। ১৯৯৯ সালে জার্মানির মিউনিখে মাইকেল জ্যাকসনের কনসার্টে কাজ করেন তিনি। এরপর তিনি অনেক অ্যালবাম ও মিউজিক ভিডিওতে কাজ করেছেন।

 

ব্যক্তিজীবন : ১৯৯৫ সালের ১২ মার্চ সায়রা বানুর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন এ আর রহমান। তিন সন্তান খাদিজা, রহিমা ও আমিনকে নিয়ে তার সুখের সংসার।

 

অর্জন : এ আর রহমান তার জীবনে বড় বড় অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে যায় তার করা মুভি স্লামডগ মিলিয়নিয়ারের মিউজিক পরিচালনা। যা তাকে পৌঁছে দিয়েছে অস্কারের মঞ্চে। জিতেছেন দুটি অস্কারসহ গোল্ডেন গ্লোব এবং বাফটা অ্যাওয়ার্ড। তিনিই প্রথম ও এখন পর্যন্ত একমাত্র ইন্ডিয়ান যিনি দুটি অস্কার জিতেছেন। অথচ জেনে অবাক হবেন যে, প্রথমদিকে এই চলচ্চিত্রে কাজই করতে চাননি এ আর  রহমান।

 

উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র : এ আর রহমানের সংগীত পরিচালনা করা উল্লেখ করার মতো হিন্দি চলচ্চিত্রগুলো হলো বোম্বে (১৯৯৫), রঙ্গিলা (১৯৯৫), দিল সে (১৯৯৮), তাল (১৯৯৯), লগান (২০০১), সাথিয়া (২০০২), রাঙ্গ দে বাসন্তী (২০০৬), গুরু (২০০৭), যোধা আকবর (২০০৮), জানে তু ইয়া জানে না (২০০৮), স্লামডগ মিলিয়নিয়ার (২০০৮), ইয়ুভরাজ (২০০৮), গজনি (২০০৮), দিল্লি-৬ (২০০৯), রকস্টার (২০১১), তামাশা (২০১৫) ইত্যাদি।

সর্বশেষ খবর