শিরোনাম
শনিবার, ৫ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

নিউইয়র্কে পুলিশ লেফটেন্যান্ট হলেন পটুয়াখালীর প্রিন্স আলম

শনিবারের সকাল ডেস্ক

নিউইয়র্কে পুলিশ লেফটেন্যান্ট হলেন পটুয়াখালীর প্রিন্স আলম

আড়ম্বরপূর্ণ এক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে প্রিন্স আলম হাতে পেলেন পদোন্নতির সার্টিফিকেট

আমেরিকার নিউইয়র্ক শহর। আর এই শহরটির নিরাপত্তার দায়িত্বে ১১ বছর কাটিয়ে দেন পটুয়াখালীর সন্তান প্রিন্স আলম। শুরুটা করেছিলেন পুলিশ অফিসার দিয়ে, বর্তমানে কাজ করছেন নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের লেফটেন্যান্ট পুলিশ হিসেবে। ব্যক্তিগত সাফল্য তো বটেই, দেশের জন্যও নিয়ে আসেন এক অনন্য অর্জন।

 

মেধা বিকাশে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অভিবাসীদের নানা অর্জন বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে এক অনন্য উচ্চতায়। গোটা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এমন অসংখ্য বাংলাদেশি। বিশ্বের বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে মহাকাশ গবেষণায়ও বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের সাফল্য বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছে। তেমনি এক গৌরব অর্জন করেছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রিন্স আলম। বাড়ি পটুয়াখালী জেলায়। পটুয়াখালীর কৃতী সন্তান এ কে এম প্রিন্স আলম পদোন্নতি পেয়ে হয়েছেন নিউইয়র্ক পুলিশ লেফটেন্যান্ট।

বিশ্বের প্রভাবশালী দেশ আমেরিকা। আর সেই আমেরিকার পুলিশও বিশ্বের সেরাদের তালিকার শীর্ষে। বিশ্বের অন্যতম সেরা পুলিশ বাহিনী নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে (এনওয়াইপিডি) কর্মরত রয়েছেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কয়েকশ পুলিশ কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ পদোন্নতি পেয়ে বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন পদেও দায়িত্ব পালন করছেন। নতুন এই তালিকায় যোগ হলো আরও কয়েক বাংলাদেশির নাম।

শীর্ষস্থানীয় এই পুলিশ বিভাগের লেফটেন্যান্ট পর্যায়ে পদোন্নতি পেলেন ৭ বাংলাদেশি। তাদের মধ্যে অন্যতম পটুয়াখালীর প্রিন্স আলম। পটুয়াখালীর এই কৃতী সন্তানের বাবা এ কে এম শাহ আলম হলেন একজন আইনজীবী। বাবার আদর্শে লালিত প্রিন্স আলম পড়াশোনার গণ্ডি পেরিয়ে জীবিকার তাগিদে ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। পাঁচ বছর পর নিউইয়র্কে পুলিশের চাকরি শুরু করেন। প্রথমে একজন সাধারণ পুলিশ অফিসার হিসেবে এনওয়াইপিডি-তে যাত্রা শুরু করেন। সময় যেতে থাকে, অভিজ্ঞতার ঝুলিও তার ভারী হতে থাকে। অপরাধ দমনে কাজ করে চলেছেন প্রায় ১১ বছর ধরে। সবশেষে নিউইয়র্ক পুলিশের লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি পান এই নির্ভীক অফিসার। পদের দিক থেকে লেফটেন্যান্ট নিউইয়র্ক পুলিশের শীর্ষস্থানীয় পদের একটি। আর প্রিন্স আলমসহ নিউইয়র্ক পুলিশে এ পর্যন্ত সাতজন বাংলাদেশি লেফটেন্যান্ট হলেন। এই পদে কর্মরত অন্য বাংলাদেশিরা হলেন লেফটেন্যান্ট মিলাদ খান, লেফটেন্যান্ট সুজাত খান, লেফটেন্যান্ট শামসুল হক, লেফটেন্যান্ট কারাম চৌধুরী, লেফটেন্যান্ট খন্দকার আবদুল্লাহ এবং লেফটেন্যান্ট নিয়ন চৌধুরী। স্থানীয় শুক্রবার সকালে নিউইয়র্ক পুলিশের সদর দফতর ওয়ান পুলিশ প্লাজা অডিটরিয়ামে আড়ম্বরপূর্ণ এক অনুষ্ঠানে প্রিন্স আলমের হাতে পদোন্নতির সার্টিফিকেট তুলে দেন পুলিশ কমিশনার জেমস পি ও’নিল। এ সময় শীর্ষস্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা ছাড়াও বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) জানায়, ‘পুলিশ অফিসারদের এই অর্জন বাংলাদেশকে গর্বিত করেছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশিদের এমন অর্জন অব্যাহত থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস। প্রসঙ্গত, নিউইয়র্ক পুলিশের প্রিসিঙ্কটসহ (থানা) বিভিন্ন বিশেষ শাখায় কর্মরত রয়েছেন দুই শতাধিক কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে সাতজন লেফটেন্যান্ট, ১৬ জন সার্জেন্ট এবং সাতজন ডিটেকটিভ রয়েছেন। এ ছাড়া ট্রাফিক বিভাগে কর্মরত আছেন আরও প্রায় ৬০০ সদস্য। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ অফিসাররা তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের নাম উজ্জ্বল করে তুলছেন।’

 

নিউইয়র্কে পদোন্নতির পথটা খুব সহজ নয়। বাংলাদেশের বিসিএস পরীক্ষার আদলে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার মাধ্যমে অফিসার পদে নিউইয়র্ক পুলিশে নিয়োগ হয়। একইভাবে প্রতিটি পদোন্নতিতে দিতে হয় নতুন নতুন পরীক্ষা। পেশাদারিত্বের পাশাপাশি পরিচয় দিতে হয় দক্ষতার। নিউইয়র্কের মতো শহরে পুলিশের চাকরি কঠিন হওয়াটাই স্বাভাবিক। তা না হলে বিশ্বের মধ্যে শক্তিশালী পুলিশের তালিকার শীর্ষে থাকা যে সম্ভব হতো না।

 

পদোন্নতির অনুষ্ঠানে স্বামীর সঙ্গে এসেছিলেন প্রিন্স আলমের স্ত্রী তানজিনা ইসলাম শর্মী। স্বামীর এই সাফল্যে তিনি দারুণ খুশি। তিনি বলেন, ‘আমার স্বামী অনেক মেধাবী একজন কর্মকর্তা। আমি আমার স্বামীকে এনওয়াইপিডির আরও শীর্ষ পদে দেখতে চাই। এ জন্য তিনি পরিবারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবেন বলে জানান। তিনি মনে করেন, তার স্বামীর এই পদোন্নতি বাংলাদেশিদের জন্য গর্বের। সামনে আরও নতুন নতুন মুখ দেখা যাবে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে।’

অনুষ্ঠানে বাপার ট্রাস্টি ডিটেকটিভ জামিল সারোয়ার জনি জানান, ‘নিউইয়র্ক পুলিশে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কর্মকর্তাদের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। পুলিশ বিভাগে বাংলাদেশিরা অনেক ভালো করছে। ভবিষ্যতে এ ধারা আরও অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন জামিল সারোয়ার জনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অফিসারদের সংগঠন ‘বাপা’ ইতিমধ্যে নিউইয়র্ক পুলিশের দাফতরিক স্বীকৃতি পেয়েছে। এটা আমাদের জন্য পরম পাওয়া। একই দিনে দুপুরে আরেকটি অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিটেকটিভ থেকে সার্জেন্ট পদে পদোন্নতি পেয়েছেন আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশ কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন।

বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)-এর প্রেসিডেন্ট লেফটেন্যান্ট শামসুল হক তাদের ওয়েবসাইটের এক বিবৃতিতে জানান, ‘বাংলাদেশি

আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)-এর সদস্য হয়ে এত বড় অর্জন সত্যিই গৌরবের। এই পথচলাটা শুরু হয়েছিল কিছুকাল আগে। আমরা বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের স্টিয়ারিং কমিটি এবং ট্রাস্টি এনএইচসি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট কর্তৃক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাপা স্বীকৃতি ঘোষণা করেছিল নিউইয়র্ক পুলিশ। এটি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত পুলিশের জন্য অত্যন্ত আনন্দের এবং সম্মানের। বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) নিউইয়র্ক পুলিশের প্রথম আইন প্রয়োগকারী সহযোগী সংগঠন। অনেক প্রতিভাবান সদস্যের পরিশ্রমে আজকের বাপার উৎপত্তি হয়েছে। আমাদের সব সদস্যকে ধন্যবাদ। আমাদের সব সম্প্রদায়কে ধন্যবাদ জানাতে চাই যে প্রাথমিক পর্যায় থেকে এখন পর্যন্ত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার জন্য। আর বিশেষ ধন্যবাদ নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টকে (এনওয়াইপিডি)।’

সর্বশেষ খবর