শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
সোনিয়া বশির কবির

বিশ্বের ১০ নারীর কাতারে এক বাংলাদেশি

শনিবারের সকাল ডেস্ক

বিশ্বের ১০ নারীর কাতারে এক বাংলাদেশি

ডিজিটাল সাক্ষরতাবিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি তথ্য-প্রযুক্তিতে নারীদের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। নারীদের ডিজিটাল শিক্ষায় বিশেষ ভূমিকা রাখায় সম্মানসূচক এ পুরস্কারে ভূষিত করা হবে। অনন্য অর্জনে বিশ্বসেরা ১০ নারীর তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন সোনিয়া বশির কবির।

 

আর কদিন বাদেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘ইউনাইটেড ন্যাশন্স গ্লোবাল কম্প্যাক্ট লিডারস সামিট-২০১৭’। আর সেখানে এক বাংলাদেশি নারীকে সম্মানিত করা হবে। তিনি মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোনিয়া বশির কবির। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে অবদান রাখায় ‘এসডিজি-২০১৭ পাইওনিয়ারস’ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে টেকসই উন্নয়ন এবং ১৭ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের লক্ষ্যে বিজনেস কমিউনিটিকে বিভিন্ন জায়গায় কার্যকরভাবে কাজে লাগানোয় ১০ জনকে সম্মানিত করা হবে। আগামী ২১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে এক সম্মেলনে এ পুরস্কার দেওয়া হবে। প্রতি বছর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে ভূমিকা রাখার জন্য এ পুরস্কার প্রদান করা হয়। এ বছর বিশ্বের মোট ১০ জনকে এই সম্মানজনক পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। সম্প্রতি মাইক্রোসফট বাংলাদেশের জনসংযোগ প্রতিষ্ঠানের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। উল্লিখিত এই পুরস্কারটি অত্যন্ত সম্মানজনক। বৈশ্বিক সামাজিক সমস্যা সমাধানে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে তা কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেন  নির্বাচিতরা। ইউএন গ্লোবাল কম্প্যাক্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী পরিচালক লিজ কিঙ্গোকে উদ্ধৃত করে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পথে পথিকৃৎ ব্যক্তি ও কোম্পানিগুলো কেমন করে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে, চলতি বছর ১০ জন ‘এসডিজি পায়োনিয়ার’ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে তা দেখিয়েছেন। তাদের মধ্যে সোনিয়া বশির কবির অন্যতম। তিনি এক প্রতিভাসম্পন্ন নারী। ডিজিটাল সাক্ষরতাবিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি তথ্য-প্রযুক্তিতে নারীদের নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তথ্য-প্রযুক্তি খাতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানোর পক্ষে প্রচারের ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। নারীকে প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং তাদের প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষিত করে তোলার ক্ষেত্রে তিনি একজন পথিকৃৎ। তাই মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ব্যবস্থপনা পরিচালক সোনিয়া বশির কবিরকে সম্মানসূচক এ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে।’ উক্ত পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হওয়ায় সোনিয়া বশির কবির বলেন, ‘আমাকে নির্বাচিত করায় আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। আসলে তথ্য-প্রযুক্তি যে কোনো উন্নয়নশীল দেশকে অর্থনৈতিকভাবে দ্রুতগতিতে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করে। আমাদের দেশের ১৬ কোটি মানুষের ৫০ ভাগই নারী। আর এ নারীরা দেশের অগ্রগতিতে শক্তিশালী হাতিয়ার। আমি আমাদের দেশের নারীদের প্রযুক্তিতে অনুপ্রাণিত করার ব্যাপারে আরও কাজ করে যেতে চাই।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের নারীরা অত্যন্ত মেধাবী। তারা দেশি এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান নির্বাহী, পরিচালক ইত্যাদি পদেও অসংখ্য নারী দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। আর আমাদের দেশের নারীরা প্রযুক্তি গ্রহণের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস’। ২০১৫ সালে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) জন্য সোনিয়া বশির কবিরকে তিন বছরের জন্য টেকনোলজি ব্যাংকের গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে নিযুক্ত করেন।

 

অনন্য অর্জনে সোনিয়া

সোনিয়া বশির কবির, বাংলাদেশি এক মেধাবী নারী। তিনি মাইক্রোসফ্ট বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং আইটি ফার্ম সিনট্যাক এবং ডি মনি’র সহপ্রতিষ্ঠাতা। দেশসেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভিকারুননিসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী ছিলেন তিনি। মেধা তালিকায় ষষ্ঠ স্থান অর্জন করেন তিনি। এরপরই পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় ইহতিশাম কবিরের সঙ্গে। স্বামী ইহতিশাম কবির যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে চাকরি করতেন। এরপর পড়াশোনার জন্য চলে যান আমেরিকান ক্যালিফোর্নিয়ার সিলিকন ভ্যালিতে। সোনিয়া বশির কবির যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সান্তাক্লারা ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ এবং ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যাচেলর অব সাইন্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন। উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রায় বিশ বছর ধরেই বসবাস করছেন বাংলাদেশি এই মেধাবী নারী। প্রযুক্তিই তার সবকিছু। পড়াশোনা শেষ করে সিলিকন ভ্যালিতেই কাজ শুরু করেন। পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণ শেষে ওরাকলে কাজ শুরু করেন সোনিয়া বশির কবির। পরে যোগ দেন সান মাইক্রো সিস্টেমে। ২০০৫ সালে বাংলাদেশে ফিরে এসে আমরা টেকনোলজিস, মাইক্রোসফট এবং ডেল-এর মতো প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্বমূলক বিভিন্ন পদে সফলতার সঙ্গে কাজ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালিতে ১৫ বছর কাজের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সোনিয়া বশির কবির গত বছরের জুনে যোগ দেন মাইক্রোসফটে। মাইক্রোসফট বাংলাদেশের ডিরেক্টর অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ফর সাউথইস্ট এশিয়া পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। মাইক্রোসফট বাংলাদেশের শুরু থেকেই দেশি কমিউনিটি গ্রুপ, এন্টারপ্রাইজ এবং সরকারের সঙ্গে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তন, ট্রেনিং প্রদান, স্থানীয় উদ্ভাবকদের সামনে নিয়ে আসা এবং উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদানে নিবিড়ভাবে কাজ করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং কর্মসংস্থানে অবদান রেখে যাচ্ছেন। এর বাইরেও বাংলাদেশ উইমেন ইন টেকনোলজির (বিডাব্লিউআইটি) ভাইস প্রেসিডেন্ট ও সহপ্রতিষ্ঠাতা হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি সোনিয়া বশির কবির বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এ কাজ করছেন। পাশাপাশি তিনি নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির (এনএসইউ) বিজনেস ও কম্পিউটার সায়েন্স স্কুল ও ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের (আইইউবি) বিজনেস স্কুলের বোর্ড সদস্য হিসেবেও কাজ করছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড মহিলা শাখা ও আবাহনীর নারী ক্রীড়া উন্নয়ন কমিটির সদস্য সোনিয়া বশির কবির স্কুলজীবন থেকেই ক্রিকেট ও ভলিবলসহ বিভিন্ন খেলার সঙ্গে যুক্ত।

সর্বশেষ খবর