শনিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
রাকিব রহমান শাওন ও ম্যা মো খাইং

নোবেল আসরে দুই বাংলাদেশি

নোবেল আসরে দুই বাংলাদেশি

সমাজে চলমান নানা সংকটের স্মার্ট সমাধানে সফলভাবে ব্যবহার হচ্ছে প্রযুক্তি। আর এই প্রযুক্তিকে যারা ব্যবহার উপযোগী করে তুলছেন তারা অবশ্যই কৃতিত্বের দাবিদার। ঠিক তেমনি বিশ্বের কাছে পরিচিত হতে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর দুই শিক্ষার্থী রাকিব রহমান শাওন ও ম্যা মো খাইং। লিখেছেন— তানিয়া তুষ্টি

 

‘মেক দেম স্ট্রং’ নামের প্রযুক্তিটি উদ্ভাবন করেছেন রাকিব রহমান শাওন। তার এই উদ্ভাবন শরণার্থী শিবিরের শিশুদের মাতৃভাষা নির্ভর ডিজিটাল ক্লাস নেবে। অন্যদিকে রাস্তায় মেয়েদের নিরাপদ চলাচলে সহায়ক ‘মুক্তি’ নামের একটি অ্যাপ উদ্ভাবন করার মতো প্রতিভা দেখিয়েছেন ম্যা মো খাইং। অসামান্য এই উদ্ভাবনের কারণে তারা এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের আসরে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।

আগামী ডিসেম্বর মাসে নরওয়ের অসলোতে টেলিনর ইয়ুথ ফোরামের ‘শান্তির জন্য ডিজিটালাইজেশন’ নির্ভর বৈশ্বিক আয়োজনে বিশ্বের ১২টি দেশের তরুণদের সঙ্গে তারাও উপস্থাপন করবেন নিজেদের ভাবনা। একই সময় অসলোতে নোবেল শান্তি পুরস্কারের আসরও কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাবেন নির্বাচিত এই দুই তরুণ-তরুণী।

 

রাকিবের মেক দেম স্ট্রং

দুই বছর আগে সিরিয়ার ছোট্ট শিশু আইলান কুর্দির মর্মান্তিক মৃত্যু নাড়া দিয়ে যায় রাকিবকে। সমুদ্রের ঢেউয়ে তীরে ভেসে আসে আইলানের লাশ। প্রাণভয়ে নিজ দেশ থেকে অন্য দেশে আশ্রয় নিতে যাওয়ার আগেই পানিতে ডুবে হারিয়ে বসে প্রাণ। এমন অনিশ্চিত জীবন নিয়ে প্রতিদিন ফেরার হচ্ছে হাজার শিশু। সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশেও আশ্রয় নিয়েছে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। রাকিবের ভাবনা শুরু হয়েছে সেই দুই বছর আগে থেকেই। রাকিব ভাবতে থাকেন শরণার্থীদের জন্য কিছু করার। আর সেটি যেন দীর্ঘ মেয়াদে শরণার্থীদের জন্য সুফল বয়ে আনতে সক্ষম হয়। ভাবতে ভাবতে একসময় পেয়ে যান মাল্টিমিডিয়া কনটেন্টের ধারণা। এটি অবশ্য অনলাইন কোনো মাধ্যমে নয়। এর কারণ হলো, শরণার্থীদের কাছে উন্নত ধরনের প্রযুক্তি থাকবে না- এটিই স্বাভাবিক। তাই সরাসরি শরণার্থী ক্যাম্পে গিয়ে পাঠদান করা হবে। রাকিবের মেক দেম স্ট্রং হবে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। যে কেউ স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এতে কাজ করতে পারবেন। দূরে থাকলেও মাল্টিমিডিয়া পাঠ্যবই বানিয়ে তাদের কাছে পাঠাতে পারবেন। প্রশ্ন থাকতে পারে কেমন কনটেন্ট তারা শরণার্থীদের কাছে দেবেন? আজ শুধু আমাদের দেশে নয়, পুরো বিশ্বেই শরণার্থীরা ছড়িয়ে পড়ছে। তাই মাল্টিমিডিয়া পাঠ্যবইটি বিশ্বজুড়ে ব্যবহারের উপযুক্ত করেই বানানো হয়েছে। এ জন্য শরণার্থীরা যে দেশের হবেন, তাদের দেশের পাঠক্রম অনুযায়ী এবং তাদের ভাষায় পাঠদান করতে সক্ষম হবে। এ জন্য অবশ্য রাকিব ওই সব দেশের স্বেচ্ছাসেবক চান। যাতে করে তাদের নিজ ভাষায় দক্ষ এবং পাঠক্রম অনুযায়ী পাঠদান করা সম্ভব হয়। এরই মধ্যে প্রাথমিক কাজ শুরু করেছে মেক দেম স্ট্রং। দেশে আসা রোহিঙ্গাদের পাঠ দিয়ে তারা তাদের কার্যক্রম শুরু করবেন।

 

ম্যা-এর প্লাটফর্ম মুক্তি

ওয়েবসাইট, অ্যাপ্লিকেশন (অ্যাপ) ও ফোনের হটলাইন- এই তিন মাধ্যমে প্লাটফর্ম মুক্তি সেবা দেবে বলে দাবি ম্যা মো খাইং-এর। অ্যাপটির মাধ্যমে বাসার বাইরে বেরোনোর আগেই ঘরে বসে জেনে নেওয়া যাবে কোন রাস্তার কী অবস্থা। এতে যাত্রী কোন রাস্তা ব্যবহার করবে, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। মূলত প্লাটফর্ম মুক্তি অ্যাপে বিভিন্ন সাংকেতিক চিহ্ন দেখে ব্যবহারকারীরা সড়কের অবস্থা জেনে নিতে পারবেন। অ্যাপটির সঙ্গে যুক্ত থাকবে গুগল ম্যাপ। যাদের স্মার্টফোন নেই, তারা হটলাইনে কল করে তথ্য জেনে নিতে পারবেন। এ ছাড়াও অ্যাপটির ওয়েব সংস্করণও থাকবে।

এখন পর্যন্ত উদ্যোগটি ধারণা পর্বেই রয়েছে। আপাতত তাদের ভাবনা টেলিনর ইয়ুথ ফোরামের চূড়ান্ত পর্ব ঘিরে। সেখানে ভালোভাবে উপস্থাপনের প্রস্তুতিই নিচ্ছেন তারা। ধারণাটিকে কীভাবে আরও উন্নত করা যায়, এসব নিয়ে কাজ চলছে। পর্যাপ্ত বিনিয়োগ পেলে পরবর্তী ধাপের কাজ শুরু করবেন। আজকাল মেয়েরা পড়াশোনার পাশাপাশি নানা ধরনের অ্যাক্টিভিটিতে যুক্ত থাকে। অধিকাংশ দিন বাসায় ফিরতে দেরি হয়। এতে ঘরে সবাই দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। নানা উৎকণ্ঠা কাজ করে রাস্তার পরিস্থিতি নিয়ে। এ ছাড়া আমাদের দেশে মেয়েদের বাইরে বেরোনো নিয়ে পরিবারের মধ্যে একটা দুশ্চিন্তা থাকেই। তাই এমন পরিস্থিতিতে কিছু করতে চাইছিলেন ম্যা মো খাইং। যাতে নারীরা ঘর থেকে বেরোনোর আগেই জানতে পারেন, তাদের জন্য কোন রাস্তাটি তখন নিরাপদ। তাছাড়া দ্রুত ও সহজেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন এমন রাস্তার সন্ধানও তারা পেয়ে যাবেন।

এই অ্যাপটি শুধু পূর্বাভাসই দেয় না, রাস্তায় কোনো ধরনের বিপদ হলেও তাদের অ্যাপ কিংবা হটলাইন ব্যবহার করে সাহায্য চাওয়া যাবে। তাত্ক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করতে পারবে নিকটস্থ পুলিশ স্টেশনেও।

নোবেল পিস সেন্টার (এনপিসি) ও টেলিনর গ্রুপ আয়োজিত ইয়ুথ ফোরাম ১৩টি দেশের ১৮ থেকে ২৮ বছরের তরুণ-তরুণীদের জীবন বদলানো ধারণা উপস্থাপনের সুযোগ দেয়। এ বছর প্রায় ১৫০০ বাংলাদেশি তরুণ-তরুণী এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে আবেদন করেন। তাদের মধ্যে বাছাই করা ৭ জনকে নিয়ে বাংলাদেশে এর চূড়ান্ত নির্বাচনী পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

সাম্প্রতিক উপযোগিতা বিচারে চূড়ান্ত পর্বে ৭ জন প্রতিযোগীর ৭টি আইডিয়া বা প্রযুক্তির উদ্ভাবনী প্রয়োগ থেকে ম্যা মো খাইং এবং রাকিব রহমানের প্রকল্প দুটি নির্বাচন করা হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর