শনিবার, ১১ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাংলাদেশি চিকিৎসকের হাতে মার্ক হাইপারটেনশন অ্যাওয়ার্ড

বাংলাদেশি চিকিৎসকের হাতে মার্ক হাইপারটেনশন অ্যাওয়ার্ড

বিশ্বজুড়ে নানা অর্জনে আজ বাংলাদেশের নাম উচ্চারিত হচ্ছে অনন্য সম্মানে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রসরমান তরুণ-তরুণীদের অর্জন বাংলাদেশকে তুলে ধরছে সম্ভাবনার অপার ভূমি হিসেবে। সম্প্রতি বাংলাদেশি চিকিৎসক ডা. উম্মে নাঈমার হাতে উঠেছে মার্ক হাইপারটেনশন অ্যাওয়ার্ড। সে অর্জনের বিস্তারিত লিখেছেন— সাইফ ইমন

 

সম্প্রতি প্রথম বাংলাদেশি চিকিৎসক হিসেবে ‘মার্ক হাইপারটেনশন অ্যাওয়ার্ড ২০১৭’ বিজয়ী হন ডা. উম্মে নাঈমা। ২৫ অক্টোবর মিসরের কায়রোতে এশিয়া আফ্রিকা লুমিনারি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পুরস্কৃত হয়ে নাঈমা সুযোগ পেয়ে যান যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ওয়েলসে এক বছরমেয়াদি ‘ডিপ্লোমা ইন কার্ডিওভাসকুলার মেডিসিন’ কোর্স করার। কনফারেন্সে বিশ্বের প্রায় ৫০টি দেশের ৪৫০ জন চিকিৎসক, গবেষক, অধ্যাপক, শিক্ষাবিদ, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ফার্স্ট লেডি ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা উপস্থিত ছিলেন।

ডা. উম্মে নাঈমা বর্তমানে এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ, দিনাজপুরে শিক্ষানবিস চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি এ কলেজের ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার জন্ম কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ গ্রামে। পাঁচ বছর বয়সে চট্টগ্রাম চলে যান। স্কলাস্টিকা হাইস্কুল থেকে এসএসসি ও এইচএসসি সম্পন্ন করেন চট্টগ্রাম কলেজ থেকে। পরিবারের ইচ্ছায় চিকিৎসাবিদ্যার ছাত্রী হওয়া। এখানে পড়তে এসে জীবনকে নতুন করে ভাবতে শিখেছি— বলেন উম্মে নাঈমা। তিনি বিশ্বাস করেন, একজন চিকিৎসকের জীবন যতটা না তার নিজের এর চেয়ে অনেক বেশি সমাজের মানুষের জন্য। তাই চিকিৎসক হিসেবে সেবা দিতে গিয়ে তাকে সমাজের আর দশজন মানুষের চেয়ে অনেক বেশি আত্মত্যাগী হতে হবে। কাজ করে যেতে হবে নিরলসভাবে। আর এ ত্যাগ বা পরিশ্রম কখনো সাধারণ মানুষের চোখে পড়ে না, পড়ার প্রয়োজনও নেই। শুধু সেবার উদ্দেশ্যে চিকিৎসক হিসেবে আজীবন মানুষের পাশে থাকতে চান ডা. উম্মে নাঈমা।  

‘মার্ক ফাউন্ডেশন’ ১৬৬৮ সালে জার্মানিতে প্রতিষ্ঠিত পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম ও প্রাচীন ফার্মাসিউটিক্যাল ও কেমিকেল কোম্পানির মার্ক এর একটি উদ্যোগ। পৃথিবীব্যাপী প্রায় ৫০টির অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে  যৌথভাবে ক্যান্সার, বন্ধ্যত্ব, অসংক্রামক ব্যাধি যেমন উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং থাইরয়েডের অসুখ নিয়ে কাজ করে আসছে মার্ক ফাউন্ডেশন। এটি মার্কের চতুর্থ এশিয়া আফ্রিকা লুমিনারি কনফারেন্স এবং দ্বিতীয়বারের মতো হাইপারটেনশন অ্যান্ড ডায়াবেটিস অ্যাওয়ার্ড। গত বছর বিশ্বের ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৩০০ এর অধিক চিকিৎসক এ সম্মানজনক অ্যাওয়ার্ডের জন্য প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। বাংলাদেশ থেকে এবারই প্রথম চিকিৎসক এবং মেডিকেল শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

মার্ক হাইপারটেনশন অ্যাওয়ার্ড ২০১৮ এর জন্য আগামী ডিসেম্বরে প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে অনুরূপ ওয়ার্কশপ আয়োজন করতে যাচ্ছে, আগ্রহীরা প্ল্যাটফর্ম রিসার্চ উইং-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।

চিকিৎসাবিদ্যার পুঁথিগত জ্ঞানে এবং শিক্ষানবিস চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতায় তিনি লক্ষ্য করেন আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ সর্দি-কাশি, জ্বর, ছোটখাটো ইনফেকশন, আঘাতজনিত ব্যথার ব্যাপারে যতটা সতর্ক কিন্তু প্রাণঘাতী দীর্ঘমেয়াদি অসুখগুলোর ব্যাপারে ততটা সচেতন নন। তাই উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস প্রাথমিক অবস্থায় নির্ণয়ের জন্য তারা সচেষ্ট নন। এসব রোগ প্রাথমিক অবস্থায় কোনো উপসর্গ প্রকাশ করে না। বরং নানাবিধ শারীরিক জটিলতা, যেমন— হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, অন্ধত্ব,  কিডনি বিকল হওয়া ইত্যাদি নিয়ে রোগগুলো প্রকাশ পায়। অর্থাৎ আপাত সুস্থ ব্যক্তির একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস হতে পারে। অথচ নিয়মিত চেকআপে থাকলে এসব শারীরিক জটিলতা ঠেকানো সম্ভব। তাই ডা. উম্মে নাঈমা জনগণকে এসব অসংক্রামক ব্যাধির ব্যাপারে সচেতন করতে নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে চান। উচ্চতর পড়াশোনা করতে চান জনস্বাস্থ্য বিষয়ে। তার চিকিৎসক স্বামী আরেক অসংক্রামক ব্যাধি ক্যান্সার বিষয়ে উচ্চতর প্রশিক্ষণে আছেন। চিকিৎসক স্বামীর অনুপ্রেরণায় তাই মার্ক হাইপারটেনশন অ্যাওয়ার্ড ২০১৭-তে অংশগ্রহণ। সাধারণ মানুষকে অসংক্রামক ব্যাধি সম্পর্কে সচেতন করতে নিজের উদ্ভাবনী ধারণা উপস্থাপন করে বিশ্বের অন্তত ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক ও চিকিৎসা শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে তিনি এ পুরস্কারের দশজন বিজেতার একজন হিসেবে বিবেচিত হন। আগামী দিনগুলোতে আরও দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করতে পুরস্কারটি তাকে আত্মবিশ্বাসী করবে বলেই ধারণা করছেন। বাতিঘরের এলাকা কুতুবদিয়ায় জন্ম ডা. উম্মে নাঈমা চান, বাতিঘর যেমন দূর সমুদ্র থেকে দৃশ্যমান হয় তেমনি বাংলাদেশের চিকিৎসক এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা পৃথিবীতে যেন সব দেশের কাছে সগর্বে নিজের অবস্থান জানান দিতে পারে। সে লক্ষ্যে পৌঁছানোর যাত্রায় তিনিও যেন চালিত হতে পারেন। সেজন্য সবার আশীর্বাদ কামনা করেন।

সর্বশেষ খবর