শনিবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
আইকন

বিশ্বের প্রথম হিজাবি সুপার মডেল

সাইফ ইমন

বিশ্বের প্রথম হিজাবি সুপার মডেল

‘বিশ্বের টপ মডেলিং এজেন্সির সঙ্গে আমার চুক্তি হয়েছে। আর এখনো আমার ‘হিজাব’ আমি মাথার মুকুট হিসেবে পরি। আমি বিশ্বাস করি কখনো নিজেকে পরিবর্তন করতে নেই, উল্টো তোমাকে খেলাটাই বদলে দিতে হবে।’

—হালিমা আদেন

 

সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া এক সোমালি মার্কিন তরুণী সৃষ্টি করেছেন নতুন ইতিহাস। এর মধ্য দিয়ে সৌন্দর্য শিল্প পেয়েছে এক নতুনমাত্রা। ১৯ বছরের সোমালি-মার্কিন এই তরুণী হলেন হালিমা আদেন। মিস মিনেসোটা ইউএসএ সুন্দরী প্রতিযোগিতায় বোরকা আর হিজাব পরে অংশগ্রহণ করেন তিনি।  প্রতিযোগিতার পুরোটা সময় শুধু চেহারা বাদে আপাদমস্তক কাপড়ে ঢাকা ছিল এই তরুণীর। সুন্দরী প্রতিযোগিতার অন্যতম পর্ব হলো ‘সুইমস্যুট রাউন্ড’। এ পর্বে প্রতিযোগীরা বিকিনি পরে নিজেদের শারীরিক সৌন্দর্য প্রদর্শন করেন। আর সেখানেই বোরকা আর হিজাব পরে অংশ নেন হালিমা। দুই দিন ধরে চলা এই প্রতিযোগিতায় হালিমার শুধু চেহারাই দেখা গেছে। এবারই প্রথম মিস মিনেসোটা ইউএসএ প্রতিযোগিতার সেমিফাইনালে কোনো প্রতিযোগী হিজাব পরে অংশ নিলেন। আর এবারের প্রতিযোগিতার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল— ‘আত্মবিশ্বাসই নারীর সৌন্দর্য’। এদিক দিয়ে হালিমা আদেন পুরোপুরি সফল। বোরকা আর হিজাব পরে কোনো সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া এক অর্থে নিজের আত্মবিশ্বাসেরই প্রতিফলন।

হালিমা আদেন বলেন, স্বল্প পোশাক পরেই নয়, সম্পূর্ণ শরীর ঢেকেও যে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া যায় এটাই এখন প্রমাণিত হয়েছে।

নিজের স্বতন্ত্র পরিচিতি গড়ে তোলার পাশাপাশি ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণাও ভাঙতে চেয়েছিলেন হালিমা। সেই সঙ্গে প্রথম সোমালি-আমেরিকান হিসেবে মিস মিনেসোটা ইউএসএ সুন্দরী প্রতিযোগিতায় সেমিফাইনালিস্ট হওয়ার রেকর্ডও করেছেন হালিমা আদেন। কলেজে পড়ার সময়ও প্রথম কলেজ স্টুডেন্ট গভর্নমেন্টের সোমালি-মার্কিন সদস্য নির্বাচিত হন হালিমা। এমনকি স্কুলে প্রথম মুসলিম হোমকামিং কুইনের খেতাবও জিতেছিলেন তিনি।

 

জন্মেছিলেন শরণার্থী শিবিরে

হালিমা আদেন জন্মগ্রহণ করেন মুসলিম পরিবারে কেনিয়ার এক শরণার্থী শিবিরে। সময়টা ১৯৯৭ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। হালিমার বয়স যখন ৬ তখন তার পরিবার অভিবাসী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটায় আসে। এখানেই কৈশোর অতিক্রম করেছেন হালিমা আদেন। বর্তমানে সেন্ট ক্লাউড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে অধ্যয়ন করছেন এই সুপার মডেল।

 

পেছনে লোকে কিছু বলে

বিশ্বের সেরা মডেল এজেন্সির সঙ্গে তিন বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে এখন যুক্তরাষ্ট্রের সুপার মডেল হালিমা আদেন। তার খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তেই। তখনই আসতে থাকে নানা বিরূপ মন্তব্য। অনেকে আবার তার পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। হালিমা বিশ্বাস করেন, কোনো কাজ করতে হলে বাধা আসবেই। তাই বলে লোকের কথা শোনার কোনো মানে নেই। যার এগিয়ে যাওয়ার সে এগিয়ে যাবেই। ধর্মীয় বিধি-নিষেধ মেনে কাজ করার জন্য তিনি সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন বোরকা আর হিজাব পরিধান করার জন্য। কর্তৃপক্ষ এতে সম্মতিও দেয়। এ প্রসঙ্গে ‘মিস মিনেসোটা ইউএসএ’ এর এক্সিকিউটিভ কো-ডিরেক্টর ডেনিস ওয়ালেস বলেন, হালিমার অধিকার আছে, সে যে রকম পোশাক পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে তাই পরতে দেওয়া উচিত। আর আমাদের এই প্রতিযোগিতাটির মূল প্রতিপাদ্য নারীর আত্মবিশ্বাসের ওপর জোর দেওয়া।

হালিমার স্বপ্ন একদিন সে জাতিসংঘের দূত হিসেবে কাজ করবে। হালিমা বলেন, আমি এটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। সফল হওয়ার জন্য আমি নিরলস পরিশ্রম করতে প্রস্তুত।

 

বাধা হয়েছিলেন ‘মা’

হালিমার মা খুবই ধার্মিক মহিলা। তাই তিনি নিজের মেয়েকে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পাঠাতে চাননি। তার ইচ্ছা মেয়ে পড়াশোনায় মনোযোগী হোক। এমনকি তাদের কমিউনিটি থেকেও অনেকে চায়নি কমিউনিটির কোনো মেয়ে সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নিক। কিন্তু মেয়ের স্বপ্ন যে আকাশছোঁয়া। তাই বোরকা আর হিজাব পরেই উদ্যোগ নেন সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য। প্রতিযোগিতার মাত্র তিন দিন আগে হালিমা তার মায়ের কাছে অনুমতি চাইতে যান। এর আগে তিনি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য যে বোরকা নিয়েছিলেন তা পরে মায়ের সামনে যান। তার মনে হয়েছিল এই রূপে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে নিশ্চয়ই মানা করবেন না মা।

কিন্তু বিধিবাম। মা তাতেও রাজি ছিলেন না তখনো। ফলে সুন্দরী প্রতিযোগিতাকে কেন্দ্র করে মা ও মেয়ের মধ্যে সৃষ্টি হয় দূরত্ব। প্রথম রানার্স আপ হওয়ার পর হালিমার মা জানান— এতে তিনি অখুশি নন।

সুপার মডেলের পথচলা

এ বছর হালিমা বিশ্বের অন্যতম প্রধান মডেল এজেন্সি ‘আইএমজি’র সঙ্গে তিন বছরের জন্য নবায়নযোগ্য চুক্তিতে সই করেন। এরপরই মূলত বিশ্ব মিডিয়ার আগ্রহের কারণে পরিণত হয় বোরকা আর হিজাবের কারণে। এর আগে বোরকা পরা সুপার মডেল দেখেনি বিশ্ব। নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকে অংশ নেন। এর আগে মিলান ফ্যাশন উইকে এবং লন্ডন মডেস্ট ফ্যাশন উইকে অংশ নিয়েছিলেন। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ম্যাগাজিনের কভারে ইতিমধ্যে স্থান করে নিয়েছেন সুপার মডেল হালিমা আদেন। যথারীতি হিজাব পরেই সব জায়গায় সরব উপস্থিতি বিশ্বের প্রথম এই হিজাবি সুপার মডেলের।

সর্বশেষ খবর