শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা
গৌরব

কঙ্গোর আকাশে বাংলার দুই নারী বৈমানিক

জয়শ্রী ভাদুড়ী

কঙ্গোর আকাশে বাংলার দুই নারী বৈমানিক

স্বপ্নযাত্রায় বাংলার দুই নারী বৈমানিকের অর্জনে যুক্ত হচ্ছে আরও একটি পালক। এবার তাদের মিশন মধ্য আফ্রিকার সংঘাতপূর্ণ দেশ ডি আর কঙ্গো। বলা হচ্ছে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করা দুজন প্রথম নারী পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুত্ফীর কথা। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীতেও তারা প্রথম পাইলট হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন...

 

‘থাকব না কো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগত্টাকে, কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে।’ জাতীয় কবি কাজী নজরুলের সংকল্প কবিতার মতোই আকাশজয়ের স্বপ্ন ছিল তাদের চোখে। সেই স্বপ্নযাত্রায় বাংলার দুই নারী বৈমানিকের অর্জনে যুক্ত হচ্ছে আরও একটি পালক। এবার তাদের মিশন মধ্য আফ্রিকার সংঘাতপূর্ণ দেশ ডিআর কঙ্গো। বলা হচ্ছে, জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করা দুজন প্রথম নারী পাইলট ফ্লাইট  লেফটেন্যান্ট নাইমা হক ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুত্ফীর কথা। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী তথা সশস্ত্র বাহিনীতেও তারা প্রথম পাইলট হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন।

গত বৃহস্পতিবার এই দুই পাইলট ডিআর কঙ্গোর উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন। সেখানে জাতিসংঘ মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এমআই-১৭ হেলিকপ্টারের কো-পাইলট হিসেবে এক বছর দায়িত্ব পালন করবেন তারা। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে নারী কর্মকর্তা নিয়োগ শুরু হয় ২০০০ সালে। পরে সামরিক বৈমানিকের মতো চ্যালেঞ্জিং ও ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নারীদের যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাইয়ের পর বিমান বাহিনীতে কর্মরত দুজন নারী কর্মকর্তা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট নাইমা হক ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তামান্না-ই-লুত্ফী মনোনীত হন উড্ডয়ন প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে। বিমান বাহিনী ঘাঁটি বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের ১৮ নম্বর স্কোয়াড্রনে বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে বেসিক কনভার্সন কোর্সের জন্য মনোনীত হওয়া এই দুই নারী কর্মকর্তা ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট গ্রাউন্ড প্রশিক্ষণ শুরু করেন। এরপর উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ শুরু করেন ওই বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর। ২৫ ঘণ্টা সফল উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ শেষে তারা একক উড্ডয়ন সম্পন্ন করেন। এভাবে এই দুই নারী ২০১৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর তাদের প্রশিক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অতিক্রম করে বৈমানিক হয়ে উঠার প্রাথমিক পর্যায় শেষ করেন। এদিন তৎকালীন বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী তাদের অভিনন্দন জানান এবং তাদের ফ্লাইং কাভার অল-এ স্কোয়াড্রন ব্যাজ পরিয়ে দেওয়া হয়।

বেল-২০৬ হেলিকপ্টারে ৬৫ ঘণ্টা উড্ডয়নের প্রাথমিক ধাপ সম্পন্ন করার পর বিমান বাহিনীর বিভিন্ন হেলিকপ্টার স্কোয়াড্রনে দায়িত্ব পালন করেন নাইমা ও তামান্না। এর মধ্যে তারা ২০৬ হেলিকপ্টার কনভার্সন কোর্স, এমআই-১৭, এমআই-১৭১ এবং এমআই-১৭১ এসএইচ হেলিকপ্টার প্রশিক্ষণও সমাপ্ত করেছেন। ভারত থেকে এভিয়েশন মেডিসিনেও প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন্স উত্তরণে অপারেশনাল পাইলট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তারা।

গত সোমবার ঢাকা সেনানিবাসে বিমান বাহিনীর ঘাঁটি বাশারে একটি এমআই-১৭ হেলিকপ্টার উড়িয়ে নিজেদের অনুশীলনও সারলেন এই দুই নারী পাইলট। সামরিক বাহিনীতে নারীদের কাজের চ্যালেঞ্জ বিষয়ে তারা বললেন, ‘যোগ্যতা ও মেধাসম্পন্ন যে কেউ সামরিক বাহিনীর মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় আসতে পারেন। এখানে মেধা বিকাশের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। নারীদের জন্য এখানে যথেষ্ট সম্মানও রয়েছে।’

শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনে নিজেদের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এই হেলিকপ্টার পরিচালনায় দায়িত্ব পালন করেছি আমরা। এর মধ্য দিয়ে দুর্গম এলাকায় উড্ডয়ন ও অবতরণে অভ্যস্ত হয়েছি আমরা। নাইমা ও তামান্না দুজনেরই বেড়ে উঠা ঢাকায়। তামান্নার বাবা বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তাই ছোটবেলা থেকে বিমানচালকই হতে চেয়েছিলেন তিনি। নাইমার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। মা-বাবা দুজনই চেয়েছিলেন মেয়ের বৈমানিক হওয়ার ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিতে। তাদের পরিবারে ছেলেমেয়েকে কখনো আলাদা মনে করা হয় না। দুজনের পরিবারই তাদের সব সময় সাহস জোগায়। কঙ্গোতে যাওয়ার বিষয়ে নাইমা ও তামান্না দুজনই  রোমাঞ্চিত। বাংলাদেশের মেয়েদের জন্য এটা বড় অর্জন। এই দুজনকে দেখে অনেক পরিবার তাদের মেয়ের বৈমানিক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে উদ্যোগী হবে।

সম্প্রতি হয়ে যাওয়া ঢাকা লিট ফেস্টে এই দুজন ‘হার স্টোরি : অ্যাডভেঞ্চারস অব সুপারগার্লস’ বইটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বইটিতে নাইমা ও তামান্নার সাহসিকতার গল্পও আছে। কেমন লেগেছে জানতে চাইলে, ‘নাইমা বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে এটা অনেক বড় পাওয়া। খনা থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসিকতার গল্প আছে। এমন ইতিহাসে অবদান রাখা নারীদের পাশে নিজেদের স্থান দেখে খুব ভালো লেগেছে। তামান্না অবশ্য বক্তিগত সাফল্য হিসেবে দেখতে চাচ্ছেন না বিষয়টিকে। তিনি মনে করেন, বইটিতে তিনি স্থান পেয়েছেন বিমান বাহিনীর জন্য।

সর্বশেষ খবর