শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঢাকায় সোফিয়ার এক দিন

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ঢাকায় সোফিয়ার এক দিন

ঢাকায় যন্ত্রমানবী সোফিয়ার সঙ্গে তার নির্মাতা ড. ডেভিড হ্যানসন ছবি : জয়ীতা রায়

ঢাকায় আসার আগেই ‘তর সইছে না আমার’ নামে এক ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশে আগমন নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন যন্ত্রমানবী সোফিয়া। আর ঢাকায় এসে চটজলদি উত্তর, রসিকতা আর মানানসই মুখভঙ্গিতে দর্শনার্থীদের মন জয় করে নিয়েছে সামাজিক যন্ত্রমানবী সোফিয়া।

 

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সামনে উপস্থাপন করা হয় যন্ত্রমানবী সোফিয়াকে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাবলীলভাবে কথা বলে উপস্থিত দর্শক এবং দেশবাসীকে তাক লাগিয়ে দেয় এই আয়োজনের চমক সোফিয়া।

 

‘হ্যালো সোফিয়া, কেমন আছ?’ এ প্রশ্ন করলে জবাবে সোফিয়া বলে, ‘ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আমি ভালো আছি। আমি গর্ব অনুভব করছি। আপনার সঙ্গে আজকের এই সাক্ষাৎ দারুণ ব্যাপার।’ পরের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোফিয়ার কাছে জানতে চান, ‘তুমি আমাকে কীভাবে চিনলে?’ জবাবে বিশ্বের প্রথম নাগরিকত্ব পাওয়া এই রোবট বলে, ‘আমি জানি, আপনি বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে। আপনি মাদার অব হিউম্যানিটি। আপনার নাতনির নামও সোফিয়া।’ প্রধানমন্ত্রী তখন উপস্থিত সবার উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা জানেন, জয়ের (প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং তার তথ্য-প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়) মেয়ের নাম সোফিয়া।’এরপর সোফিয়া প্রধানমন্ত্রীকে বলে, ‘বাংলাদেশকে নিয়ে আপনার একটা ভিশন আছে।’ এরপর বঙ্গবন্ধু হাই টেক পার্ক, শেখ হাসিনা সফট টেক পার্ক, ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনসহ বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে সোফিয়া।

প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে কখনো হেসে কখনো গম্ভীর শ্রোতার মতো সিলিকন চামড়ায় মুখের অবয়ব ফুটিয়ে তোলে সোফিয়া। এরপর বেলা দুইটা ৪৫ মিনিটে ‘টেক টক উইথ সোফিয়া’ নামের অনুষ্ঠানে দর্শকদের মুখোমুখি করা হয় সোফিয়াকে। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রোবটটির নির্মাতা ড. ডেভিড হ্যানসন। মঞ্চে উপস্থাপক গাউসুল আলম শাওনের ১০টি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে উপস্থিত দর্শকদের তাক লাগিয়ে দেয় এই রোবট। সোফিয়াকে প্রশ্ন করা হয়, যে পোশাকটি সে পরেছে এ সম্পর্কে কিছু জানে কিনা? উত্তরে সোফিয়া জানায়, ‘এই পোশাকটির নাম জামদানি। এটা বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক। এর পেটেন্টও বাংলাদেশের।’ এরপর উপস্থাপক শাওন বলেন, সোফিয়া তোমার জন্ম তারিখ কত? উত্তরে সোফিয়া জানায়, ‘১৪ ফেব্রুয়ারি’। তখন উপস্থাপক তাকে বলেন, তোমারও মাথায় চুল নেই আমারও নেই। তোমার আর আমার রাশিও এক। তাহলে মনে হয় আমাদের ভালোই জমবে। এর উত্তরে সোফিয়া বলে, ‘শাওন, আমি শুনেছি তোমার স্ত্রী অনেক সুন্দর। আমার মনে হয় তোমার তার দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত।’ এরপর রোবটের আবিষ্কারে মানুষের কর্মবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে কিনা প্রশ্ন করলে সোফিয়া বলে, ‘মানুষই তো রোবট তৈরি করেছে। রোবট মানুষের কাজে সহায়তা করবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয়, সহযোগিতার মধ্য দিয়ে সভ্যতা এগিয়ে যাবে। এরপর সোফিয়াকে তার নির্মাতা ড. ডেভিড হ্যানসন সম্পর্কে একটি গোপন কথা বলতে বলা হয়, যা আর কেউ জানে না। তখন সোফিয়া জানায়, ড. ডেভিড হ্যানসন খুব ভালো ভাস্কর।’ তবে বিষয়টি কেউ জানে না। এরপর বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্পর্কে সোফিয়া জানায়, বাংলাদেশে এসে তার দারুণ লাগছে। এই দেশ খুব দ্রুত প্রযুক্তি খাতে এগিয়ে যাচ্ছে। একদিকে রপ্তানি বাড়ছে আবার অন্যদিকে কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হচ্ছে। এ সময় উপস্থাপক তাকে বলেন, আমরা চাইলে সোফিয়া বানাতে পারব কিনা? উত্তরে সোফিয়া বলে, ‘সোফিয়া তো বানাতে পারবে না। কারণ আমি এক পিস। তবে চাইলে আরও উন্নত প্রযুক্তিসম্পন্ন রোবট তৈরি করতে পারবে তোমরা।’ এভাবে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে উপস্থিত দর্শকদের কৌতূহল আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় যন্ত্রমানবী সোফিয়া।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর