শনিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

আয়মান সাদিকের হাতে আইসিটি অস্কার

বিশেষ অঙ্গনে ভূমিকা রাখার জন্য এরই মধ্যে অর্জন করে নিয়েছেন আইসিটি অস্কার হিসেবে খ্যাত অ্যাপিকটা পুরস্কার। আমাদের আয়মান সাদিকের তৈরি ‘টেন মিনিট স্কুল’ এর হাত ধরে বাংলাদেশের ঘরে উঠল এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ‘সপ্তদশ অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডস ঢাকা ২০১৭’।

তানিয়া তুষ্টি

আয়মান সাদিকের হাতে আইসিটি অস্কার

তথ্য-প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহারে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ। ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে নিজের ঝুলিতে তুলে নিচ্ছে সফলতা। তার স্বীকৃতিও মিলছে বিশ্বদরবার থেকে। বিশেষ অঙ্গনে ভূমিকা রাখার জন্য এরই মধ্যে অর্জন করে নিয়েছে আইসিটি অস্কার হিসেবে খ্যাত অ্যাপিকটা পুরস্কার। আমাদের আয়মান সাদিকের তৈরি ‘টেন মিনিট স্কুল’-এর হাত ধরে বাংলাদেশের ঘরে উঠল এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ‘সপ্তদশ অ্যাপিকটা অ্যাওয়ার্ডস ঢাকা ২০১৭’। এশীয় প্রশান্ত মহাসাগরীয় এ অঞ্চলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ই-লার্নিং ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হলো। এই প্রতিযোগিতায় মোট ১৭টি ক্যাটাগরির মধ্যে সর্বোচ্চ চারটিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে হংকং। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩টি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে শ্রীলঙ্কা। থাইল্যান্ড ও চীন সমান দুটি করে ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ঢাকায় প্রথমবারের মতো আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় ১৫টি দেশ অংশগ্রহণ করে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) অ্যাপিকটার সদস্য পদ লাভ করে। মাত্র দু্ই বছরের মাথায় বাংলাদেশ একটি ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হলো। এ ব্যাপারে ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

‘টেন মিনিট স্কুল’ (www.youtube.com/10minuteschool) টিমে আয়মান সাদিকের সঙ্গে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি আর বিইউপির  শতাধিক মেধাবী সদস্য। তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় বর্তমানে প্রতিদিন দেশের দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থীকে টিউশন দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। এই স্কুলের শুরুটা হয়েছিল ২০১৫ সালে। বিনা খরচে পড়ালেখার এক সাইট, যেখানে একটু ভিন্নভাবে, কৌশল আর সৃজনশীলতার মিশেলে শেখানো হয়। ‘শেখো, অনুশীলন করো এবং উন্নত হও’ এই ট্যাগ লাইন নিয়ে শুরু হয় অনলাইন স্কুলটির পথচলা। ১০ মিনিটের স্কুল বিশ্বাস করে মুক্ত শিক্ষাব্যবস্থায়। তারা মনে করে শিক্ষা সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া উচিত।

ঠাকুরগাঁও-এর ছেলে আয়মান সাদিক ২০১২ সালে ঢাকায় পড়ালেখার পাশাপাশি টিউশনি করে নিজের খরচ চালাতেন। বাড়ি থেকে যে পরিমাণ টাকা পেতেন তা পর্যাপ্ত ছিল না। তখন তিনি অনুভব করেন, আমি বাড়ি থেকে টাকা পাচ্ছি, আবার টিউশনি করছি তারপরও মাঝে মাঝে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাহলে যাদের এই সুযোগটুকুর অভাব তাদের জন্য ঢাকায় এসে পড়ালেখা চালানো কতই না কষ্টকর। বিশেষ করে যারা ভর্তি পরীক্ষার জন্য পড়ালেখা করতে চাচ্ছেন তাদের জন্য বিষয়টি আরও বেশি দুরূহ। এমন অবস্থায় হুট করেই তার মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল, আমি তো এখানে টিউশনি করাচ্ছি, একই সঙ্গে যদি এই লেসনগুলো ইউটিউবের মাধ্যমে ছেড়ে দিই তাহলে দূর-দূরান্তে বসেও ছেলেমেয়েরা আধুনিক উপায়ের পড়াশোনা আয়ত্ত করতে পারবে। তা ছাড়া পরিচিত অনেকেই মোবাইলে পড়াশোনার বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কেও জানতে চাইত। যেই ভাবা সেই কাজ। তখন তিনি শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু ছেলেমেয়েদের পড়াতেন। তাদের জন্যই বিভিন্ন ভিডিও তৈরি করতে লাগলেন। আয়মান সাদিক বলেন, সময় বদলের সঙ্গে ছোট্ট স্কুলটিতে যোগ হয়েছে আরও অনেক কিছু। আমার স্কুলকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করতে নিজেও বিভিন্ন সাইট দেখতে থাকি। তারপর একে একে লাইভ ক্লাস থেকে শুরু করে টিউটোরিয়াল ভিডিও, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করার লক্ষ্যে মডেল টেস্ট আর কুইজ সংযোজন করতে থাকি। শুধু তা-ই নয়, জেএসসি, এসএসসি, বিসিএস পরীক্ষা, ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষার জন্যও নানা প্রকার কুইজ আর ভিডিও টিউটোরিয়াল রয়েছে সাইটটিতে। এ ছাড়াও বিদেশে পড়ালেখা করতে হলে পরীক্ষা নামের যে বাধা পেরিয়ে আসতে হয়, সে বাধাকে সহজ করার জন্য এসএটি, জিআরই, জিম্যাট আর আইইএলটিএস-এর অনুশীলনের জন্যও টেন মিনিট স্কুল রেখেছে ১০ মিনিটের মজাদার সব মডেল টেস্ট আর কুইজ। আসছে জানুয়ারিতে মোবাইল অ্যাপ নিয়ে আসছে টেন মিনিট স্কুল। সেখানে প্রথম শ্রেণি থেকে সব ধরনের পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে। মডেল টেস্ট নেওয়ার পর উত্তর মূল্যায়ন করা, অন্যদের ফলাফলের সঙ্গে তুলনা করার পর ফলাফল অনুসারে প্রতিক্রিয়াও জানাবে অনলাইন এ সাইটটি। এসবের সঙ্গে যোগ হয় গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্যের এক ভাণ্ডার। সবচেয়ে বড় কথা হলো এই যে এত কিছু, পুরোটাই একদম ফ্রি। বলতে গেলে এমন একটা সাইট বাংলাদেশে একটিই।

টেন মিনিটস স্কুলের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংযোজন লাইভ অ্যাডমিশন কোচিং। বিপুল জনপ্রিয় এ ফিচারটির গ্রাহক বর্তমানে ৫৩ হাজার ৪৫০। দেশের সর্বত্র শিক্ষার্থীদের কাছে মানসম্পন্ন শিক্ষা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ফেসবুকের লাইভ ফিচার ব্যবহার করে। ২০১৬ সালের জুন থেকে লাইভ ক্লাসের আয়োজন করে আসছে টেন মিনিটস স্কুল। সপ্তাহে পাঁচ দিন শিক্ষার্থীদের সামনে নির্ধারিত টপিকের ওপর আলোচনা নিয়ে উপস্থিত হচ্ছেন দক্ষ ইনস্ট্রাকটররা। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), ব্র্যাকসহ বেশ কিছু স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত ইনস্ট্রাকটর টিমের সদস্যরা প্রতিটি বিষয়ের ওপর অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও সহজবোধ্য উপায়ে ক্লাস নেন। গড়ে প্রতিটি ক্লাসে অংশ নেয় সাত হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী, প্রতিটি ক্লাসের পর বিষয়টি সম্পর্কে তাদের ধারণা আরও স্পষ্ট করার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রায় হাজার খানেক প্রশ্ন আসে। অনলাইন স্কুলটির শিক্ষার্থী তথা সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা বর্তমানে ১ লাখ ৭৬ হাজার। এর ভিডিও লাইব্রেরিতে ১ হাজার ১২১-এরও বেশি ভিডিও টিউটোরিয়াল আছে, যার সংখ্যা দিন দিন বেড়েছে। এ মুহূর্তে টেন মিনিটস স্কুলের সবচেয়ে কার্যকরী প্রোগ্রাম হলো লাইভ ক্লাস। গোটা বাংলাদেশে ৫৩ হাজার ৪৫০-এরও বেশি শিক্ষার্থী প্রতিদিন রাত ৮টায় অংশগ্রহণ করছে লাইভ ক্লাসে। স্কুলটির কার্যক্রম একটু অন্য রকম। টিমের যে কারও মাথায় যে কোনো আইডিয়া এলেই তা গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়। টিমের সবার এমন উদ্যোগী ভূমিকার জন্য হয়তো এত অল্প সময়ে একটি অনলাইন সাইট এতটা পরিচিতি পেয়েছে। এখানে যে কেউ চাইলে নিজের বিজ্ঞ মতামত দিতে পারেন।

সর্বশেষ খবর