শনিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
বিশ্বজুড়ে বাংলা

ব্যতিক্রমী বনসাই মেলা

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

ব্যতিক্রমী

বনসাই মেলা

পৃথিবীকে প্রাকৃতিকভাবে বাসযোগ্য, সবুজ ও শীতল রাখতে খুবই সহায়ক ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে গাছ। গাছের উপকারিতার বর্ণনাও সহজে শেষ হওয়ার নয়। বৃক্ষপ্রেমীরা তো নিজের ঘরের মাঝেও সবুজায়ন করতে পছন্দ করেন। তাদের জন্য নির্ভরতার উপকরণ হতে পারে বড় গাছেরই ছোট্ট সংস্করণ। আর সেদিকে খেয়াল রেখেই হয়তো প্রকৃতিপ্রেমীদের গবেষণার একটি ফল হচ্ছে বনসাই। ছোট্ট একটি বট কিংবা বাগানবিলাস দিয়ে তৈরি করা যায় মূল্যবান বনসাই। সেই বনসাইয়ের বিশাল বাগান গাজীপুর সিটি করপোরেশনের আমবাগ পশ্চিমপাড়া এলাকায়। মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার চর পাথালিয়া গ্রামের নূর মোহাম্মদ খানের ছেলে কে এম সবুজ এর উদ্যোক্তা। বর্তমানে তিনি বসবাস করেন গাজীপুরের আমবাগ পশ্চিমপাড়া এলাকায়। সেখানেই তার বনসাইয়ের কোটি টাকার স্বপ্নের বাগান। মাত্র একশ টাকা দিয়ে বনসাইয়ের বাগান শুরু করেছিলেন। সেই একশ টাকার বিনিয়োগ এখন এক কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। সবুজের এক বিঘা জমির বাগানে এখন বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২ হাজার বনসাই রয়েছে। বনসাই বিক্রি করে এখন তিনি প্রতি মাসে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করেন। বিদেশেও বনসাই রপ্তানির প্রস্তাব পেয়েছেন। তার বাড়ির উঠান থেকে শুরু করে ছাদেও রয়েছে কয়েক হাজার ছোট-বড় বনসাই। সবুজ তার বাগানে সংরক্ষণ করতে থাকেন বিরল প্রজাতির গাছের বনসাই। এগুলো নিয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো শীতকালীন বনসাই মেলা করে আলোচনার ঝড় তুলেছেন। সম্প্রতি করা দুই দিনের এ মেলায় ৬০ প্রজাতির ২০০টি বনসাই ছিল। এ ছাড়াও ৩৫ প্রজাতির ২ হাজার ফুলের চারাও ছিল এ মেলায়। মেলার নাম দেওয়া হয় ‘শীতকালীন বনসাই প্রদর্শনী ও ফুলেল মেলা’। ব্যতিক্রমী এই প্রদর্শনীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর। এই বনসাই মেলায় ছিল সুন্দরবনের সুন্দরী, যা সাধারণত বাংলাদেশের কোথাও পাওয়া যায় না। এ ছাড়া ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বাওবাব গাছ। হিজল, তমাল, মহুয়া, শিমুল, হরতকী, গড়াইল, বাইন, জিলাপী, তেঁতুল, কদবেল, কামরাঙ্গা, লেবু, বেল, সফেদা, পেয়ারা, আমলকী, দেশি গাব, বরই, আম, জাম, কাঁঠাল, জামরুলসহ বহু গাছের বনসাই।

উদ্যোক্তা সবুজের বনসাইয়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে মালয়েশিয়ায়। সেখানে পাঠানো হচ্ছে বরই, কৃষ্ণচূড়া, বাবলা ও নিম গাছের বনসাই। সবুজ সম্প্রতি বনসাইয়ের ওপর আরও বেশি জানার জন্য চীন দেশ সফর করেন।

ছোটবেলা থেকেই নার্সারির প্রতি সবুজের আগ্রহ ছিল। বনভোজনের জন্য ১৯৯৬ সালে তিনি সিলেটে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি নার্সারিতে বনসাই দেখে আগ্রহ জন্মায়। তারপর চারটি তেঁতুল গাছ ১০০ টাকা দিয়ে কিনে শুরু করেছিলেন বনসাইয়ের বাগান। এখন তার বাগানে এক হাজার থেকে শুরু করে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত দামের বনসাই রয়েছে। সব বনসাইয়ের আনুমানিক মূল্য আসতে পারে প্রায় এক কোটি টাকা। কে এম সবুজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘শুরুর দিকে অনেকে আমাকে পাগল বলত। জানতে চাইত এটা আবার কেমন গাছ। একটি বনসাই গাছ যখন ১০-১৫ হাজার টাকা বিক্রি করা হতো তখন প্রশ্ন করত এটা দিয়ে কী হবে, এর মধ্যে কতটুকু কাঠ হবে? তবে দিনে দিনে যখন এই বনসাই বিক্রি করে আয় বাড়তে শুরু হলো তখন সবাই বুঝতে পেরেছে এর গুরুত্ব অনেক।’

বর্তমানে তার কাজে স্ত্রী, মা, শ্বশুর-শাশুড়িসহ ১২ জন সহযোগিতা করেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কোনাবাড়ী বাজার থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার উত্তরে তার নার্সারি। সবুজের ছোট ছোট গাছের বাগান কোথায় জিজ্ঞেস করলে যে কেউ চিনতে পারেন। সেখানে গিয়ে দেখা গেছে প্রভাতি কিন্ডারগার্টেন নামের একটি স্কুলের পাশে হালকা বেড়া দেওয়া একটি বনসাইয়ের বাগান। পাশেই দুতলা একটি বাড়িতে সবুজ থাকেন। ওই বাড়ির আশপাশের এলাকাজুড়েই রয়েছে সবুজের বনসাই গাছের বাগান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর