শনিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

বিশ্বের প্রথম বাংলাভাষী রোবট রিবো

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট ও জোবায়ের মাহমুদ, শাবি

বিশ্বের প্রথম বাংলাভাষী রোবট রিবো

কিছু উদ্যমী তরুণের হাত ধরে নির্মিত রোবট রিবো। বিশ্বের প্রথম বাংলাভাষী রোবট এটি। সোশ্যাল হিউম্যানোয়েড এই রোবটটি মানুষের সঙ্গে বাংলায় কথা বলা এবং বাংলায় লিখতে পারাসহ বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দিতে পারে। ‘রিবো’ বাংলাদেশের প্রথম সোশ্যাল রোবটও। ‘রিবো’র কারিগর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগারো স্বপ্নবাজ তরুণ...

কথা বলতে পারা রোবট ‘সোফিয়া’ বাংলাদেশ ঘুরে গেছে গত বছর। হংকংয়ে বানানো ওই রোবটকে ঘিরে দেশে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। সোফিয়াকে দেখতে ছিল রীতিমতো হুড়োহুড়ি। অথচ এই আলোচনা আর হুড়োহুড়ি হতে পারত দেশি প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশেই তৈরি রোবট ‘রিবো’কে ঘিরে। কিছু উদ্যমী তরুণের হাত ধরে নির্মিত এই রোবট বিশ্বের প্রথম বাংলাভাষী রোবট। সোশ্যাল হিউম্যানোয়েড এই রোবটটি মানুষের সঙ্গে বাংলায় কথা বলা এবং বাংলায় লিখতে পারাসহ মানুষের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দিতে পারে। হিউম্যানোয়েড রোবট বলতে মানুষের মতো দেখতে ও মানুষের মতো আচরণ করতে সক্ষম রোবটকে বুঝায়। ‘রিবো’ বাংলাদেশের প্রথম সোশ্যাল রোবটও।

 

নেপথ্যের কারিগর : ‘রিবো’র কারিগর সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগারো স্বপ্নবাজ তরুণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং ও আর্কিটেকচার বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন তারা। ‘প্রজেক্ট রিবো’র পুরো তত্ত্বাবধানে ছিলেন শাবির সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. জাফর ইকবাল এবং টিম কো-অর্ডিনেটর হিসেবে ছিলেন সিএসই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. রুহুল আমিন।

 

শুরুর গল্প : কীভাবে তৈরি হলো রোবট ‘রিবো’? সেই গল্প বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলছিলেন ‘প্রজেক্ট রিবো’র সদস্য তৌফিক রহমান। তিনি বলেন, ‘২০১৩ সাল থেকে শাবির ‘রোবো সাস্ট’ রোবোটিক্স নিয়ে কাজ করে। ফান্ড পেলে বড় ধরনের প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়। বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি ২০১৫ সালে তাদের বার্ষিক প্রোগ্রামে প্রদর্শনীর জন্য একটি মানবসদৃশ রোবট বানানোর অনুরোধ করে রোবো সাস্টকে। এজন্য তারা এক লাখ টাকার ফান্ডও দেয়।’ তৌফিক বলেন, ‘অনলাইনে আমরা সোশ্যাল ইন্টারঅ্যাকশন রোবট দেখতাম। এ ধরনের কিছু একটা করার ইচ্ছা আমাদের ছিল। সবচেয়ে বেশি যে আগ্রহ ছিল আমাদের, মানবসদৃশ যে রোবট আমরা বানাব, সেটি যেন আমাদেরই মাতৃভাষা তথা বাংলায় কথা বলতে পারে। বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটির কাছ থেকে ফান্ড পাওয়ার পর আমরা শুরু করি মানবসদৃশ রোবট বানানোর ‘প্রজেক্ট রিবো’।’

‘রিবো’র বিশেষত্ব : বাংলাদেশের প্রথম সোশ্যাল হিউম্যানোয়েড রোবট ‘রিবো’। নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণেই অন্যান্য রোবট থেকে এটি ব্যতিক্রম। ‘রিবো’ তৈরির কারিগররা জানিয়েছেন, এটি মানুষের সঙ্গে বাংলায় কথা বলতে পারে, বাংলায় লিখতেও সক্ষম। ‘রিবো’র মধ্যে ফেস ডেভেলপ করার চেষ্টা করা হয়েছে, যে কারণে এটি মুখভঙ্গি নানারকম করতে পারে। তাছাড়া এ রোবটটি চোখ, চোখের পাতা ও ঠোঁট নাড়াতে পারে। বিভিন্ন ধরনের মুখভঙ্গি করতে পারা ‘রিবো’ই হচ্ছে বাংলাদেশে এ ধরনের প্রথম রোবট। ‘রিবো’র বিশেষ দিক হচ্ছে, এটি মানুষের সঙ্গে হ্যান্ডশেক করা এবং নাচতেও পারে।

 

চলবে উন্নত করার গবেষণা : ‘রিবো’র কারিগররা থেমে নেই। এই কথা বলতে পারা রোবটটিকে আরও উন্নত করতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। কীভাবে এটিকে পূর্ণাঙ্গ মানবসদৃশ হিসেবে গড়া যায়, উন্নত দেশগুলোর রোবটের মতো কীভাবে রিবোকে নিজের পায়ে হাঁটানো যায়, সেই গবেষণায় ব্যস্ত রোবো সাস্টের সদস্যরা। এ ছাড়া রিবোর মুখ দিয়ে আরও দক্ষতার সঙ্গে বাংলায় কথা বলানো এবং এটির ‘আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স’ উন্নয়নের কাজও চলছে সমানতালে। একই সঙ্গে রোবটটির সফটওয়্যারে সিম্যুলেশনের কাজও চলমান।

 

মিলছে অনুদান : ‘প্রজেক্ট রিবো’র শুরুতে এক লাখ টাকার অনুদান দিয়েছিল বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটি। সম্প্রতি এ প্রজেক্টে বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি ডিভিশন দশ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছে। তবে প্রজেক্ট রিবোকে এগিয়ে নিতে আরও টাকার প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন এটির কারিগররা। এক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অনুদানের প্রত্যাশা করছেন প্রজেক্ট রিবোর সদস্যরা। ‘প্রজেক্ট রিবো’র দলনেতা নওশাদ সজীব বলেন, ‘লেখাপড়ার পাশাপাশি যতটুকু সময় পাওয়া যায়, ততটুকু দিয়ে আমাদের টিমের সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা এখন পর্যন্ত সবার কাছ থেকে যে সহযোগিতা পেয়েছি, এ সহযোগিতা যদি অব্যাহত থাকে, তবে আমরা আরও ভালো কিছু করতে পারব।’

সর্বশেষ খবর