শনিবার, ৬ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
নওগাঁর শিশু বিকাশ

শিক্ষাবঞ্চিতদের মাঝে আলো

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

শিক্ষাবঞ্চিতদের

মাঝে আলো

স্কুলের পক্ষ থেকে শিশুদের খাবার খাওয়ানো হচ্ছে

নওগাঁর স্বেচ্ছা সেবামূলক সংগঠন শিশু বিকাশ। হতদরিদ্র, শ্রমজীবী ও পথশিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে সংগঠনটি। শিক্ষা উপকরণসহ দেওয়া হয় নানা প্রশিক্ষণ। এ ছাড়া বাল্যবিয়ে রোধ, শিশু নির্যাতন বন্ধে চলছে চেষ্টা। কয়েকজন তরুণ-তরুণীর স্বপ্নঘেরা সংগঠনটি এখন অনেকের পাথেয়। এদিকে সব বাধা উপেক্ষা করে সমাজ উন্নয়নে অনবদ্য ভূমিকা রাখায় ২০১৭ সালে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে তরুণদের এই সংগঠনটি। নওগাঁসহ রাজধানী ঢাকা, বগুড়া ও রংপুরে চার শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশুর শিক্ষার দায়িত্ব এখন এই সংগঠনের।

যে বয়সে একটি শিশুকে বই নিয়ে স্কুলের আঙিনায় পা রাখার কথা, সে বয়সে পরিবারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিচ্ছে তারা। কিন্তু হতদরিদ্র এসব সুবিধাবঞ্চিত, শ্রমজীবী শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়ানোর উদ্দেশ্যে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুরাদ হোসেন লেমন এগিয়ে আসে। তার নেতৃত্বে সাত বন্ধু মিলে ২০১০ সালে সংগঠনটির যাত্রা শুরু করে। সে সময় তারা ৪২ জন শিশুকে নিজেদের জমানো টাকায় বই, খাতাসহ বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ কিনে দেয়।

নিজেদের খেলার সময় থেকে এক ঘণ্টা সময় তাদের পড়ানোর কাজে ব্যয় করে। এর কিছুদিন পরই শিক্ষা প্রদানের জন্য একটি উপযুক্ত জায়গার প্রয়োজন পড়ে। তখন সংগঠনের এক সদস্যের কাছ থেকে সামান্য জায়গার ব্যবস্থা হয়। এভাবেই স্কুলটি কিছুদিন এগিয়ে গেলেও কিছুদিন পরে আবার সংকট শুরু হয়। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয় একটি এনজিওর সহায়তায় প্রতি মাসে ঘরভাড়া করে সংগঠনটি চালায় তারা। কেউ কেউ সাহায্যেরও হাত বাড়িয়ে দেয়। এর মাস কয়েক পর এনজিওটির প্রজেক্ট বন্ধ হয়ে গেলে তারা আবার বিপাকে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে নিজেরাই চাঁদা তুলে ঘরভাড়া দেয়। কিন্তু তাও বেশি দিন চলা সম্ভব হয় না। তবে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে সব ভাবনা তাদের বন্ধ হয়ে যায়নি। নতুনভাবে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করে তারা। এরপর আবার ‘আমাদের দাও ভালোবাসা আর উৎসাহ, আমরা একটি সুন্দর দেশ গড়ব’- এই স্লোগানে শুরু হয় ‘শিশু বিকাশ নওগাঁ’ নামে তাদের পথচলা। পরে গড়ে তোলা হয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শিশু বিকাশ। ধীরে ধীরে সংগঠনের পরিধি বেড়েছে। সংগঠনের বর্তমানে সদস্য সংখ্যা ৪০০-এর অধিক। শিক্ষা উপকরণ বিতরণের পাশাপাশি শিশুদের সপ্তাহে পাঁচ দিন, দুই ঘণ্টা করে ইংরেজি, বাংলা, গণিত বিষয়ে পাঠদান করানো হয়। দেওয়া হয় কম্পিউটারসহ বিভিন্ন কর্মমুখী প্রশিক্ষণ। বর্তমানে তারা মূলত একটি শিক্ষামূলক প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। এই প্রকল্পের আওতাধীন তালিকাভুক্ত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের প্রতি মাসে তিনটি খাতা ও ২টি করে কলমের পাশাপাশি প্রয়োজন অনুযায়ী অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ প্রদান করা হয়। সহযোগিতার হাত এগিয়ে এলে হয়তো তাদের কার্যক্রম আরও বাড়ানো সম্ভব।

সর্বশেষ খবর