শনিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

নাদিমের স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক রোবট

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

নাদিমের স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক রোবট

নাদিম জানান, স্বল্পমূল্যের ডিজিটাল হেলথ সেইফটি রোবটটি কেবল নিরাপদ খাবারের বিষয়টিই নিশ্চিত করবে না, শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ, রক্তে সুগারের পরিমাণ নির্ণয় ছাড়াও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মানুষকে এটি নানাভাবে সহযোগিতা করবে।

 

বাংলাদেশের এক যুবক স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিষয়ক আন্তর্জাতিক মানের ডিজিটাল হেলথ সেফটি রোবট উদ্ভাবন করে মাইলফলক উন্মোচন করেছেন। এই ডিজিটাল হেলথ সেফটি রোবট উদ্ভাবকের নাম মো. নাদিম, যার বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ার এক প্রত্যন্ত এলাকায়। তিনি কাপাসিয়ার দুর্গাপুর ইউনিয়নের রাওনাট ডয়পাখুরী গ্রামের কৃষক আবদুর রশিদের ছেলে।

এই কিছুদিন হলো, হংকং থেকে আসা রোবট সুফিয়া হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল। সুফিয়ার বাংলাদেশে আগমনের রেশ কাটতে না কাটতেই কাপাসিয়ার এই যুবকের উদ্ভাবিত ডিজিটাল হেলথ সেফটি রোবট আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

তিন বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত নানীকে হারান নাদিম। নানীর বাড়ি গাজীপুরের কাপাসিয়ার পাবুর গ্রামে। শহীদ হাফিজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তিনি পঞ্চম শ্রেণি পাসের পর পাবুর হাফিজিয়া মাদ্রাসায় হাফেজি পড়তেন।

নাদিম জানান, স্বল্পমূল্যের ডিজিটাল হেলথ সেফটি রোবটটি কেবল নিরাপদ খাবারের বিষয়টিই নিশ্চিত করবে না, শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ, রক্তে সুগারের পরিমাণ নির্ণয় ছাড়াও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মানুষকে এটি নানাভাবে সহযোগিতা করবে।

রোবটটি কথা বলছে এমন একটি ভিডিও সরবরাহ করেছে গাজীপুরের মডেল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নাদিম। নাদিম জানান, এই রোবটের মাধ্যমে ভেজাল খাদ্য নির্ণয় এবং বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা যাবে। রোবটটিকে খাবারের কাছে নিলে সেই খাবারে কী পরিমাণ ভেজাল বা ফরমালিন রয়েছে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে জানাবে। বলবে, ‘এ খাবারে অতিমাত্রায় ফরমালিন রয়েছে, যা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বিপজ্জনক। দয়া করে খাবারটি পরিহার করুন।’ আর যে খাবারটি ভেজালমুক্ত সে ক্ষেত্রে বলবে, ‘এই খাবারটি ভেজালমুক্ত, খাওয়ার উপযোগী। এটি আপনি গ্রহণ করতে পারেন।’ নাদিম বলেন, ‘স্বাস্থ্যগত ছোটখাটো অথচ গুরুত্বপূর্ণ সমস্যারও সমাধান দেবে এই রোবট। এর মাধ্যমে হার্টবিট রেট ও ওয়েব ফর্ম দেখা যাবে। ডিজিটাল সেন্সরের মাধ্যমে শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করা যাবে। রক্তে সুগারের পরিমাণ নির্ণয় করে ফল জানাবে এটি।’ এ ছাড়া রোবটটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে মানুষকে নানাভাবে সহযোগিতা করবে বলে দাবি করেছেন নাদিম।

সহজে বহনযোগ্য এই রোবটে এলসিডি ডিসপ্লে, অ্যাম্পলিফায়ার, বিভিন্ন ধরনের সেন্সর, স্পিকারসহ নানা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

সারা দেশের পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ২৪ ডিসেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে স্কিলস কম্পিটিশনে দ্বিতীয় হয়েছে নাদিমের এ প্রযুক্তি। ওই দিন নাদিমের হাতে পুরস্কারস্বরূপ একটি ল্যাপটপ, ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ডিজিটাল সিকিউরিটি সিস্টেম তৈরি করে নিয়ে এসে জাতীয় পর্যায়ে তৃতীয় এবং ঢাকা বিভাগে সেরা হয়েছেন নাদিম।

পুরস্কার অর্জন করে আরও উৎসাহ নিয়ে কাজ করে নাদিম। চিন্তা শুরু করে মানুষের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার জন্য কিছু বানাতে। কারণ বাজারের ভেজাল খাবার গ্রহণ করে ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় মানুষ।

তার ভাষায়, ‘রোবট যেন মানুষকে সাহায্য করে, বিশেষ করে ভেজালমুক্ত খাবার যেন গ্রহণ করতে পারে মানুষ। ক্যান্সারের মতো ব্যাধিতে যেন আক্রান্ত না হয় কেউ। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই মানুষের স্বাস্থ্যগত দিকটি প্রাধান্য দিই। আর এ কাজে উৎসাহ দিয়েছেন আমার শিক্ষকরা।’

এ প্রতিবেদকের কাছে রোবটের মাধ্যমে খাবারে ফরমালিন শনাক্ত ও খাবার সম্পর্কে নিরাপদ বার্তার ভিডিও পাঠিয়েছে নাদিম। রোবটটির জন্য ব্যয় হাতের নাগালেই থাকবে জানিয়ে নাদিম বলেছেন, ‘এটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছে ১০ হাজার টাকা। তবে বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করলে খরচ আরও কমে যাবে।’ বিজ্ঞানী নাদিম দুই বছর হেফজ পড়ে রানীগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন। কিছুদিন লেখাপড়া করে সেখান থেকে চলে যান চাপাত আকবরিয়া দাখিল মাদ্রাসায়। ২০১২ সালে দাখিল পাস করে কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজে পড়াশোনা করেন তিনি। ওই কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন ২০১৪ সালে।

মানবিক শাখা থেকে দাখিল ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষা কৃতিত্বের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়ে নাদিম ভর্তি হন গাজীপুরের মডেল ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ইলেকট্রিক্যাল বিভাগে।

উপজেলার রাওনাট গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় বেড়ে ওঠা নাদিমের বাবা-মা অতি সাধারণ মানুষ। দুই ভাই-বোনের মধ্যে নাদিম বড়। তার মা নাজমা বেগম গৃহিণী। গাজীপুরের কাপাসিয়ার দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ গাফ্ফার বলেন, ‘উদ্ভাবক নাদিম আমাদের গর্ব। জাতিকে তিনি ভালো কিছু দিতে পারছেন। গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা তাকে সাধ্যমতো সহযোগিতা করব। তার এই উদ্ভাবনে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথ সুগম হবে।’

সর্বশেষ খবর