শনিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ভারতে মিলল আরেক ‘মাঝি-দ্য মাউন্টেইন ম্যান’

শনিবারের সকাল ডেস্ক

ভারতে মিলল আরেক ‘মাঝি-দ্য মাউন্টেইন ম্যান’

বিদ্যাশিক্ষা অর্জনে যেতে হবে স্কুলে। সেটা হোক দূর পাহাড়ি পাথুরে রাস্তা অথবা জলপথ। সবকিছুকে পায়ে মাড়িয়ে পৌঁছতে হবে বিদ্যালয়ে। আর শিশু জীবনেই এই কষ্টকে জয় করতে হয়। না হলে পিছিয়ে থাকতে হবে সারা জীবনের জন্য। পড়ে থাকতে হবে মূর্খ হয়ে। তাইতো ছোট্ট পায়ে পাহাড়ি ও পাথুরে রাস্তা ধরে স্কুলে যাওয়ার অদম্য সাহস দেখিয়েছে তিন শিশু। তাদের এই পথ অতিক্রম করতে সময় লাগত প্রায় তিন ঘণ্টা। আবহাওয়া বিরূপ থাকলে কয়েক দিনের জন্য স্কুলে যাওয়া বন্ধ থাকত। যাওয়া আসার পথে রাস্তায় পড়ে ব্যথা পাওয়া ছিল নিত্যদিনের সাধারণ ঘটনা। কিন্তু বাবা হয়ে সন্তানদের এই কষ্ট মেনে নিতে পারেননি ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের বাসিন্দা বাবা জালান্দার। ফলে দুই বছর আগে সবজি বিক্রেতা বাবা জালান্দার কোদাল ও শাবল দিয়ে সন্তানদের যাতায়াতের জন্য একটি সহজ রাস্তা খোঁড়ার কাজ শুরু করেন। অবশেষে বাবার কঠোর প্রচেষ্টা সফল হয়। তৈরি হয় আঁকাবাঁকা পাহাড়ের পাশ দিয়ে আট কিলোমিটার সমান রাস্তা।

রাস্তা দুর্গম হওয়ায় এখান থেকে শহুরে স্কুলে পড়াশোনা করতে সেখানকার হোস্টেলে থাকা ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই। সপ্তাহের ছুটির দিনে হয়তো বাড়িতে আসার সুযোগ থাকত। তাও এত দুর্গম পথ হওয়ায় সেই কাজটিও সহজ ছিল না। কিন্তু জালান্দার কঠিন কাজটিই হাতে তুলে নিলেন। গত দুই বছর প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা করে পাহাড় কেটে ৮ কিলোমিটার পথ বানিয়েছেন। তার এই দুঃসাহসিক অভিযানের কথা জানতে পারেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। নিজের পত্রিকায় খবর প্রকাশ করেন নতুন এই ‘দশরথ মাঝি’কে নিয়ে। তারপরই প্রশাসনের টনক নড়ে। এখন অবশিষ্ট রাস্তাসহ পুরোটাই নতুন করে নির্মাণের দায়িত্ব নিয়েছে সরকার। জালান্দার বলেন, স্কুলে যাওয়া-আসার অপ্রশস্ত ও পাথুরে রাস্তায় আমার সন্তানদের চলাচল করা কষ্টকর ছিল। আমি প্রায়ই দেখতাম তারা পাথরে হোঁচট খেয়ে পড়ে যাচ্ছে। তখন সিদ্ধান্ত নিই পাহাড়ের পাশ দিয়ে একটা রাস্তা তৈরি করার। সেই রাস্তা দিয়ে যাতে তারা সহজে হাঁটতে পারে।

স্থানীয় কর্মকর্তা ব্রুন্ধা ডি বলেন, পাহাড় কেটে রাস্তা বানানোর জন্য নায়েকের উদ্যোগ ও দৃঢ়তা আমাকে বাকরুদ্ধ করেছে। রাস্তা তৈরির যে সময় ও শ্রম তিনি দিয়েছেন তার পারিশ্রমিক সরকার পরিশোধ করবে।

নায়েক থাকেন লোকালয় থেকে দূরের গুমসাহি গ্রামে। এই গ্রামে শুধু তাদের পরিবারটিই রয়ে গেছে। এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় বাকিরা এই এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। সেখান থেকে স্কুলের জন্য সন্তানদের যেতে হয় ফুলবানিতে। রাস্তাটি স্কুলের সঙ্গে গ্রামের সহজ সংযোগ তৈরি করেছে। এত বড় কাজ করলেও একটি গাছও কাটেননি তিনি। জালান্দার জানান, তার পরিকল্পনা ছিল আরও তিন বছর ধরে রাস্তা তৈরির কাজ করবেন। তাতে অবশিষ্ট ৭ কিলোমিটার রাস্তা তৈরি হবে। কিন্তু এখন আর তা করতে হচ্ছে না। সরকারই বাকি রাস্তা তৈরি করার দায়িত্ব নিয়েছে। তিনি বলেন, জেলার কালেক্টর আমাকে আশ্বস্ত করেছেন গ্রামের রাস্তাটির কাজ সম্পন্ন করা হবে। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল বিহারে। সেখানকার দশরথ মাঝি নামের এক মজুর প্রায় ২২ বছর ধরে পাহাড় কেটে একটি রাস্তা তৈরি করেছিলেন। এর ফলে দুটি জেলার মধ্যে দূরত্ব কমে গিয়েছিল ৪২ কিলোমিটার। একবার পাহাড়ি পথ ধরে পার হতে গিয়ে স্ত্রীর মৃত্যু হয়। তারপর মাঝি রাস্তা নির্মাণ শুরু করেন। বলিউড সিনেমা ‘মাঝি- দ্য মাউন্টেইন ম্যান’ দশরথের কাহিনী নিয়ে নির্মিত। ২০০৭ সালে মাঝির মৃত্যু হয়। তাকে ভারত সরকার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করে।

সর্বশেষ খবর