শিরোনাম
শনিবার, ২০ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
সারা বাংলা

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি নির্মল ছায়ায় ঘুমিয়ে ৭৩৬ জন যোদ্ধা

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি নির্মল ছায়ায় ঘুমিয়ে ৭৩৬ জন যোদ্ধা

ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রি কুমিল্লার ময়নামতিতে অবস্থিত একটি কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি। এখানে গাছের নির্মল ছায়ায় ঘুমিয়ে আছেন শত্রু-মিত্র, তারা আবার একেকজন একেক ধর্মে বিশ্বাসী। এখানে ৭৩৬ জন যোদ্ধার কবর রয়েছে। ১৯৪১-১৯৪৫ সালে বার্মায় সংঘটিত যুদ্ধে প্রাণ হারান ৪৫ হাজার কমনওয়েলথ সৈনিক। তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে মিয়ানমার, আসাম এবং বাংলাদেশের ৯টি রণসমাধিক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছিল। প্রতি বছর প্রচুর দর্শনার্থী নিহত সৈন্যদের প্রতি সম্মান জানাতে সমাধিক্ষেত্রে আসেন। ময়নামতি সমাধিক্ষেত্র মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) নিহত তৎকালীন ভারতীয় ও ব্রিটিশ সৈন্যদের। এটি ১৯৪৩-১৯৪৪ সালে তৈরি হয়েছে। কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের কাছে এই যুদ্ধ সমাধির অবস্থান। সমাধিক্ষেত্রটি কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন প্রতিষ্ঠা করে। তারা সমাধিক্ষেত্রটির দেখভালের বিষয়টি পরিচালনা করে। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে সব ধর্মের ধর্মগুরুদের সমন্বয়ে এখানে একটি বার্ষিক প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সূত্রমতে, তৎকালীন সময়ই কুমিল্লার ময়নামতিতে একটি বড় হাসপাতাল ছিল। এ ছাড়া কুমিল্লায় ছিল যুদ্ধ-সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্র, বিমান ঘাঁটি আর সেনানিবাস। এর মধ্যে অধিকাংশ হলেন সে সময়কার হাসপাতালের মৃত সৈনিকরা। তাছাড়াও যুদ্ধের পর বিভিন্ন স্থান থেকে কিছু লাশ স্থানান্তর করেও এখানে সমাহিত করা হয়। বাহিনী অনুযায়ী এখানে ৩ জন নাবিক, ৫৬৭ জন সৈনিক এবং ১৬৬ জন বৈমানিক রয়েছেন। যুদ্ধে নিহতরা হলেন যুক্তরাজ্যের ৩৫৭ জন, কানাডার ১২ জন, অস্ট্রেলিয়ার ১২ জন, নিউজিল্যান্ডের চারজন, দক্ষিণ আফ্রিকার একজন, অবিভক্ত ভারতের ১৭৮, জিম্বাবুয়ের তিনজন, পূর্ব আফ্রিকার ৫৬, পশ্চিম আফ্রিকার ৮৬ জন, মিয়ানমারের একজন, বেলজিয়ামের একজন, পোল্যান্ডের একজন ও জাপানের ২৪ জন। সমাধিক্ষেত্রটির প্রবেশমুখে একটি তোরণ ঘর আছে। এই ঘরের ভিতরের দেয়ালে সমাধিক্ষেত্রে ইতিহাস ও বিবরণ ইংরেজি ও বাংলায় লিপিবদ্ধ করে একটি ফলক লাগানো হয়েছে। ভিতরে সরাসরি সামনে প্রশস্ত পথ, যার দুই পাশে সারি সারি কবর ফলক। সৈন্যদের ধর্ম অনুযায়ী তাদের কবর ফলকে নাম, মৃত্যু তারিখ, পদবির পাশাপাশি ধর্মীয় প্রতীক রয়েছে। প্রশস্ত পথ ধরে সোজা সামনে রয়েছে সিঁড়ি দেওয়া বেদি, তার ওপরে শোভা পাচ্ছে খ্রিস্টধর্মীয় প্রতীক ক্রুশ। বেদির দুই পাশে রয়েছে আরও দুটি তোরণ ঘর। এসব তোরণ ঘর দিয়ে সমাধিক্ষেত্রের পেছন দিকের অংশে যাওয়া যায়। সেখানেও রয়েছে আরও বহু কবর ফলক। প্রতি দুটি কবর ফলকের মাঝখানে একটি করে ফুলগাছ রয়েছে। এ ছাড়া পুরো সমাধিক্ষেত্রেই রয়েছে অনেক গাছ। যখন কৃষ্ণচূড়া তার ডালপালা লাল করে দাঁড়িয়ে থাকে তখন চোখ ফেরানো যায় না। ঝিরঝিরে হাওয়ায় লাল ফুল পড়তে থাকে সমাধির গায়ে, এ এক অন্যরকম দৃশ্য। মনে হয় গাছগুলোও ফুল ছড়িয়ে যোদ্ধাদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছে। কুমিল্লা নগরী থেকে দুই ভাগ্নিকে ওয়ার সিমেট্রির ইতিহাস জানাতে নিয়ে গেছেন আ ফ ম আহসান উদ্দিন টুটুল নামের এক ব্যক্তি। তারা নগরীর একটি স্কুলের ছাত্রী আসফিকা বিনতে হাবীব রুহাছা ও ইয়াছা বিনতে হাবীব রুহানা। তাদের মামা আহসান উদ্দিন টুটুল জানান, ‘ভাগ্নিদের নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছি। এখানে যুদ্ধের বর্ণনা থাকায় শিক্ষার্থীরা সহজে বিষয়গুলো জানতে পারছে। এ সমাধিক্ষেত্রে এসে যুদ্ধ নয়, শান্তির জন্য সবাইকে কাজ করার মন্ত্র নেওয়া প্রয়োজন। এর পবিত্রতা রক্ষায়ও সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’ সমাধিক্ষেত্রের ব্যবস্থাপক আবু সাঈদ বলেন, ‘এটি সমাধিক্ষেত্র, এখানে অনেকে আড্ডা দিতে আসেন যা ঠিক নয়। এর পবিত্রতা রক্ষায় সবার সচেতন থাকা প্রয়োজন।’

সর্বশেষ খবর