আনন্দ আর কষ্টের দুই রকম অনুভূতিই আছে। আনন্দটা হলো, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভিতরে প্রথম নারী হিসেবে এমন অর্জন। আর কষ্টটা হলো— এত দিন পর এই অর্জন হলো। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই জনগোষ্ঠীর নারীদের অনেক পিছিয়ে থাকার চিত্র এটি।
বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভিতরে প্রথম নারী হিসেবে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করলেন রূপানন্দা রায়। তাঁর পিএইচডির বিষয় ছিল বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিক-সংক্রান্ত নীতিমালার মূল্যায়ন। গবেষণার কাজে ছয় মাস বাংলাদেশে ছিলেন রূপানন্দা। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে জমা দেন পিএইচডি অভিসন্দর্ভ। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর সমাবর্তনে তাঁকে ডিগ্রির সনদ দেওয়া হয়।
রাঙামাটি শহরে জন্ম রূপানন্দা রায়ের। সেখানেই বেড়ে ওঠা। বাবার কাজের সূত্রে একসময় ঢাকায় চলে আসতে হয় রূপানন্দাকে আরও অনেকের মতই। পরবর্তীতে ঢাকাতেই মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেন চাকমা জাতিগোষ্ঠীর এই মেয়ে। এরপর স্কলারশিপ নিয়ে চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানে গিয়েও ভালো রেজাল্ট করেন। যার ফলে পিএইচডি করার সুযোগ পেয়ে যান এবং একসময় অর্জন করলেন পিএইচডি ডিগ্রি। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমন অর্জন যে কারও জন্যই মর্যাদার এবং নতুন কিছু নয়। কিন্তু রূপানন্দা রায়ের এ অর্জনের সঙ্গে তৈরি হয়েছে নতুন ইতিহাস। বাংলাদেশে যে ৫০টির বেশি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী রয়েছে তাদের ভিতরে রূপানন্দা প্রথম নারী যিনি এ ডিগ্রি অর্জন করলেন। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেড থেকে পিএইচডি ডিগ্রি পেয়েছেন তিনি। সেখান থেকে সংবাদ মাধ্যমে তিনি বলেন, আনন্দ আর কষ্টের দুই রকম অনুভূতিই আছে। আনন্দটা হলো, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভিতরে প্রথম নারী হিসেবে এমন অর্জন। আর কষ্টটা হলো— এত দিন পর এই অর্জন হলো। উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই জনগোষ্ঠীর নারীদের অনেক পিছিয়ে থাকার চিত্র এটি।
রাঙামাটি শহরের রাজবাড়ী এলাকায় রূপানন্দা রায়ের পৈতৃক বাড়ি। তার বাবার নাম বিক্রম রায় আর মা বিপাশা রায়। এ দম্পতির দুই সন্তানের মধ্যে রূপানন্দা ছোট। রূপানন্দা রায়ের বাবা বিক্রম রায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তিনি বলেন, আমার মেয়ে তার মেধার স্বীকৃতি পেয়েছে। সবসময় পরিশ্রমী ছিল। তার দামই পেয়েছে। রূপানন্দা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানে ভর্তি হয়েছিলেন ২০০৭ সালে। তার এক বছর পড়েই ২০০৯ সালে অস্ট্রেলিয়া সরকারের স্কলারশিপ পান। পাড়ি জমান অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডে। ইউনিভার্সিটি অব অ্যাডিলেড থেকে ২০১২ সালে প্রথম শ্রেণি পেয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তখনই তিনি পিএইচডি করার কথা ভাবতে থাকেন।
রূপানন্দা তাঁর পিএইচডির বিষয় ‘বাংলাদেশের প্রবাসী শ্রমিক-সংক্রান্ত নীতিমালার মূল্যায়ন’ বেছে নেওয়া প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমে বলেন, এটা নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই পাওয়া। যখনই দেশে গেছি, বিমানবন্দরে দেখেছি ইমিগ্রেশনে প্রবাসী শ্রমিকদের দীর্ঘ সারি। আমরা ইমিগ্রেশন সহজেই পার হচ্ছি, অথচ তাদের অপেক্ষা ফুরায় না। দীর্ঘ ভ্রমণ শেষ করে স্বজনদের কাছে যাওয়ার জন্য মুখগুলো আমাকে কষ্ট দিত। আমি এ সমস্যার স্বরূপটা দেখতে চেয়েছিলাম। রূপানন্দা তাঁর গবেষণায় বাংলাদেশের শ্রমিক অভিবাসন নীতির বাস্তবায়নে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাবগুলো তুলে ধরেছেন। রূপানন্দার স্বামী রিপন তঞ্চ্যঙ্গা পেশায় একজন চিকিৎসক। তাদের মেয়ে পার্নিতার বয়স ১০ মাস।