শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফ্যাশন আইকন প্রিয়তি

শামছুল হক রাসেল

ফ্যাশন আইকন প্রিয়তি

ছবি : নেওয়াজ রাহুল

মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি। তাকে এখন আর নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার কিছু নেই। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই লাস্যময়ী ইতিমধ্যে আলোচিত হয়েছেন একজন ফ্যাশন আইকন, মিস আয়ারল্যান্ড, মিস আর্থ ইন্টারন্যাশনাল এবং পরিশেষে একজন মিডিয়া কর্মী হিসেবেও। জড়িয়েছেন নানা সামাজিক কর্মকাণ্ড ও জনহিতকর ফাউন্ডেশনের সঙ্গেও।

 

সম্প্রতি ঢাকা ঘুরে গেলেন প্রিয়তি। তবে চলতি মাসের শেষে আবারও ঢাকা প্রত্যাবর্তনের কথা রয়েছে এ সুন্দরীর। এবারের ঢাকা সফর ছিল ব্যক্তিগত কাজের জন্য। একটি ফাউন্ডেশনের সঙ্গে জড়িত আছেন প্রিয়তি। মূলত সে ফাউন্ডেশনের পরিধি বিস্তৃত ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কিছু কাজ সারতেই এসেছিলেন।

আজকে প্রিয়তির এ অবস্থান একদিনে হয়নি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে নিজেকে গড়েছেন। জীবনের নানা চড়াই-উতরাই দেখেছেন।  অধ্যাবসায়ের চাদর গায়ে জড়িয়ে এখনো একজন পরিপূর্ণ আইকন হওয়ার চেষ্টা করছেন। বর্তমানে আয়ারল্যান্ডে ফ্লাইট ইন্সট্রাকটরের দায়িত্বে রয়েছেন। এই ক্যারিয়ারে আসার আগে তুমুল ফাইট করতে হয়েছে জীবনের সঙ্গে। জীবনযুদ্ধ পাড়ি দিয়েই এখন মাথা উঁচু করে এ পেশায় নিয়োজিত আছেন। পাশাপাশি দাপটের সঙ্গে বিচরণ করছেন ফ্যাশন দুনিয়ায়।

 

প্রায় ১৭ বছর আগে পড়াশোনার জন্য প্রিয়তি পাড়ি জমান আয়ারল্যান্ডে। ছোটবেলা থেকেই শখ ছিল মডেলিং করার। পড়াশোনা করেছেন মাইক্রোসফট সার্টিফায়েড সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। তারপর অর্গানাইজেশন ডেভেলপমেন্টের ওপর ডিপ্লোমা এবং ম্যানেজমেন্টে ব্যাচেলর ডিগ্রি। পরবর্তীতে গত্বাঁধা জীবনের ছন্দ পাল্টাতে যোগ দেন সুন্দরী প্রতিযোগিতায়। এর পরের গল্প সবারই জানা। মডেলিং, ফ্যাশন শো ও গ্রুমিং নিয়ে নতুনভাবে মেতে ওঠেন প্রিয়তি।

 

জীবনে বৈচিত্র্য পছন্দ করেন প্রিয়তি। বরাবরই বৈচিত্র্যতার ঢেউয়ে গা ভাসান। আনন্দ খুঁজে পান নিত্যনতুন কাজে। আর আলোচনায় থাকেন ব্যতিক্রমী কিছু কর্মকাণ্ডে। গত বছর শরীরে চিত্রকর্ম এঁকে নজর কাড়েন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই মিস আয়ারল্যান্ড। তাও কিনা যেনতেন শিল্পকর্ম নয়। যে শিল্পকর্মটির মূল্য বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২০ লাখ টাকা। শুধু একদিনেই এ টাকা খরচ হয় ব্যতিক্রমী এই চিত্রকর্মটি প্রিয়তির শরীরে আঁকতে। একটি বিশেষ ফটোশুটের জন্যই এই চিত্রকর্মটি ফুটিয়ে তোলা হয় প্রিয়তির শরীরে।

 

বিশ্বের অন্যতম ফিল্ম সেট ডিজাইনার জন মোড়ানের সঙ্গেও কাজ করেছেন প্রিয়তি। ইউরোপ ও আমেরিকায় যে কয়জন সেরা ফিল্ম সেট ডিজাইনার রয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম মোড়ান। বিশ্বের শীর্ষ তারকাদের সঙ্গে ফটোশুটও করে মোড়ান। এ জন্য নেন দীর্ঘ প্রস্তুতি। প্রায় ছয় মাস ধরে চলে তার শুটের প্ল্যানিং ও প্রসেসিং। এ মোড়ানের প্রজেক্টেও দেখা গেছে প্রিয়তিকে। এর মধ্যে বেশকিছু চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব পেয়েছেন। ব্যাটে-বলে মিলছে না বলেই কাজ করা হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

 

এদিকে, নিজের জীবনী বই আকারে প্রকাশ করতে যাচ্ছেন প্রিয়তি। অর্থাৎ এ বইয়ে তার যুদ্ধ, বেড়ে ওঠা, সফলতা-ব্যর্থতা সবই তুলে ধরবেন। এমনকি প্রেম-ভালোবাসার মতো ব্যক্তিগত নানা বিষয়ও তুলে ধরা হবে। যে কারণে একটু সময় নিয়ে কাজটি করছেন। এর বাইরে আরও একটি বই লিখছেন। এ বইটি মূলত তার ভক্তদের জন্য। বিশেষ করে যারা শারীরিক ফিটনেস নিয়ে আগ্রহী। যে কারণে এই বইয়ে প্রিয়তির খাদ্য, রেসিপি, শরীরচর্চার মতো বিষয়গুলো থাকবে।

 

সবাই সৌন্দর্যের পূজারি। এই সৌন্দর্য নিয়ে প্রিয়তি জানান, ‘আসলে দেখতে সুন্দর হলেই তাকে সুন্দর বলা যায় না। এসব প্রতিযোগিতায় এখন আর রূপ লাবণ্য দেখে বিজয়ী নির্বাচন করা হয় না। এ জন্য  প্রয়োজন ব্যক্তিত্ব, শিক্ষা, যোগ্যতা আর সবার জন্য কাজ করার ইচ্ছা। এককথায় বলতে গেলে পুঁথিগত বিদ্যা বা বাহ্যিক সৌন্দর্যের সঙ্গে জ্ঞানটাও জরুরি। তাই জ্ঞানের পরিধিও বাড়াতে হবে।’

 

ক্যারিয়ারের পাশাপাশি প্রিয়তির ফোকাস থাকে কীভাবে অসহায়দের পাশে থেকে সহযোগিতার হাত বাড়নো যায়। বাবার কাছ থেকে তিনি এ শিক্ষাটা পেয়েছেন। প্রিয়তি জানান, ‘ছোটবেলায় বাবাকে দেখেছি অসহায় শিশুদের নিয়ে কাজ করতে। তাই নিজেকে আরও বেশি সামর্থ্যবান করতে চাই। এ কারণে ক্যারিয়ারটা আরও মজবুত করতে চাই। তাহলে ত্বরান্বিত হবে আমার সামাজিক ও দাতব্য কর্মসূচিগুলো। মা এবং নবজাতকদের জন্যও বিশেষ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে বাংলাদেশি এই সুন্দরীর।

 

প্রিয়তির অর্জন

প্রিয়তির ঝুড়িতে একাধিক ঈর্ষণীয় খেতাব জমা পড়েছে। এগুলোর মধ্যে ডাবলিনের ইন্টারন্যাশনাল রানওয়ে কুইনস রিকগনেশন অ্যাওয়ার্ডস, টেক্সাসে মিস ইউনিভার্সাল রয়্যালটি ২০১৩, মিস হট চকোলেট ২০১৪, মিস ফটোজেনিক ২০১৪, সুপার মডেল অব দ্য ইয়ার ২০১৪, মিস আয়ারল্যান্ড আর্থ ২০১৫, মিস কমপ্যাশনেট ২০১৬, মিস বেস্ট গাউন ২০১৬, মিস ফিটনেস ২০১৬ অন্যতম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর