শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা
এক ব্যতিক্রমী পিঠা উৎসবে মিলিত হয়েছিল বগুড়ার দেড় শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত ও সুবিধাভোগী শিশু

ব্যতিক্রমী পিঠা উৎসব

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

ব্যতিক্রমী পিঠা উৎসব

আগামীর পৃথিবী হবে বৈষম্যহীন। আজকের শিশুরাই সেখানে নেতৃত্ব দেবে। আর তাই শিশুদের শৈশব হতে হবে আনন্দপূর্ণ ও শ্রেণিবিদ্বেষহীন। কিন্তু সব শিশুকে এক কাতারে দাঁড় করানোর সুযোগ কোথায়? আর্থিক বৈষম্যের কারণে তাদের ভাগ্যেও জোটে বৈষম্যমূলক আচরণ। কেউ হয়তো অনেক বেশি আদর-আহ্লাদে বড় হচ্ছে আবার কেউ জীবনের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতেও সক্ষম নয়।

শিশুদের একটি বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে সুবিধাবঞ্চিতদের তালিকা। অথচ সমাজের কিছু সচেতন ও সচ্ছল ব্যক্তি এগিয়ে এলেই এ ধরনের সমস্যা লাঘব হয় বহুলাংশে। আর সেই উদ্যোগে বগুড়া জেলা প্রশাসকের বাসভবনে হয়ে গেল এক ব্যতিক্রমধর্মী পিঠা উৎসব। সেখানে মিলিত হয়েছিল বগুড়ার সরকারি শিশু পরিবার, বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী স্কুল এবং শিশু-কিশোরদের সাংস্কৃতিক সংগঠন বাবুইয়ের দেড় শতাধিক শিশু। মেলার আয়োজন করেন বগুড়া জেলা প্রশাসন ও শিশু-কিশোরদের সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাবুই’। উৎসবটি হয়ে গেল ১৯ জানুয়ারি। শিশুরা নিজের নামের সঙ্গে একটি করে পিঠার নাম কিংবা তালে তালে ছড়ার টান আর টোনা-টুনির গল্প। এমন সব খেলায় মেতেছিল তারা। এক কাতারে দাঁড়িয়ে হাতে হাত মিলিয়ে আনন্দভাগের এ মেলায় দেখা মিলল অনেক নতুন বন্ধুর। এ আসরে ছিল না কোনো রং-বেরঙের ব্যানার ফেস্টুন। অথচ পুরো প্রাঙ্গণ রঙিন হয়ে উঠেছিল শিশুদের আলোয়। স্কুলের বাইরে নতুন এসব বন্ধু পেয়ে খুশিতে আত্মহারা শিশুরা। এখানে যেন সব শিশুর রয়েছে সমান অধিকার। একই সঙ্গে বাঙালির অতি প্রাচীন ঐতিহ্য পিঠা-পুলির উৎসবের পরিচয় ঘটল শিশুদের। আয়োজকরা বলছেন, আবহমান বাংলার সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিতির পাশাপাশি শিশুরা বড় হবে বৈষম্যহীন পরিবেশে এমন ভাবনা থেকেই এই পিঠা উৎসবের আয়োজন। এমন উৎসব সমাজের প্রতিটি শিশুকে জাগ্রত করবে মানবিক আলোয়। ধর্ম-বর্ণ ও শ্রেণিভেদে মানুষের সঙ্গে মানুষের এই যে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার প্রয়াস তা আনন্দিত করেছে অভিভাবকদেরও। তারা মনে করেন, এমন আয়োজনে কেবল দেশি সংস্কৃতির সঙ্গেই শিশুরা পরিচিত হবে না, ওরা বেড়ে উঠবে সত্যিকারের মানবিক গুণাবলী সংবলিত মানুষ হিসেবে। শিশুরা এই উৎসবে ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, তেল পিঠা, পাটিশাপটা, শালুক পিঠাসহ প্রায় ২০ প্রকারের পিঠার সঙ্গে পরিচিত হয়েছে। পিঠা খাওয়ার পাশাপাশি ভাগ করে নিয়েছে শীতবস্ত্র। বগুড়া জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, পিঠা উৎসব আমাদের আবহমান সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত। পিঠার সঙ্গে শিশুরা পরিচিত হওয়ার প্রয়োজন। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা এমন অনেক পিঠা রয়েছে যা তারা কখনো চিনে না। আর এ কারণে এদের নিয়ে এই পিঠা উৎসব। আমার মূল উদ্দেশ্য হলো শিশুরা বড় হবে একটি বৈষম্যহীন পরিবেশে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর